সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক-৪

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আত্মীয়-স্বজনকে দান ও সহায়তা করার ব্যাপারেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। হজরত সালমান ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসের শেষাংশে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসকিন-অসহায়কে দান করলে কেবল দানেরই সওয়াব হবে। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব।
একে তো দানের সওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়কে সাহায্যের সওয়াব।-জামে তিরমিযী। এ ছাড়াও হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এ রকম একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদিনার সবচেয়ে বেশি খেজুর বাগানের মালিক হজরত আবু তালহার ‘বাইরাহা’ নামক সেরা বাগানটি তিনি আল্লাহর নামে দান করার ঘোষণা দিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনি যেভাবে ভালো মনে করেন, এ বাগানটি খরচ করুন। আমি এর বিনিময়ে কল্যাণ চাই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেন, বাহ! অত্যন্ত উপকারী ও কল্যাণজনক সম্পদ। তোমার বক্তব্য আমি শুনেছি তবে আমি মনে করি, তুমি তোমার এ দান তোমার আত্মীয়দের মাঝে দান করে দাও। অতঃপর হজরত আবু তালহা তা-ই করলেন। এ হাদিসটি সহি বুখারি ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে।
এখানে দেখা যায়, আল্লাহর নামে নিজের প্রিয় ও সেরা কিছু দান করলে সেটাও গরিব আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করে দেয়াই অধিক শ্রেয়। হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা তা-ই প্রমাণ করে।
উম্মুল মুমিনীন হজরত মায়মুনা বিনতে হারিস রা. বর্ণনা করেন, একবার তিনি তাঁর মালিকানাধীন এক দাসীকে মুক্ত করে দিলেন এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরে তা জানালেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই! তবে তুমি তাকে মুক্ত করে দেয়ার চেয়ে তোমার মামাজানদের হাদিয়াস্বরূপ দিয়ে দিলেই বেশি ভালো হতো। -সহি বুখারি ও মুসলিম।
এ ঘটনাটি জাহেলি দাসপ্রথা শরীয়ত কর্তৃক বিলুপ্ত হওয়ার পূর্বের ছিল। তবে এখানেও স্পষ্ট যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক কত উত্তম কাজ। এ ছাড়াও আরো কিছু হাদিস জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের সহজ উপায়ের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধনকেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ইসলাম ও কুফরের ব্যবধান ও পার্থক্য সত্তে¡ও তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তা সজীব রেখে এই অসাধারণ অনিবার্য সুন্নতটিকে প্রমাণ করে গিয়েছেন। অথচ আমরা অনেকাংশই এ মহান সুন্নত থেকে উদাসীন। এত যে সুন্নতের বয়ান করি এবং শুনি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই অবিরত সুন্নতটি মেঘের আড়ালেই যেন ঢাকা পড়ে থাকে।
বর্তমান শহুরে জীবন ও সংস্কৃতিতে নিজ আত্মীয়-পরিজনদের খোঁজখবর রাখা এবং যথাসাধ্য তাদের সঙ্গে জুড়ে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার সময় ও মানসিকতা আমরা ক’জনই বা পাই। আমরা যদি আত্মীয়তার এ বন্ধনকে নিছক সামাজিক কর্তব্য না ভেবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজীবন লালিত মহান সুন্নত হিসাবে হৃদয়ে লালন করতাম, তবে এর ওপর আমলও করতে পারতাম। রাব্বুল আলামীন এখন থেকে আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
ইব্রাহিম ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৫ এএম says : 0
নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নেক আমল।
Total Reply(0)
উবায়েদ ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৬ এএম says : 0
নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার অর্থ হলো- তাদের বাড়িতে যাতায়াত করা, দাওয়াত করে তাদের বেড়াতে নিয়ে আসা, তাদের খাওয়ানো, তাদের দেওয়া খাবার খাওয়া, বিভিন্ন উৎসব-পর্ব উপলক্ষ্যে সাধ্যমতো তাদের উপহার দেওয়া, তারা উপহার দিলে তা সানন্দে গ্রহণ করে নিজের খুশি প্রকাশ করা, বিপদের সময় সাধ্যমতো তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা, সুখে-দুঃখে অংশীদার হওয়া ইত্যাদি।
Total Reply(0)
এম ডি রানা ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৬ এএম says : 0
ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মানবিক শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
হেলাল উদ্দীন ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৮ এএম says : 0
আত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় বন্ধুত্ব থেকেও আত্মীয়ের মতো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকেও গভীর হয়ে থাকে। শরয়ি বিধান অনুযায়ী, আত্মীয়স্বজনের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা হক বা অধিকার রয়েছে। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব। শরয়ি কারণ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম।
Total Reply(0)
নাহিদা সুলতানা ২ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:০৮ এএম says : 0
আসুন, আমরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের আশায় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখি এবং তাদের অধিকারের প্রতি যত্মবান হই। পারস্পরিক বন্ধনকে আরও অটুট করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন