ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গত শুক্রবার গভীর রাতে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ধর্ষকের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করে অন্যগ্রামে অবস্থিত এক সহপাঠির বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে। লজ্জায় অপমানে পরদিন শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় মেয়েটি। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গত শনিবার রাতে ইয়াসীন মিয়া (২২) এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত রোববার দুপুরে উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে থেকে স্বজনেরা নির্যাতিতা মেয়েটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। গলায় ফাঁস লাগানোর কারণে মেয়েটির কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সে এখন কথা বলতে পারছে না। তবে কাগজে লিখে স্বজনদের কাছে ঘটনার পূর্বাপর বর্ণনা দিয়েছে।
ছাত্রীর বাড়িতে গেলে তার চাচা বলেন, গত শুক্রবার রাতে শৌচাগার থেকে বের হওয়ার পর ইয়াসীন নামে এক তরুণ তাঁর ভাতিজিকে অপহরণ করে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চর আলগী গ্রামের নির্জনস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ইয়াছিন তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। জ্ঞান ফেরার পর মেয়েটি দৌড়ে চর আলগী গ্রামে অবস্থিত এক সহপাঠির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
ওই বাড়ির গৃহকর্ত্তী মোছা. শিল্পি আক্তার জানান, কর্দমাক্ত শরীর নিয়ে মেয়েটি গভীর রাতে আমার বাড়িতে আসে। তাকে চেনার পর বাড়িতে আশ্রয় দিই। কিন্তু উদভ্রান্ত অবস্থায় থর থর করে কাঁপতে থাকায় মেয়েটিকে ওই সময় কিছু জিজ্ঞেস করেননি। তবে তিনি ফোন করে মেয়ের বাবাকে ঘটনাটি জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছেন। শিল্পি আরো বলেন, পরদিন (শনিবার) সকালে মেয়েটি তাঁর বাবার সাথে আমাদের বাড়ির ফোন দিয়ে কথা বলে। কথা বলার পর মেয়েটিকে অনেকটা বিমর্ষ দেখায়। দুপুরের দিকে সবার অগোচরে সে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। বাড়ির সকলে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তাঁর শিশুপুত্র দরজার ফাঁক গলিয়ে মেয়েটিকে ঘরের আঁড়ার সাথে ঝুলতে দেখে চিৎকার করতে থাকে। পরে তিনি বাড়ির লোকজনকে সাথে নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে মেয়েটিকে আঁড়া থেকে নামিয়ে এনে মাথায় পানি ঢালেন। পরে তাঁর অভিভাবকরা এসে মেয়েটিকে নিয়ে যায়। মেয়েটি যে স্থানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল সেখানে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। ওই চিরকুটে লেখা ছিল তাঁর মৃত্যুর জন্য ইয়াসীন দায়ি। পুলিশ শনিবার রাতে ইয়াসীনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
নির্যাতিতার চাচা বলেন, তাঁর ভাতজিকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় ইয়াসীন ছাড়া আরো কেউ জড়িত ছিল কিনা তা তিনি বলতে পারছেন না। কারণ কণ্ঠনালী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তাঁর ভাতিজি কথা বলতে পারছে না।
ঈশ্বরগঞ্জের মরিচার চর মলামারী গ্রামে অবস্থিত ইয়াসীনের বাড়ি। ওই বাড়িতে গেলে ইয়াসীনের মা মোছা. সেলিনা খাতুন দাবি করেন, এই (ধর্ষণ) ঘটনার সাথে তাঁর ছেলে জড়িত কিনা তা তিনি বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতের খাবার খাওয়ার পর তিনি নিজের মেয়েকে নিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ইয়াসীন বাড়িতেই ছিল। শনিবার রাতে পুলিশ এসে ইয়াসীনকে ধরে নিয়ে যায়। সেলিনা আরো বলেন, তাঁর ছেলে ময়মনসিংহের একটি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্স করছে। তাঁর দাবি শত্রুতা করে তাঁর ছেলেকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হতে পারে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ কবীর বলেন, থানা-পুলিশের এক কর্মকর্তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ছাত্রীর বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন