আমাদের সবার উপর রমজান মোবারক হোক। রমজান অর্থ প্রচন্ড গরম ও উত্তপ্ত পাথর। রমজানকে এজন্য রমজান বলা হয় যে, রমজান মাসে মানুষের গোনাহগুলো গরমের কারণে জ¦লে যায়। রাসূলেপাক সা. বলেছেন, এ মাসে আখেরাতের চিন্তা এবং ক্ষুৎপিপাসার তাপে অন্তরে প্রতিক্রিয়া হয়, যেমন সূর্যের তাপে মরুভ‚মি এবং পাথর পুড়ে যায়।
কারও কারও মতে, রমজান শব্দটি ‘রমজ’ থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ এমন বর্ষণ, যা হেমন্তকালে বর্ষিত হয়। রমজান যেহেতু মানুষের অন্তর এবং শরীর থেকে গোনাহগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয় তাই এ মাসের নাম রমজান রাখা হয়েছে। এ মাসের অনেকগুলো বিশেষত্ব আছে, যার মধ্যে প্রথম হলো, পবিত্র কোরআন অবতরণ।
আল্লাহপাক বলেন, “রমজান হলো সেই মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশক, আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে।” (সুরা বাকারা : ১৮৫)।
প্রশ্ন হতে পারে, কোরআন তো একবারে নাজিল হয়নি। বিভিন্ন উপলক্ষ অনুযায়ী ঐ ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহপাক তাঁর নির্দেশ রাসূলেপাক সা.-কে জানিয়ে দিয়েছেন প্রায় ২৩ বছর সময়ের মধ্যে। তাহলে এ মাসেই কী করে কোরআন নাজিল হলো? এ প্রশ্নের জবাবে হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, কোরআন আসলে রমজান মাসের শবে কদরেই নাজিল হয়েছে। অর্থাৎ শবে কদরে পবিত্র কোরআন ‘লাউহে মাহফুজ’ থেকে একবারেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই কোরআন পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানের ‘বায়তুল ইজ্জত’-এ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় অংশ হজরত জিবরাইল আ. আল্লাহপাকের নির্দেশে হজরত রাসূলেপাকের নিকট অহী আকারে নিয়ে আসেন। এছাড়াও হজরত আদম আ. থেকে নিয়ে যে সমস্ত নবী-রাসূলের নিকট কিতাব এবং আল্লাহ পাকের ছহিফা (বিশেষ বাণী) অবতীর্ণ হয়েছে, এগুলো এই মাসেই নাজিল হয়েছে বলে হাদিস-শরিফে উল্লেখ আছে। যেমন, রমজান মাসের ৬ তারিখে হজরত মূসা আ.-এর উপর পবিত্র তাওরাত কিতাব, হজরত দাউদ আ.-এর উপর জবুর নাজিল হয় রমজান মাসের ১৮ তারিখে, রমজান মাসের ১৩ তারিখে ইঞ্জিল নাজিল হয় হজরত ঈসা আ.-এর উপর।
উপরোল্লিখিত ঘটনা ছাড়াও রাসূলেপাক সা.-এর জীবদ্দশায় গুরুত্বপূর্ণ যেসব ঘটনা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে, সেগুলোও এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে। যেমন, এ মাসে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মক্কা বিজয় এ মাসেই হয়েছে।
এ মাসে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দ্বারসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়।
রাসূলেপাক সা. বলেন, বেহেশতের আটটি দরজা আছে। এর মধ্যে একটির নাম রাইয়ান, একমাত্র রোজাদারই এই দরজা দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করার অধিকার রাখে। রাসূলেপাক সা. আরও বলেন, এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের জন্য দশ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত নেকী দেয়া হয়। তবে রোজা ব্যতীত। কারণ আল্লাহপাক বলেন, “রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিফল দান করব। সে আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খানাপিনা ত্যাগ করেছে।” রোজাদারের জন্য (প্রধান) দুইটি আনন্দ রয়েছে। একটি ইফতারের সময় আর অন্যটি বেহেশতে আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহপাকের নিকট মেশকের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক সুগন্ধময়। রোজা হলো মানুষের জন্য (দোজখের আগুন থেকে রক্ষার জন্য) ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ রোজ রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থ সোরগোল না করে। যদি কেউ কাউকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায় সে যেন বলে, ‘আমি রোজাদার’ (বোখারী, মুসলিম)।
সেহরী সম্পর্কে রাসূলেপাক সা. বলেন, ‘তোমরা সেহরী খাবে, কেননা সেহরীতে বরকত রয়েছে।’ তিনি ইফতার সম্পর্কে বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে, ততদিন মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে’ (বোখারী)। সূর্য অস্ত যাবার সাথে সাথেই ইফতার করা সুন্নত। তবে সূর্য অস্ত গেল কিনা তা ভালভাবে জেনে নিতে হবে। সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। পেটে ভুক, পিপাসায় গলা শুকিয়ে যাবার পর ইফতার সামনে নিয়ে আল্লাহপাকের হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকা আল্লাহ পাকের নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়।
ইফতার সামনে নিয়ে বান্দা যখন অপেক্ষা করতে থাকে, তখন আল্লাহপাক ফেরেস্তাদের ডেকে বলেন, ‘আমার রোজাদার বান্দাদের কি ক্ষুধা লাগেনি? তাদের কি পিপাসা লাগেনি?’ ফেরেস্তাগণ বলেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহ পাক লেগেছে।’ আল্লাহপাক জিজ্ঞাসা করেন, ‘তাদের সামনে কি খাদ্য ও পানীয় নেই?’ উত্তরে ফেরেস্তাগণ বলেন, ‘জী আছে’। তখন আল্লাহপাক বলেন, ‘তারা পানাহার করে না কেন?’ ফেরেস্তাগণ বলেন, ‘আপনার আদেশের সম্মানে এবং আপনার ভয়ে।’ আল্লাহপাক বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে? আমার আজাব দেখেছে?’ ফেরেস্তাগণ বলেন, ‘না! দেখেনি।’ তখন আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ফেরেস্তাগণ, তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ (সংকলিত
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন