এই নশ্বর পৃথিবীতে মানুষের পদার্পণ ঘটেছে হযরত আদম আ.-এর মাধ্যমে। তারপর ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছেন যুগে যুগে বহু নবী ও রাসূল। যারা দুনিয়ার মানুষকে নৈতিক চরিত্রের উত্তম শিক্ষা দান করেছেন। কিন্তু তাদের শিক্ষা ও আদর্শের মাঝে পূর্ণতা ছিল না, ছিল না সর্বাত্মক পবিত্র চরিত্রের গতিধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন।
তাই সর্বশেষ নবী রাসূলুল্লাহ সা. এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতা সাধন করেছেন। এই নিরিখে রাসূলুল্লাহ সা. সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘অর্থাৎ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে নৈতিক চরিত্র-মাহাত্ম্যকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার উদ্দেশে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)।
মানবজীবনের বিভিন্ন অঙ্গনের পর্যায়ক্রমিক সিঁড়ি রচিত হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনের সমন্বয়ে। রাসূলুল্লাহ সা.-এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের শিক্ষা ও আদর্শ সর্বব্যাপী ছিল না বিধায় মানবজীবনের সকল সিঁড়িতে তারা আংশিক আদর্শ ছাড়া পরিপূর্ণ আদর্শের রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এই অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. নিজের কর্মময় জীবনে।
তিনি তার ২৩ বছরের নবুওয়াতী জিন্দেগিকে জীবন ও জগতের প্রয়োজনীয় যাবতীয় নৈতিক চরিত্র মাহাত্ম্যকে পূর্ণতা দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার মাধ্যমেই বিশ্বজগৎ লাভ করেছে পরম আদর্শভিত্তিক নৈতিক চরিত্রের উজ্জ্বলতম বিকাশ।
শুধু তাই নয়, ইসলামী জীবনধারার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে ঈমান। আল্লাহর ওপর ঈমান, তার ফেরেশতাদের ওপর ঈমান, কিতাবসমূহের ওপর ঈমান, তার প্রেরিত রাসূলগণের ওপর ঈমান, কিয়ামতের দিনের ওপর ঈমান, তকদিরের ওপর ঈমান, ভালো এবং মন্দ সব কিছু আল্লাহপাকের পক্ষ থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবন লাভের ওপর ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য।
এই ঈমানের পরিপূর্ণতাও সাধিত হয় না, যদি নৈতিক চরিত্র পূর্ণতা লাভ না করে। এই বিশেষত্বটি রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তিদের মাঝে ঈমানের দিক থেকে পূর্ণতা সেই ব্যক্তিই লাভ করতে পারে, যে নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে সবার অপেক্ষা উত্তম হবে। (আবু দাউদ, দারেমি)।
বস্তুত ঈমান ও নৈতিকতা পরস্পর গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না। উত্তম নৈতিক চরিত্র যেমন ঈমানের পরিপূর্ণতার পথকে সহজ ও সুগম করে তোলে, তেমনি নৈতিকতাহীন ঈমানের কোনোই মূল্য নেই। নেকি ও বদি উভয় প্রকার কাজের পরিচয় লাভ করা উত্তম নৈতিকতার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
হযরত মাওয়ায়েস ইবনে সায়মন আনসারী রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সা. বিরর, নেকি এবং ইসম বদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, ‘বিরর হচ্ছে উত্তম চরিত্র এবং ইসম হচ্ছে এমন কাজ যা তোমার মনে কুণ্ঠা জাগায় এবং লোকেরা তা জানতে পারুক, তা তুমি পছন্দ করো না। (মুসলিম)। এ থেকে বোঝা যায় যে, নেকির কাজ অবলম্বন এবং বদির কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতা সাধন সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন