সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জান্নাত ও জান্নাত লাভের খোশখবরী-৪

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯

জান্নাত লাভকারীগণ শেষ বিচারের দিন চূড়ান্ত সফল বলে স্বীকৃত হবেন। এ প্রসঙ্গটি এবং জান্নাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) সেদিন যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করা হবে, তার প্রতি তিনি তো কৃপা করবেন। আর তাই সুস্পষ্ট সফলতা। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ১৬)। (খ) আমি তাদের অন্তর হতে হিংসা-বিদ্বেষ, মনোমালিন্য দূর করে দেব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। (সূরা আরাফ : আয়াত ৪৩)।
(গ) তারা অবস্থান করবে সুউচ্চ উদ্যানে। তার ফলের খোসাগুলো হবে নিকটবর্তী। (সূরা আল হাক্কাহ : আয়াত ২২, ২৩)। (ঘ) আমি তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তাতে প্রচুর ফলমূল আছে এবং তা হতে তোমরা ভক্ষণ করে থাক। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ১৯)। (ঙ) যেখানে কাঁদি কাঁদি কলা থাকবে। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ২৯)। (চ) আমি তাদের (জান্নাতের হুরদের) সৃষ্টি করেছি চির কুমারীরূপে। তারা সোহাগিনী। (তারা নির্ধারিত হবে) আসহাবুল ইয়ামিনের জন্য। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৩৬-৩৮)।
(ছ) আয়াত লোচনা, তাবু অভ্যন্তরে অবস্থানাকরীনী রমণীগণ। (সূরা আর রাহমান : আয়াত ৭২)। (জ) জান্নাতীদের বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সাথে। (সূরা আদ দুখান : আয়াত ৫৪)। (ঝ) জান্নাতে থাকবে বিস্তৃত প্রসারিত ছায়া প্রবহমান পানি, পর্যাপ্ত ফল ফলাদি। (সূরা ওযাকিয়া : ৩০, ৩১)।
বস্তুত : জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতসমূহ অস্বীকারকারীগণ সকলেই কাফির। আহলে ঈমানের সর্বসম্মত মতানুসারে তাদের কঠোর দন্ডে দন্ডিত করা ওয়াজিব। কেননা, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. এ বিষয়ে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও সকল প্রকার ওজর আপত্তির অপনোদনকারী বর্ণনা প্রদান করেছেন। উম্মাতে মুহাম্মাদীর বিশেষ ব্যক্তি সাধারণ লোকের সকলের নিকট এ সকল বর্ণনা তাওয়াতুর পদ্ধতিতে পৌঁছেছে।
কোনো কোনো ইয়াহুদী এ জাতীয় মাসআলাতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে বলেছে, হে মুহাম্মাদ সা., তুমি বল যে, জান্নাতীগণ খাবে পান করবে। সে খাবে ও পান করবে। সে খাবে ও পান করবে তার তো প্রশ্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সুগন্ধি ঘর্মের সাথে পানাহারের নির্যাস দেহ হতে বের হয়ে যাবে। প্রশ্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : খন্ড ৪, পৃ. ৩১৪)।
এপ্রসঙ্গে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, জান্নাতের কতিপয় নিয়ামতের বর্ণনা খবরে ওয়াহিদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর ওপরও বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি। যদিও এগুলো অস্বীকার করায় মানুষ কাফির হয় না। এক্ষেত্রে অধিকতর সঠিক কথা হল এই যে, খবরে ওয়াহিদ অস্বীকারকারীকে কাফির বলা যাবে না। (শরহে আকিদায়ে ফিফারানিয়াহ : খন্ড ১, পৃ. ১৯)।
মোটকথা, সকল জান্নাতীর জান্নাতে প্রবেশ একমাত্র আল্লাহপাকের দয়া ও করুণার ফলেই হবে। কাওকেই জান্নাত প্রদান করা আল্লাহর জন্য জরুরি ও কর্তব্য নয়। এতদ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তার কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। বান্দাগণ তাদের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ২৩)। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকেই তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।
সাহাবগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকেও না, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, আমিও না। তবে, আল্লাহপাক আমাকে তার রহমতের ছায়ায় ঢেকে নেবেন। (সহীহ মুসলিম : খন্ড ১, পৃ. ৩৭৭)। অধিকতর সঠিক কথা হল এই যে, আল্লাহপাক কাউকে জান্নাত দিলে তা তার করুণামাত্র। আর কাউকে জাহান্নামে দাখিল করলে, তা তার ইনসাফ ও ন্যায় বিচার। (আকীদায়ে তাহাভিয়্যাহ মায়াশ শরহে : পৃ. ৪৩১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন.....সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো সে মহা সফলতা অর্জন করলো...। আবারো ঐ আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথে আহ্বান করছেন।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
তিনি জান্নাতের বর্ণনা দিয়েছেন যে, জান্নাতে আছে সুমিষ্ট পানির নহর, দুধের ঝর্ণাধারা যার স্বাদের কোনো পরিবর্তন নেই, শরাবের নহর যা পানকারীদের জন্য উপাদেয় এবং খাঁটি মধুর স্রোতস্বিনী। এর তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নদী-নালা প্রবাহিত। এখানে বাসনা অনুযায়ী, চোখজুড়ানো সকল চাহিদা পূর্ণ হবে। প্রত্যেক মুমিন তার ঈমানদার সন্তানাদি, সৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং শহীদগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। আর সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ ও শহীদগণ কতই না উত্তম বন্ধু! বরং মুমিন ব্যক্তি এর চেয়ে আরো উত্তম বস্তু লাভ করবে। আর তা হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ এবং তাঁর হাওযের পাশে অবস্থান। অধিকন্তু সেখানে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট নি‘আমত প্রাপ্তির যে ওয়াদা আল্লাহ করেছেন তা পূর্ণ হবে যখন মুমিন ব্যক্তি তার প্রভূকে কোনো পর্দা ছাড়াই সরাসরি দেখতে পাবে।
Total Reply(0)
মাওলানা রূহুল আমীন'সানী' ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
ইহকালীন জীবনে মানুষের কৃতকর্মের মাধ্যমে অর্জিত নেকী পরকালীন জীবনে পরিত্রাণ লাভের অসীলা হবে। তাই দুনিয়াতে অধিক নেক আমলের দ্বারা বেশী বেশী ছওয়াব লাভের চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু পার্থিব জীবনের মায়াময়তায় জড়িয়ে আমলে ছালেহ থেকে দূরে থাকলে পরকালীন জীবনে কষ্টভোগ করতে হবে।
Total Reply(0)
জয়নাল হাজারি ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা অত্যাবশ্যক। কেননা ঈমান ব্যতিরেকে মানুষের কোন নেক আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না। তেমনি কারো অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান থাকলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
Total Reply(0)
বিবেক ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
মানুষের শেষ ও চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত। দুনিয়ার চলমান এ জীবনই শেষ কথা নয়। এ জীবনের পরেই শুরু হবে পরকালের সীমাহীন চিরস্থায়ী জীবন। যে জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সে জীবনে যারা সফলকাম হবে তাদের জন্য চিরস্থায়ী জান্নাত। আর যারা ব্যর্থ তাদের জন্যও রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন