রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। আকষ্মিক কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া গেছে। তবে হাওরের কৃষকদের জন্য বিপর্যয়কর ফসলহানির কোনো ঘটনা সংঘটিত না হওয়া অনেক বেশী স্বস্তিদায়ক বিষয়। দু বছর আগে হাওরে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির পর হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাধ মেরামতের কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখনো অন্তত ৩০ ভাগ কাজ অনিস্পন্ন রয়ে গেছে বলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। এমতাবস্থায় পাহাড়ি ঢল বা অকালবন্যার সম্মুখীন হলে অর্ধপাকা ইরি-বোরো ধানের সলিল সমাধি ঘটতে বাধ্য। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকরা ক্ষেতের ধান কাটতে শুরু করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাহাড়ি ঢল, অকাল বন্যা বা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটলে হাওরে এবারো বাম্পার ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি জরুরী ভিত্তিতে ফসল কেটে গোলায় তুলতে হলে শ্রমিক সংকটের কারণে হাওরের চাষিদের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা এপ্রিলের শেষদিকে হাওরে আগাম বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করে ধান ৭৫ ভাগ পাকলেই কেটে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গতে কয়েকদিনের বর্ষণ এবং ঝড়ো আবহাওয়া সেই পূর্বাভাসেরই জানান দিচ্ছে। হাওরে যে কোনো ধরণের বিপর্যয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে।
গত চারদশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনের বেশী। সেই সাথে অনেক সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন। খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ পিড়ীত দেশকে খাদ্যে স্বয়ম্বর করে তোলার মূল কারিগর দেশের নিরলস কৃষকরা। লাখ লাখ কৃষকের হাতে ধানের উফসি জাতের নতুন নতুন বীজ তুলে দিয়ে খাদ্য উৎপাদনের এই বিপ্লবকে সম্ভব করতে বিশাল অবদান রেখেছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিখাতের উদ্ভাবকরা। দেশের কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত গবেষকদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কারিগর এই কৃষকরা বরাবর বাম্পার ফলনের পরও নানা কারণে ভাগ্য বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলোর বিশাল অংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সময়মত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা, গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে হাওরের কৃষকদের উপর বার বার বিপর্যয় নেমে এসেছে। সর্বোপরি উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যেতে বসেছে। আমন ও বোরোর ভরা মওসুমে ভারত থেকে নিম্ন মানের চাল আমদানীর সুযোগ অবারিত রেখে কৃষক পর্যায়ে ধান-চালের মূল্যে ধস নামিয়ে বার বার লোকসানের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে কৃষকদের। ফসল রক্ষা এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
নগরায়ন, শিল্পায়ন, আবাসনসহ নানা কারণে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। সেই সাথে উজানে ভারতের পানি আগ্রাসন ও পানি প্রত্যাহারের কারণে অনেক নদনদী শুকিয়ে জমির উবর্বরতা হ্রাস পাওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পুরণ করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এতকিছুর পরও খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি সেক্টরে কৃষকদের এই বৈপ্লবিক অর্জনকে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত বলেই স্বীকার করতে হবে। তবে সামগ্রিক অর্থে ও নানা কারণে এখনো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রোহিঙ্গা শিবিরে ১০লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য যোগানোর কারণে সম্প্রতি জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলেছে। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের চাইতে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং কোটি কোটি কৃষক পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত সুরক্ষা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ কারণেই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতি ও গাফিলতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে কৃষকের ন্যায্য মূল্য এবং দরিদ্র মানুষের জন্য সুলভে খাদ্যের সংস্থান করতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের উপর আমদানীকারক, মজুদদার, মিলার ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগিদের অনৈতিক ও অস্বচ্ছ মুনাফাবাজি বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন