শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাহাড় কাটা কিছুতেই থামছে না হুমকিতে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য

মৌলভীবাজারে প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রভাবশালী চক্র

এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কোনো প্রকার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একটি প্রভাবশালী বেপরোয়া চক্র মৌলভীবাজারে পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে। এতে করে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। কেউ কেউ পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসতঘর বানাচ্ছেন। আবার কেউ সড়ক তৈরীর অজুহাতে পাহাড় কাটছেন। পাহাড় কাটারোধে প্রশাসন হঠাৎ করে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু কিছুতেই থামছেনা পাহাড় কাটা।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি ও বোরুতলায় চলছে অবাধে পাহাড় কাটা। প্রতি বছর শুকনো মৌসুম এলেই নির্বিচারে চলে পাহাড়কাটা। আর বর্ষা মৌসুমে ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০টি ট্রাক পরিবহন করছে পাহাড়কাটা মাটি। এভাবে পাহাড়কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন। একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রভাবশালীরা সরকারে খাস জমিতে বসবাসসহ নানা অজুহাতে চালাচ্ছে এই নিধনযজ্ঞ। আথানগিরি ও রোরুতলার মতো হরদম চলছে জেলার অন্যান্য উপজেলায় পাহাড়কাটা।
অনেক স্থানেই টিলার ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড়কাটা বিষয়ে আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মো. আজির উদ্দিন জানান, পাহাড় কাটছে একটি প্রভাবশালী চক্র। যখনই পাহাড়কাটার খবর পান তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনকে তিনি জানান। প্রশাসন খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি আটক করে। আগে পাহাড়কাটা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ওই এলাকায় পাহাড়কাটা হচ্ছে বেপরোয়াভাবে।
মৌলভীবাজার সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) সঞ্জিত কুমার বলেন, কাগাবালা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা বোরুতলায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে আবারও পাহাড়কাটা শুরু করে। পাহাড়কাটা বন্ধে পরিবেশ আইনে নতুন করে কোন মামলা হয়নি। তিনি কর্মস্থলে যোগদানের পূর্বে পরিবেশ আইনের মামলা চলমান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, আসুক মিয়া ও সবুজ মিয়ার নেতৃত্বেই চলে এই পাহাড়কাটা। তারা প্রশাসন ও সরকার দলীয় রাজনীতিবিদদের ম্যানেজ করেই চালান এই অপরাধকর্ম। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে চান না। এ বিষয়ে বোরোতলা এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, যারা মাটির ঠিকা রাখে, তারাই প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহন করছে। তাদের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় ট্রাক নিয়ে প্রবেশ করতে না দিলে অথবা ট্রাকগুলো আটকে মামলা দিলে পাহাড়কাটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, সংবাদ সংগ্রহের কারণে জেলার পাহাড়ী এলাকায় গেলে পাহাড়কাটার এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। আথানগিরি ও বোরুতলার মতো অহরহ জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও পাহাড়কাটা চলছে। এসব পাহাড়ী টিলাজুড়ে রয়েছে মূল্যবান গাছ গাছালি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
পাহাড়কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই ছোটখাটো ভূমিধস হচ্ছে। অনেক স্থানেই টিলার ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড়কাটারোধে প্রশাসন অনেকটা দায়সারা। এ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রভাবশালী মহল নির্বিচারে পাহাড় কেটেই যাচ্ছে।
অভিজ্ঞ মহল মনে করেন এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা কোনো ভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। পাহাড়কাটা বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধস হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন