ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডব চালিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের অনেকেরই নেই নতুন করে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই। অপ্রতুল ত্রাণ দেয়া হলেও তা কোন কাজে আসছে ক্ষতিগ্রস্তদের। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে দাবী ত্রাণ সহায়তা আর নগদ অর্থ নয় সরকার যেন ঘর তৈরি করে দেয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় যে, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে, কারো বিধ্বস্ত হয়েছে পুরো ঘর। কারো বা ঘরে সাথে রান্না করার চুলোটি পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে একজন দক্ষিণ কোড়ালিয়া গ্রামের ছকিনা বেগম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তাণ্ডবে আমার ঘরের চাল নিয়ে অন্য জায়গায় ফালাইয়া দিছে । বাচ্চা নিয়ে ঘর চাপা পরে এর মধ্যে কোন রকম জীবন রক্ষা করছি। এখন ছেলে- মেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। আমাদের তেমন কোন সামর্থ্য নেই যে নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারবো। সরকার যদি আমাদের নতুন করে ঘর তৈরি করে দেয় তাহলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন রকম বাচঁতে পারবো। তা নাহলে এমনেই সব পরে থাকবো।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক নারী কুলসুম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সব কিছু নিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা এখন মানবতর জীবন যাপন করছি। কোন বাসা বাড়ি নাই।সরকার আমাদের কাল যা খাবার দিছে,আজ কোন খাবার দেয় নি। সরকার আমাগোরে ২ বান টিন ও ৫ হাজার টাকা দিবো । এখন হুনি ১ বান টিন ও ২ হাজার টাকা দিবো। এদিয়ে আমাদের কিছু হইবো না। সরকার যদি ১ টাকা দেয় তা যেন আমাদের হাতে দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত রহিমা বেগম বলেন, সরকারে কাছে আমাদের দাবী আমাদের যেন ঘর তৈরি করে দেয়। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রান সহায়তা দেয়া হলেও তা দিয়ে ঘুরে দাড়াতে পারছে না পরিবারগুলো। ফলে অভাব অনাটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে এক কিশোরী সুমাইয়া। পড়াশোনা করেন দক্ষিন দিঘলদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ঝড়ে তারা বাড়ীঘর সম্পূর্ন ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। এর সঙ্গে তার বই খাাতা নষ্ট করে দিয়েছে। এখন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আগামীতে জিএসসি পরীক্ষা দিবে সুমাইয়া। অর্থকষ্টে আর বই নষ্ট হওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে যাবে কি সুমাইয়ার মতো মেয়েদের পড়াশোনা। তাই সরকারে সহায়তা কমানা করেন সুমাইয়ার মতো স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরা।
উপকূলে পূর্ব সতর্কতা ও প্রশাসনের প্রস্তুতের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহাণীর ঘটনা না ঘটলেও অসহায় দরিদ্রদের আধা কাঁচা টিনের ঘর বিদ্ধস্ত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কোন ঘূর্ণিঝড়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকেই বেশি। দূর্যোগের পর অনেকেই আসেন ত্রাণ সহায়তা নিয়ে, কেউই আসে না স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে।
তবে জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে মাঝে ২ বান টিন ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৬ হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও যাদের ঘর তোলার সামর্থ্য নেই তাদের গৃহনির্মানের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘুর্নিঝড় ফনীর আঘাতে দ্বীপজেলা ভোলায় নিহত হয়েছে ১ জন ও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়ও দুইশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাধঁ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েটি গ্রাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন