জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নরসিংদী সদর হাসপাতালটি এখন সংঘবদ্ধ দালাল চক্র ও চোরদের অবাধ লুণ্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শতাধিক দালাল ও চোরদের একটি দল প্রতিনিয়তই হাসপাতালে রোগী ও তাদের আত্মীয়দের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। এছাড়া ডাক্তার কর্মচারীদের আপস করে চলতে বাধ্য করছে ওই চক্রটি।
জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে শিশু ওয়ার্ডের সামনে থেকে এক রোগী শিশুর মায়ের নগদ ১০ হাজার টাকা এবং ১২ ভরি স্বর্ণের একটি চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরই ঘন্টাখানেকের মধ্যে তানিয়া নামের এক মহিলার একটি মোবাইল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে এক মহিলা চোর। কিন্তু সংঘবদ্ধ দালালরা মুহূর্তের মধ্যেই ওই মহিলাকে রোগীদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন রোগী বা তার আত্মীয়দের মোবাইল ফোন অথবা টাকা অথবা ব্যাগ চুরি যাচ্ছেই। সংঘবদ্ধ দালাল-চোরদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে ডাক্তারদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা ও পুরুষ দালালরা রোগীদেরকে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন ডাক্তারের সাথে দালালদের কিছুটা যোগসাজশ থাকলেও বেশিরভাগ ডাক্তারই দালালদের এই তৎপরতাকে মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু দালালরা স্থানীয় এবং শক্তিশালী হওয়ায় চিকিৎসকরা তাদের কিছুই বলতে সাহস পাচ্ছেন না। এমতবস্থায় হাসপাতালের ডাক্তার কর্মচারীরা দালালদের সাথে আপস করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। অবস্থা এমন যে দালালরা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকেও তোয়াক্কা করছে না।
এই হাসপাতালে অতীতে দালালদের বিরুদ্ধাচারণ করতে গিয়ে অনেক ডাক্তার দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। দালালদের কারণে অনেক ডাক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে বদলি হয়ে গেছেন। অনেক ডাক্তার পোস্টিং পেলেও দালালদের অপতৎপরতার কথা শুনে হাসপাতালে চাকরি করতে সাহস করেননা।
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী শহরের দত্তপাড়া, কাউরিয়াপাড়া, সাটিরপাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, কান্দাপাড়া, মধ্য কান্দাপাড়া ইত্যাদি মহল্লা থেকে কমবেশি শতাধিক পুরুষ ও মহিলা দালাল এলাকার প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে হাসপাতালে দালালি করছে। তারা হাসপাতালের আশেপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সদর হাসপাতালে দালালি করছে। আবার সাথে করে নিয়ে আসছে একদল মহিলা ও পুরুষ চোর। দালালরা দালালি করে আর চোরদেরকে লাগিয়ে দেয় রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি চুরি করার কাজে। রোগী ও রোগীদের আত্মীয় পরিচয়ে এসব চোরেরা হাসপাতালের ভিতরে অবাধে বিচরণ করে এবং সুযোগ বুঝে রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে যায়।
দালালরা হাসপাতালের এক শ্রেণির ব্রাদারদের সহযোগিতায় রোগীদের জরুরি রেফার করিয়ে নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এসব প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো চিকিৎসার নামে যেনতেন প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বিল করে রোগী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনকে সর্বশান্ত করে ছেড়ে দেয়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিরুল হক শামিম বলেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন এবং ওয়ার্ডগুলোতে কোন গেট কিপার নেই। যার ফলে যে কোন মানুষ, যেকোন সময় ওয়ার্ডে অনায়াসেই ঢুকে যেতে পারে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে দালাল চক্র ও সংঘবদ্ধ চোরেরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন