শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সিরিজ

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিশ্বকাপের আগ দিয়ে সব সিরিজই বাড়তি গুরুত্ব পায়। সদ্য শেষ হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে দল নিয়ে পাকিস্তানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রত্যাশার পারদ স্পর্শ করতে পারেনি।

পরশু রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ২০ রানে হারায় অস্ট্রেলিয়া। টানা আট জয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে রাখল চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অথচ বছরটা কী বাজেভাবেই না শুরু হয়েছিল তাদের। ঘরের মাঠে প্রথমবারের মত ভারতের কাছে সিরিজ হার। দলটা অস্ট্রেলিয়া বলেই হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি। ফিরতি ভারত সফরে প্রথম দুই ওয়ানডে হারের পর শেষ তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ সঙ্গে নিয়েই মরুর বুকে পা রাখে অ্যারোন ফিঞ্চের দল। অবাক করার মত তথ্য হলো, যে আরব আমিরাতকে বলা হয় পাকিস্তানের দ্বিতীয় দূর্গ সেখানে এখন পর্যন্ত তারা অজিদের এক ম্যাচেও হারাতে পারেনি।

সিরিজটা পাকিস্তান নিয়েছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্লাস হিসাবে। বিশ্বকাপে নিজেদের বেঞ্চের শক্তি সম্পর্কে জানা ছিল আসল উদ্দেশ্য। এজন্য বিশ্রাম দেওয়া হয় নিয়মিত অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ, ওপেনার বাবর আজম, ফখর জামান, পেসার হাসান আলীদের মত খেলোয়াড়দের। দলে অনিয়মিত ছিলেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকও। এমতাবস্থায় প্রথম দুই ওয়ানডে হারের পর দেশটির সাবেক অনেক খেলোয়াড়ই এই নীতির সমালোচনা করেন। স্বয়ং পাক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানও বোর্ডকে এ ব্যাপারে তলব করেন।

অস্ট্রেলিয়ার জন্য সিরিজটি ছিল বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের আর মাস দুয়েক বাকি। এর মধ্যে আর কোন সিরিজ নেই তাদের। তবে পাকিস্তানের সামনে রয়েছে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার দুর্দান্ত সুযোগ। বিশ্বকাপের ঠিক আগ দিয়ে বিশ্বকাপ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। ৩০ মে থেকে শুরু হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহাজজ্ঞ। ১৯ মে সিরিজের সর্বশেষ ওয়ানডে খেলবে পাকিস্তান। এরপর অন্যান্য দলের মত দুটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ তো রয়েছেই। হোয়াইটওয়াশ হওয়া এই সিরিজ থেকে নেওয়া শিক্ষা তাই কাজে লাগানোর সুযোগ থাকছে পাকদের সামনে।

এখন চলুন এই সিরিজ থেকে দুই দলের অর্জনগুলো সম্পর্কে একটু জানা যাক
ফিঞ্চের ফেরা
বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে অধিনায়কের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ছিল শংশয়। কারণটা যে বাজে ফর্ম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫১ রান সেই শংশয়কে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

৩২ বছর বয়সী ডানহাতি ওপেনার সিরিজে দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি ইনিংস খেলেছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেন ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৫৩। আরব আমিরাতের স্লো উইকেটে নিজেকে এভাবে প্রমাণ করার পর দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড যাত্রার কথা ভাবতেই পারেন ফিঞ্চ। যেখানে বল ধেয়ে আসে পেস-বাউন্স সঙ্গে নিয়ে। এমন পিচে নিজের স্বভাবসূলভ স্ট্রোক খেলার সামর্থ তো আর সব ব্যাটসম্যানের থাকে না। সব মিলে বিশ্বকাপে ফিঞ্চকেই নেতৃত্বের যোগ্য ব্যক্তি বলেই ভাবা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার দূর্ভাবনার সমাপ্তি
ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম ছিল টপঅর্ডার ব্যাটিং। বিশ্বকাপে এই সমস্যা সমাধানের দারুণ সমাধান পেয়ে গেছে দলটি। সিরিজে ফিঞ্চের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মেতে রান করেছেন দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা উসমান খাজা। গত জানুয়ারিতে দলে ফিরে ১৩ ম্যাচে করেছেন প্রায় ৮০০ রান। এই সিরিজেই করেছেন দুটি শতক। কিন্তু এরপরও সমস্যা যে একটা রয়েই গেছে- ডেভিড ওয়ার্নার!
সাবেক সহ-অধিনায়কের নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এখন তিনি দলে ফেরার অপেক্ষায়। ভারতে চলমান আইপিএলে তিন ম্যাচের দুটিতে ফিফটি ও অন্য ম্যাচে অপরাজিত শতক হাঁকিয়ে দলে ফেরার যে দাবি তিনি জানিয়ে রেখেছেন তা উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও ঘোষণা দিয়েছিল ওয়ার্নার-স্মিথের দলে ফেরার রাস্তা একটাই, আইপিএল। ওয়ার্নারকে জায়গা দিতে নিচে নামতে হবে ফিঞ্চ অথবা খাজাকে।

পাকিস্তানের নড়বড়ে বেঞ্চ
দুটো কারণে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছিল পাকিস্তান। প্রথমত বিশ্বকাপের আগ দিয়ে দলের নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড়দের তরতাজা রাখা; দুই, অপরীক্ষিত প্রতিভাদের বাজিয়ে দেখা। দ্বিতীয় কারণ তাদের উদ্বেগ বাড়েতেই পারে। বিশেষ করে দলের বোলিং লাইন আপ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বোলিংই সব সময় পাকিস্তানের অন্যতম শক্তির জায়গা। সেখানে এক উসমান শিনওয়ারি ছাড়া বাকিদের বোলিং গড় ছিল চল্লিশের উপরে। শিনওয়ারি আর জুনায়েদ খানকে বাদ দিলে বাকিদের গড় ৭০এর বেশি। টেস্ট বোলিং স্পেশালিস্টরা সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ইয়াসির শাহকে কার্যকরী কোন বোলারই মনে হয়নি সিরিজে। পেসার মোহাম্মদ আব্বাস ৪৪ রানে ১ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও শেষ ২৭ ওভার ছিলেন উইকেটশূন্য।

সম্ভবনাময় রিজওয়ান ও সোহেল
মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে, তারও দুই বছর আগে হয় হারিস সোহেলের। কিন্তু দুজনে মিলে এসময় খেলেছেন মাত্র ৬৩টি ওয়ানডে। দুজনই এই সিরিজে কঠিন পিচে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন। সোহেলের ব্যাটেই সিরিজে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পায় পাকিস্তান। তার অপরাজিত ১০১ রানের উপর দাঁড়িয়ে ২৮০ রান সংগ্রহ করে দল। সিরিজের শেষটাও ছিল শুরুর মত। এবার করেন ক্যারিয়ার সেরা ১৩০। কিন্তু ৩২৭ রান তাড়ায় তার এই প্রচেষ্টাও সফলতার মুখ দেখেনি।

রিজওয়ান ৩৫/২ থেকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলকে এনে দেন ২৮৪ রানের সংগ্রহ। সেখানে তার অবদান ছিল ১১৫। চতুর্থ ম্যাচে ২৭৮ রান তাড়ায় ১০৪ রানের পথে আবিদ আলির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ১৪৪ রানের জুটি। দুজনেই এদিন সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেননি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন