পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিকের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। ৯৮ শতাংশ শ্রমিক সরকারি ছুটির দিনেও কাজ করেন। মে দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আইএলও কনভেনশন-১ এর শতবর্ষপূর্তি এবং বাংলাদেশে কর্মঘণ্টার বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এ তথ্য প্রকাশ করে।
পরিবহন খাত নিয়ে বিলসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ২০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কোনো কর্মবিরতি ছাড়াই কাজ করেন। ৯০ শতাংশের বেশি পরিবহন শ্রমিকের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। ৯৮ শতাংশ শ্রমিক সরকারি ছুটির দিনেও কাজ করেন। দূরপাল্লার চালকরা যেন ৫ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ি না চালান, তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তার প্রতিফলন নেই। আইএলও কনভেনশনে কর্মক্ষেত্রে দৈনিক ৮ ঘণ্টা ও সাপ্তাহিক ৪৮ ঘণ্টা শ্রম নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে তা মানা হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আইএলওর সদস্য হলেও এত বছরেও আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করছে না। শ্রম আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কর্মঘণ্টার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলসের তথ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ইউসুফ আল মামুন।
বিলস নিরাপত্তাকর্মী, পরিবহন খাত, হোটেল, রেস্তোরাঁ, রি-রোলিং মিল ও হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ পাঁচটি প্রচলিত বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বিলস গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রায় এক-চতুর্থাংশ (প্রায় ২৪ শতাংশ) নিরাপত্তাকর্মী দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ৫০ শতাংশ কর্মী কোনো কর্মবিরতি ছাড়া কাজ করেন। প্রায় দুই তৃতীয়াংশ (প্রায় ৬৬ শতাংশ) নিরাপত্তাকর্মীর সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারিত নেই। সরকারি ছুটির দিনে ৮৬ শতাংশ কর্মী কাজ করেন।
বিলসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এদের এক-সপ্তমাংশের বেশি (প্রায় ১৪ শতাংশ) শ্রমিক ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা বেশি কাজ করেন। ২৬ শতাংশ শ্রমিক কোনো কর্মবিরতি ছাড়া কাজ করেন। ৮০ শতাংশের বেশি শ্রমিকের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই।
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ল্যাবে গবেষণা শেষে বিলসের পর্বেক্ষণ, এ খাতে ৪২ শতাংশের বেশি শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের বেশি (প্রায় ২৮ শতাংশ) শ্রমিক ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন। ৫০ শতাংশ বেশি শ্রমিককে সরকারি ছুটির দিনে কাজ করতে হয়। প্রায় ২২ শতাংশ শ্রমিকের সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই।
আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিবনাথ রায় বলেন, দেশে ৫ কোটি ৮৭ লাখ শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনের সবগুলো ধারা আমরা পরিপূর্ণ করতে পারিনি। এখানে চলে আসে, ন্যায্য মজুরির কথা। শ্রমিকদের বেশি কাজ করালে তার জন্য ন্যায্য মজুরি পরিশোধ করতে হবে। পরে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানেও লোকবল সঙ্কটের কথা জানান। শ্রম আইন ও শ্রমিকদের আইনি অধিকার বাস্তবায়নে তার অধিদপ্তর আইএলও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম নাসিম, বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদ, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন