মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিউজিল্যান্ড থেকে নতুন দিনের সূচনা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

খুনি চেয়েছিল লাইভে দেখিয়ে সারা দুনিয়ায় দাঙ্গা বাধাতে। মুসলমানদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে। সংখ্যালঘু এলাকায় মর্মাহত মুসলমানদের বিক্ষোভে জড়িয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে হত্যা করতে। কমপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে অসহায় খ্রিষ্টানদের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার মতো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। কিন্তু খুনি বা তার নেপথ্যের সহায়ক শক্তি তাদের সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। খুনি গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলা ও বিচারের মুখোমুখি হবে। ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়েছে। তার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রভাবশালী নেতা পচা ডিম খেয়েছেন। ডিম কোনো মুসলমান মারেনি। মেরেছে বিবেকবান একজন মানুষ। পরিচয়ে খ্রিষ্টান এক তরুণ। সে এখন হিরো।
আরো ডিম কেনার জন্য পশ্চিমের খ্রিষ্টানরাই তাকে এক দিনে ৪৫ হাজার ডলার চাঁদা তুলে দিয়েছে। তরুণ এ টাকা শহীদ মুসলমানদের পরিবারকে দিচ্ছে। মিডিয়ায় এসেছে, পশ্চিমের তরুণীরা প্লে-কার্ড নিয়ে মিছিল করছে, ‘আমরা এই ডিম তরুণকে বিয়ে করতে চাই।’ এসব বিবেকের সাড়া। মানবতার ভাষা। গোটা পৃথিবী এখনো কেবল অন্ধদের হয়ে যায়নি। উগ্রদের হয়ে যায়নি। খুনিদের তো নয়ই।
দুই কোটি মুসলমানের রক্ত বৃথা যাবে না। মিথ্যা প্রচারণার একতরফা লড়াই আর বেশি দিন চলবে না। ৫০ জন নামাজির শাহাদত খুব দ্রুতই অন্তত ৫০ কোটি হৃদয় জয় করবে। ইনশাআল্লাহ উপমহাদেশের সংগ্রামী আলেম মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহরের ভাষায়, ‘ক্বাতলে হুসায়ন আসল ম্যা মরগে ইয়াযীদ হ্যায়।/ ইসলাম যিন্দা হো তা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ।’
নিউজিল্যান্ড এক নতুন কারবালা। পশ্চিমা বিশ্ব আজ ইসলামের নতুন বিজয়ভ‚মি। নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ এ ঘটনাকে তাদের জাতীয় শোক হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এক ঐতিহাসিক মানবিক ভ‚মিকা নিয়েছেন। তিনি আরবী ভাষা ও ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করে বক্তৃতা করেছেন। এমন যুক্তিগ্রাহ্য ও দরদি কথাবার্তা বলেছেন, যা শুনে বিশ্ববাসীর মনে ইনসাফ, অসাম্প্রদায়িকতা ও দায়িত্বশীলতার অর্থ ও মর্ম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পার্লামেন্টে তিনি নামাজের জায়গা করে দিয়েছেন।
পার্লামেন্ট অধিবেশনে এবারই প্রথম পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা নিযামুল হক থানভী সাহেবকে দিয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করিয়েছেন। যিনি মাওলানা ইহতেশামুল হক থানভীর পুত্র। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর ভাগ্নের দিকের নাতি। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে মসজিদে স্থানীয় খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ মানববন্ধন করে মসজিদ ঘেরাও দিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘মুসলিম ভাইয়েরা, আপনারা নিশ্চিন্তে নামাজ পড়–ন। আমরা পাহারায় আছি।’ এ দৃশ্য আরো পশ্চিমা শহরে দেখা গেছে।
এ ঘটনার পরপরই নিউজিল্যান্ডে একই বৈঠকে ৩৬০ জন নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের ধারা চলছে। মেলবোর্নে যুবা তরুণ-তরুণীরা মিছিল বের করে বলছে, ‘নো ফিয়ার, উই ওয়েলকাম মুসলিম্স।’ লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে হাজারো খ্রিষ্টান নারী-পুরুষ একত্র হয়ে আজানের আওয়াজ চালু করে মুসলমানদের শোকের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।
সারা বিশ্বের কোথাও কোনো দাঙ্গা হয়নি। মুসলমানরা কোনো অমুসলিমের গায়ে হাত দেয়নি। ইসলামে এমন নিয়ম নেই। দুনিয়ার সব মুসলমান মেরে ফেললেও নির্দোষ কোনো খ্রিষ্টানকে কেউ ফুলের টোকাটিও দেবে না। আর ভয় পাওয়ার প্রশ্ন, সে তো বহুদূর। খুনি ভেবেছিল, নিউজিল্যান্ডে বোধহয় আর নামাজ হবে না। পাশ্চাত্যে বোধহয় আজান ও জামাত বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু কী আশ্চর্য, নির্বোধেরা বোঝে না যে, রণাঙ্গনেও মুসলমানরা নামাজ বাদ দেয় না। মৃত্যুর মিছিলেও জামাত চালু থাকে। বোমা বর্ষণ আর ধ্বংসলীলায়ও আজান ধ্বনিত হয়। যার জন্য সেজদা করা, তার জন্যই জীবন দেয়া। যার জন্য বেঁচে থাকা, তার জন্যই আবার সেজদা করা। এই তো জীবনের সার্থকতা।
এরপর থেকে নিউজিল্যান্ডের ওই দুই মসজিদসহ বাকি সব মসজিদ এবং পশ্চিমের বহু মসজিদে নামাজ দেখার জন্য নানা ধর্মের নারী-পুরুষ মসজিদে জামাত চলাকালীন ভিড় করছে। অনেক মসজিদে দেখা গেছে, নামাজের কাতারের পেছনে আবালবৃদ্ধবনিতা বসে আছে। কেউ আবেগে কাঁদছে। অনেকে আবার নামাজের মতো উঠাবসা, রুকু, সেজদা করছে। নামাজ শেষে মুসলমানদের কাছে এসে কালেমা পাঠ করছে। মাথায় স্কার্ফ পরে কালেমা শাহাদত উচ্চারণ করছে।
ঘটনার পরের জুমায় প্রধানমন্ত্রী নিজে তার রাষ্ট্রীয় লোকজনসহ দাঁড়িয়ে থেকে উন্মুক্ত ময়দানে জুমার নামাজ প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই বিখ্যাত হাদিস উদ্ধৃত করে বক্তব্য রেখেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ঈমানদাররা একটি দেহের মতো। যার একাংশে আঘাত এলে সারা দেহ ব্যথা অনুভব করে। সারা দেহে জ্বর আসে। সেদিনটিতে তিনি নারী কর্মকর্তাদের স্কার্ফ পরার নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রীয় টিভি জুমার আজান ও নামাজ লাইভ প্রচার করে। শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ আয়াতাংশ খচিত স্মৃতিসৌধ। সত্যিই নিউজিল্যান্ডের নেত্রী ও তার দেশের নাগরিকরা মানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করছেন। অন্তর থেকে দোয়া করছি, তাদের যেন আল্লাহ হেদায়াতের পরম সৌভাগ্যের শেষ দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এ যেন ইসলামকে ভালোবাসার এক নতুন জোয়ার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Salim Patwary ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 1
অসাধারন
Total Reply(0)
Šã Mï Űĺ ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
জেসিন্ডা আর্ডেন আসলে এক মহামানবী জেসিন্ডা আর্ডেন কোনো সাধারণ নারী নন; তিনি আসলেও এক মহামানবী। নোবেল শান্তি পুরষ্কারের চেয়ে বড় কিছু থাকলে সেটিই তাঁর প্রাপ্য । মুসলমানদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ মুসলমানদের আবেগাপ্লুত করেছে । আমার চোখে পানি আসছে। এমন ভালো মানুষ পৃথিবীতে আছেন? নিউজিল্যান্ড আসলেও যে একটি শান্তির দেশ- তারই প্রমান দিলেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা। জেসিন্ডার বয়স মাত্র ৩৮ । তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী । ৯ মাসের সন্তানকে ঘরে স্বামীর কাছে রেখে তিনি ছুটে চলেছেন মুসলিম কমিউনিটির ঘরে ঘরে। মাথায় ওড়না ও শোকের কালো জামা পরে মুসলমানদেরকে এই কঠিন সময়ে কাছে টেনে নিচ্ছেন ।
Total Reply(0)
অবরুদ্ধ রানা চৌধুরী ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 5
কিছুদিন পর জঙিগদের অভয়ারণ্য হবে দেশটি, বেশী মানবতা দেখাতে নেই পরে বুঝবে জিহাদীরা যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে।
Total Reply(1)
ahmed misbaha ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৭:৪১ এএম says : 4
you are killer no1. may allaha GUIDE YOU
Tauhid Moktadir ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 3
হাস্যকর। ইরাক ইয়েমেন পাকিস্তানে নিয়মিত মসজিদে হামলা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে সেখানে পুনর্জাগরণ নয়। ইসলামকেও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিচ্ছে। বিগত ৫ বছর যাবত মুসলিমরা যেখানে পাচ্ছে সেখানেই নিজেদের উপর হামলা করছে। আর বলছে ইহুদি খ্রিস্টানের ষড়যন্ত্র।
Total Reply(0)
Kamrul Hasan ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
এভাবেই পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়বে ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Hossain Anik ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ একদিন মুসলিমদের নেতৃত্বেই আবার বিশ্ব পরিচালিত হবে। কারণ ইসলাম ই সত্য....
Total Reply(0)
Kazi Tafiqul ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
নিউজিল্যান্ডএ দেখছি শান্তির র্বাতা আর বাংলাদেশ এ দেখছি অশান্তির র্বাতা ।মাজার পূজায় কবর পূজায় ভরে গেছে বিদাতি কাজকাম কাজে ভরে গেছে
Total Reply(0)
Saiful Islam ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
গত এক সপ্তাহে নিউজিল্যান্ড যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এ বিষয়টিকে ইসলামের পুনর্জাগরণ বলা যেতেই পারে। দেশটির ন্যায়সঙ্গত শক্তিশালী ভূমিকায় ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীরা কড়া জবাব পেয়েছে। মুসলমানদের সম্পর্কে সেখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে।
Total Reply(0)
কাজী মোঃ মাঈনুল ইসলাম ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
সুবহানাল্লাহ
Total Reply(0)
Zabed Mahmudkhan ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:১৯ এএম says : 0
সুবহানাল্লাহ, অসাধারন
Total Reply(0)
Kamal Mostofa ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৩২ এএম says : 0
Alhamdulillah. Allah tomi kobol koro. Amin.
Total Reply(0)
Md Jahirul Islam ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৩৩ এএম says : 0
আল্লাহ সকলকে কবুল করুন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন