কক্সবাজারে দিন দিন কমছে পাহাড়ের সংখ্যা। জেলার মূল শহরতলী বাদে বেশির ভাগ জায়গায় আগে উঁচু পাহাড় দেখে পর্যটকদের চোখ জুড়ালেও এখন আর দেখা মেলেনা সেইসব পাহাড়। কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে সাবাড় হয়ে গেছে এসব পাহাড়। জেলার বনভূমির হিসাবে প্রায় ৪০ শতাংশ পাহাড় কাটা পড়েছে বলে মনে করা হয়।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই দফতরের আওতায় মোট বনভূমি আছে ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টর এর মধ্যে নিজস্ব সংরক্ষিত বন ২৩ হাজার ২২৬ দশমিক ৮২ হেক্টর আর রক্ষিত বন ৬ হাজার ৬৪৩ দশমিক ১৭ হেক্টর। অর্পিত বন ৩১ দশমিক ১ হেক্টর।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই দফতরের আওতায় মোট বনভূমি আছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫০৯ দশমিক ১৯ হেক্টর, এর মধ্যে সংরক্ষিত বন ৮৯ হাজার ১৪৯ দশমিক ৪৪ হেক্টর, রক্ষিত বন ১৮ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৭৫ হেক্টর। দুই দফতরের কর্মকর্তাদের দাবি এর মধ্যে বেশির ভাগই পাহাড় শ্রেণি। বন কর্মকর্তাদের দাবি, ১০ বছর আগেও কক্সবাজারে অনেক পাহাড় ছিল এখন সেগুলো স্বপ্ন। কয়েক বছর ধরে পাহাড় কাটা চলছে তবে ২/৩ বছরেই বেশি পাহাড় কাটা পড়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে শুধু পাহাড় কাটার বিষয়ে এবং মামলাও করা হয়েছে। তিনি জানান, সদর উপজেলার পিএমখালী, ঈদগাঁও, ভারুয়াখালী, খুরুশকুল এবং রামু উপজেলার মিঠাছড়ি, ঈদগড়, খুনিয়াপালং, উখিয়াসহ অনেক জায়গায় ব্যাপক ভাবে পাহাড়কাটা হয়েছে।
এদিকে, মিঠাছড়ি এলাকার আবদুল কাদেরসহ অনেকে বলেন, আমাদের এলাকার ৭০ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিদিন অর্ধশত ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদগাঁ ও ইসলামপুর এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, এলাকার সব পাহাড় এখন কাটা হয়ে গেছে। বেশির ভাগ মাটি রেল লাইন প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল দিনরাত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে।
উখিয়া উপজেলা সুজন সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, সরকারি তথ্য মতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার একর বনভূমি কাটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এর মধ্যে ৬/৭টি বড় বড় পাহাড় কাটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য এবং এখনো কাটা হচ্ছে।
উখিয়া কলেজের অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীর রক্ষা কবজ। ভূমিকম্পসহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পৃথিবীকে সঠিক মাত্রায় বহন রাখতে পাহাড়ের ভূমিকা বেশি। এছাড়া পাহাড়ের কারণে অতিবৃষ্টি, কমবৃষ্টিসহ অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই এভাবে পাহাড় কাটার কারণে স্বাভাবিক পরিবেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন বাপার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, আমি আগেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছিলাম রেল লাইন প্রকল্প হচ্ছে সেখানে যে বিপুল পরিমান মাটি লাগবে সেটা কোথা থেকে আসবে? কারণ যে কোন কিছুর চাহিদা থাকলে সেটা যে কোনভাবে পূরণ করার চেষ্টা করবে। আর পাহাড় না থাকলে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটবে সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এক কথায় মানুষের বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যাবে এই স্থান। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে এখনি সবাইকে কঠোর হতে হবে। প্রতিদিন বনভূমি দখল হচ্ছে তাছাড়া প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন