শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক’দিন আগে বাংলাদেশে পবিত্র শবে বরাত উদযাপিত হয়ে গেল। ধর্মপ্রাণ মানুষদের দেশ বাংলাদেশে এরকমটাই অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। কয়েক বছর আগেকার একটা ঘটনা। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা চলছে। ঐ দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া দেখতে ত্রিপুরা থেকে কিছু লোক ঢাকায় উপস্থিত। তাদের ধারণা ছিল, ভারতে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে নিশ্চয়ই কিছু ঘটে থাকবে। কিন্তু তারা অবাক। ভারতে যে দাঙ্গায় বহু মুসলিম নিহত হয়েছে, এটা বাংলাদেশি মানুষেরা জানে। কিন্তু তারপরও এ ব্যাপারে তাদের কোনো করণীয় আছে বলে তারা মনে করে না। তবে হ্যাঁ, দেশের ব্যতিক্রমী দু একজন মাথা গরম মুসলমান এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু কোনো হিন্দুর উপর হামলা চালায় কি না সে সম্পর্কে সকলকে সতর্ক রাখা হয়েছে। এই সতর্কতার অভাবের জন্য ভারতে এমন কোনো দিন যায় না যে দিন কোনো না কোনো মুসলিম অন্যায়-অত্যাচারের শিকার না হয়। অথচ, বাংলাদেশে তার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না বললেই চলে।
কিন্তু ভারতে? ভারতে এরকমটা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। সকলেই জানেন, ভারতে শাসন ক্ষমতায় আছে কট্টর হিন্দুবাদী বিজেপি। ফলে সে দেশে এখন চলছে নরেন্দ্র মোদির শাসন। নরেন্দ্র মোদি যাতে পুনর্বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সে জন্য বিজেপির এক নেতা এক বক্তৃতায় জনগণকে এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে, তার ফলে ভারতকে মুসলিমবিহীন করা সহজতর হবে। সম্প্রতি এক খবরে প্রকাশ, ভারতে এক মুসলিম বন্দির গায়ে গরম লোহা দিয়ে লেখা হয়েছে হিন্দুদের ওঁ। এছাড়া অনেক সময় এটা করতে দেখা যায় যে, এমন সমস্ত লোক নিয়ে কোনো সংগঠনের নাম বানানো হয়, যাকে মুসলমান মনে করা হয়। যেমন মধ্যপ্রাচ্য বহুল পরিচিত সংস্থার নাম আইএস। অথচ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সৃষ্ট একটি সংস্থা।
এসব কথা মনে পড়ছে সম্প্রতি শ্রীলংকায় ভয়াবহ হামলায় সেখানকার কয়েকটি গীর্জা ও অভিজাত হোটেল আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়। পত্রিকায় এসেছে ওই মাহলায় কম পক্ষে ৩২১ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। আইএস তার দায় স্বীকার করেছে। তবে স্মরণ করা যেতে পারে, ইসলাম কোনো দিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সমর্থন করে না।
পশ্চিমা বিশ্বে এমন দিন যাচ্ছে না, যেদিন কোনো না কোনো অমুসলমান সাম্য-ভাতৃত্বের আদর্শ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় না নিচ্ছে। এর বিপরীতে আমরা দেখতে পাই খ্রিস্টান বিশ্বের অর্থায়নে এমন বহু সংস্থা পরিচালিত হচ্ছে যাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রচুর অস্ত্র ও সুযোগ সুবিধা পান। অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বে বিপুল সংখ্যক মুসলমান থাকা সত্তে¡ও ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের অবদান খুবই সামান্য। যে কারণে বলা যায়, ইসলাম চিরকাল মুসলিম প্রচারকদের মাধ্যমেই সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশেও ইসলাম প্রথম প্রচারিত হয় সমুদ্র পথে আরব বণিকদের সাথে আসা ইসলাম প্রচারকদের মাধ্যমে। এই সব প্রচারক তাদের সহজ-সরল জীবনধারার মাধ্যমে এদেশে জাতিভেদ দ্বারা লাঞ্ছিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ইসলামের আদর্শে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন বলেই অমুসলমানদের দেশ আজ সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শে বিশ্বাসী পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
মূলত সাম্য-ভ্রাত্বের আদর্শে গভীর বিশ্বাস এবং মুসলিম প্রচারকদের সহজ-সরল আদর্শের কারণেই আজ বাংলাদেশ বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হতে পেরেছে। এর বিপরীতে ভারতে বর্তমানে মুসলমান হয়ে যাওয়া বহু মানুষকে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রচুর চেষ্টা করা হলেও সেসব চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। এর মূলে রয়েছে হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা। এ ব্যাপারটিকে গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেয়ার সাথে তুলনা করা চলে। ভারতীয় উপমহাদেশে একদা মুসলমান ধর্মের কোনো জাতি ছিল না, হিন্দুরাই ছিল প্রধান। কিন্তু সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শের কারণে জাতিভেদ লাঞ্ছিত বহু হিন্দু পরবর্তীকালে ইসলামের আদর্শের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণের ফলে ভারতে এখন ইসলাম অন্যতম প্রধান ধর্ম। লাগাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু মুসলমান নিহত হওয়া সত্তে¡ও মুসলমান একটি ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায়।
এর মূলে রয়েছে ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শের প্রভাব। এ কারণেই এককালের অমুসলিম দেশ আজ ব্যাপক সংখ্যক মুসলমানের দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতে এককালে প্রধানত হিন্দুরাই বসবাস করত। সেই ভারতের পশ্চিম দিকে যে পাকিস্তান রাষ্ট্র অবস্থিত তার পশ্চিম দিকে আফ্রিকা পর্যন্ত বহুদিন ধরেই মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকা। এই বিশাল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার পূর্ব পর্যন্ত মুসলমান প্রধান বাংলাদেশ এলো কী করে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার সঙ্গে আরব বণিকদের যোগাযোগ ছিল প্রাচীনকাল থেকে। বণিকদের সঙ্গে ইসলাম প্রচারকদের আগমনের ফলে তাদের সঙ্গে এদেশের মানুষের মেলামেশার সুযোগ হয়। তারা ইসলাম গ্রহণ করে।
সমুদ্র এলাকা ছাড়ও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রভৃতি এলাকারও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। আর আসলে হাওর অঞ্চল এসেছে সাগর থেকে। সাগর থেকে হাওর। এই হাওর অঞ্চলেও আরব থেকে আগত ইসলাম প্রচারকরা এসে বসতি স্থাপন করেন। ফলে এই অঞ্চলে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে দ্রুততর গতিতে বেড়ে চলে ইসলামের প্রভাব। এসবের ফল হিসেবে এ অঞ্চল সহজেই এক বিশাল মুসলিম জনপদে পরিণত হয়। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশ একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম জনপদ ও রাষ্ট্র।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন