বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সর্বত্রই কুল বা বরই ফলের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে, শহর-বন্দরে এমন কোনো এলাকা নেই; যেখানে কুল বা বরই পাওয়া যায় না। মহান রাব্বুল আলামিন আল কোরআনে কুলগাছ বা বরইগাছ এবং বরই ফলের কথা উল্লেখ করেছেন। আরবিতে বরই বা কুল গাছকে ‘সিদরুন’ ও ‘সিদরাতুন’ বলা হয়। লক্ষ করলে দেখা যায়, ‘সিদরুন’ (কুল গাছ) শব্দটি আল কোরআনে দু’বার এসেছে।
যথা- ক. পরে তারা (সাবাবাসীরা) আদেশ অমান্য করল, ফলে আমি তাদের ওপর বাঁধভাঙা বন্যা প্রবাহিত করলাম এবং তাদের দু’টিকে এমন দু’টি উদ্যানে পরিবর্তন করেছিলাম যাতে ছিল বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং কিছু কুলগাছ। (সূরা সাবা : আয়াত ১৬)। খ. আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল। তারা থাকবে এমন এক উদ্যানে, সেখানে আছে কণ্টকহীন কুলবৃক্ষ। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ২৭-২৮)।
আবার এটাও প্রণিধানযোগ্য যে, ‘সিদরাতুন’ (কুলগাছ) শব্দটি আল কোরআনে দু’বার এসেছে। যথা- ক. নিশ্চয়ই সে (রাসূলুল্লাহ সা.) তাকে (জিব্রাইল আ.) আরেকবার দেখেছিলেন প্রান্তবর্তী বরইগাছের নিকট। (সূরা নাজম : আয়াত ১৩-১৪)। খ. যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার, তদ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। (সূরা নাজম : আয়াত ১৬)।
এ পর্যায়ে স্মর্তব্য যে, দুনিয়াজোড়া যতসব বরইগাছ দেখা যায়, এর সব ক’টিই কাঁটাযুক্ত। কিন্তু জান্নাতের বরইগাছগুলোর সবই কণ্টকমুক্ত। এই বিশেষত্বটি অনুধাবন করার জন্যই আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সূরা ওয়াকিয়ার ২৮ নম্বর আয়াতে স্পষ্টতই ইরশাদ করেছেন, ‘(তারা এমন এক উদ্যানে থাকবে) যেখানে আছে কণ্টকহীন বরইগাছ।’
এ পর্যায়ে আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, সূরা নাজমের ১৪ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘প্রান্তবর্তী বরইগাছের নিকট (ইনদা সিদরাতিল মুনতাহা)। আল মুনতাহা হলো শেষ প্রান্তে অবস্থিত, প্রান্তবর্তী স্থলে অবস্থিত। এর দ্বারা সপ্তম আকাশের প্রান্তবর্তী স্থলের দিকে ইশারা করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে একটি সুবৃহৎ বরইগাছ।
কিন্তু নবী করিম সা.-এর মি’রাজের প্রক্কালে প্রান্তবর্তী কুলবৃক্ষটি আল্লাহপাকের নূর দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। এরই বিশ্লেষণ মহান রাব্বুল আলামিন এভাবে করেছেন, ‘যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। (সূরা নাজম : আয়াত ১৬)।
মোটকথা সপ্তম আকাশের ওপর বাইতুল মামুরের (ফিরিশতাদের কাবা) সম্মুখে হযরত ইব্রাহিম আ.-এর সাথে মোলাকাতের পর পর রাসূলুল্লাহ সা. ঊর্ধ্বলোকে রওনা হলেন। তারপর তিনি ওই মোকামে পৌঁছলেন, যেখানে আল্লাহপাকের কুদরতি কলমের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ (প্রান্তসীমার বরইগাছ) পর্যন্ত পৌঁছলেন।
এ বৃক্ষের ওপর আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিদর্শনাবলি ও নির্দেশের শান অবিরত প্রতিবিম্বিত হচ্ছিল এবং শানে রাব্বানী তাকে আচ্ছাদিত করার পর তার আকৃতি ও রঙিন ছবি সততই পরিবর্তিত হচ্ছিল। আর শানে রাব্বানী তাকে আচ্ছাদিত করার পর তার আকৃতি-অবয়ব পরিবর্তিত হয়ে সৌন্দর্যের এমন এক বিমূর্ত বিকাশ ঘটেছিল, যা কোনো ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
এরই মাঝে রঙবেরঙের এমন সব নূরের তাজাল্লী রাসূলুল্লাহ সা.-এর নজরে পড়ল, যার যথার্থ অবস্থা কোনোভাবে প্রকাশ করা যায় না। এটা সেই মোকাম, যেখান থেকে ওপরের বস্তুগুলো জমিনে অবতরণ করে এবং জমিনের বস্তুগুলো ওপরে উত্থিত হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করে। এখানে উপস্থিত হওয়ার পর হযরত জিব্রাইল আ. নিজের আসল আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সামনে উপস্থিত হলেন।
এখানেই চিরন্তন হাইয়্যুল কাইয়্যুম অবিনশ্বর সত্তার জ্বলন্ত সাক্ষী জিব্রাইল আ. স্বীয় চেহারার পর্দা হারিয়ে ছিলেন এবং এহেন নিথর নির্জন স্থানে গোপন ভেদ প্রকাশের পয়গামসমূহের বার্তা রাসূলুল্লাহর সামনে উপস্থাপন করলেন। সেগুলোর সাবলীলতা ও পবিত্রতাকে ভাষার বাঁধনে কোনোভাবেই উপস্থাপন করা যায় না।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. প্রান্তসীমার বরইগাছটির বিশালত্ব দেখে অবাক হলেন। কোনো তেজি ঘোড়ায় আরোহী ব্যক্তি বৃক্ষটির প্রলম্বিত ডালার নিচ দিয়ে অশ্ব চালনা করে হাজার বছর পথ চললেও শাখাটির শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারবে না। গাছের বরইগুলোর আকার-আকৃতি ছিল আরবের হাজার প্রদেশের বড় বড় মটকা বা আধারের মতো।
তিনি চিমটি কেটে তার কিঞ্চিৎ অংশ মুখে দিয়ে অনুভব করলেন, তা মধুর চেয়েও মিষ্টি। তারপর হযরত জিব্রাইল আ. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটাই আমার শেষ সীমা। আমি আর ঊর্ধ্বলোকে অগ্রসর হতে পারব না। অবশিষ্ট জগতে আপনি একাই গমন করবেন। হাজা ফিরাকুন বাইনি ওয়া বাইনিকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন