সন্তান ধারণ ও প্রসবের পর মায়ের শরীর বৃত্তীয় ব্যাপক পরিবর্তন হয়, ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে ইমিউন কার্যকারীতায় অস্বাভাবিকতা দেখা দিয়ে থাকে। সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরে থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহও এমনই একটি সমস্যা। প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহ খুব বেশি হয় তা নয়, কিন্তু যখন হয় তখন শনাক্ত করা অনেক ক্ষেত্রেই জটিল হতে পারে। এ সমস্যাটি হওয়ার জন্য মায়ের আগে থেকেই থায়রয়েড সমস্যা থাকতে হবে তা নয়। অর্থাৎ গর্ভকালের আগে বা গর্ভকালীন সময়ে যাদের থায়রয়েড ফাংশন ভাল ছিল, তারাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এ সমস্যায় আক্রান্ত অধিকাংশ মহিলার থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারীতা ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে; তবে কারো কারো এ সমস্যা আজীন থেকে যায়।
লক্ষণ ঃ লক্ষণগুলো দু’পর্যায়ের হতে পারে; প্রথম পর্যায়ে থায়রয়েড হরমোন অতিরিক্ত হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, অনেকটা সে রকম লক্ষণই দেখা দেয়। যেমন- বুক ধড়ফড় করা , হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হার্ট ফেইলিউর, এনজাইনা বা বুক ব্যথা, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, খাওয়ার অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অবষন্নতা বা নার্ভাসনেস, উত্তেজনা, আবেগ প্রবণতা, সাইকোসিস বা মানসিক বিষাদগ্রস্থতা; হাত পা কাঁপা, নিদ্রাহীনতা, ঘাম বেড়ে যাওয়া, চুলকানি, হাতের তালু লাল হওয়া, গরম সহ্য করতে না পারা। এ লক্ষণগুলো প্রসবের পরের এক থেকে চার মাসের মধ্যেই সাধারণত দেখা দেয়। পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণগুলো হলো শারীরিক দূর্বলতা, শীত সহ্য করতে না পারা, ত্বক শুকনো লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অবষন্নতা ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। এ লক্ষণগুলো পরবর্তী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে ১২ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
কারণ ঃ প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের সঠিক কারণটি এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে এদের প্রাই সবারই রক্তে এন্টিথায়রয়েড, এন্টিবডি থাকে। যা এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে? : যাদের অন্য কোন অটোইমিউন রোগ আছে, তাদের প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হবার ঝুঁকি বেশি। এ তালিকায় টাইপ ১ ডায়াবেটিস, প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের আগের ইতিহাস পরিবারের আর কারো থায়রয়েড গ্রন্থির রোগের ইতিহাস ইত্যাদি। প্রসব পরবর্তী বিষন্নতার সাথে এর একটি সংযোগ থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হয়।
পরীক্ষ-নিরীক্ষা ঃ অনেক সময়ই রোগ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়ে যায়। কেননা এ লক্ষণ নিয়ে রোগীটি হয়তো হরমোন বিশেষজ্ঞের সরণাপন্ন হতে বিলম্ব করে ফেলেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থায়রয়েড ও হরমোনের পরীক্ষা (ঞঝঐ, ঋঞ৪) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে এন্টিথায়রয়েড, এন্টিবডি, থায়রয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসনোগ্রাম দরকার হতে পারে। খুবই কমক্ষেত্রে থায়রয়েড গ্রন্থির রেডিও আয়োডিন আপটেক টেস্ট দরকার হতে পারে।
জটিলতা ঃ প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের অধিকাংশ রোগীই ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা না এসে বরং হাইপোথায়রয়েডিজম হয়, যা আজীবন থেকে যাই।
প্রতিরোধ ঃ প্রসব পরবর্তী থায়রয়েড গ্রন্থির প্রদাহের সবসময় প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে তা নয়। তবে যাদের ঝুঁকি বেশি তাদেরকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রæত হরমোন বিশেষজ্ঞের সরণাপন্ন হতে হবে।
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৯১৯০০০০২
কমফোর্ট ডক্টরস চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীন রোড (২য় তলা), ধানমন্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ।মোবাইল ঃ ০১৭৩১-৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২ ৪৬৮৩৭৭
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল
প্লট - ৪০, সেক্টর - ৭, রবীন্দ্র সরণী, উত্তরা - ১২৩০
ফোনঃ ০১৭৯১৫৭১২৮৩, ০১৯১৭৭০৪৯৫০-১।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন