শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বান্দরবানের দূর্গম রুমানা পাড়া ঘেঁষে পাহাড় কেটে অবৈধ ইটভাটা

বান্দরবান থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২১, ১১:৩৮ এএম

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে প্রায় তিন মাসের মাথায় পরিবেশ ধংস করে ইটভাটার কাজের জন্য একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বুলড্রোজার( এস্কেভেটার) ব্যবহার করে প্রকাশেই পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে বান্দরবানের দুর্গম রুমা উপজেলায় ।
স্থানীয়রা জানিয়েছে বান্দরবান জেলা সদরে ঠিকাদার পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মিলন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে তোলার কাজ চালিয়েছে। এই ইটভাটার গড়ে তুলতে নেই কোনো প্রশাসেনর অনুমতি পত্র ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
সরে জমিনে দেখা গেছে, নতুন রুমানা পাড়াঘেঁষা পূর্ব-দক্ষিণে বিশাল জায়গাজুরে জঙ্গল কেটে পুড়ে দিয়েছে। ছোট- বড় তিনটি পাহাড় কেটে কাজ করছে অবৈধ ইটভাটার প্রস্তুতি। বিশাল জায়গায় এসব পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি ভরাট হয়ে তিনটি ছড়ার পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটা স্থাপনের পাহাড় কাটার দৃশ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থান পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ের পাদদেশ থেকেও সহজে লক্ষ্য করা যায়। যে কেউ গেলে এ দৃশ্য দেখতে পাবেন।
রুমা উপজেলায় ৩৫৮নং রুমা মৌজা ও রুমা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়াডের নতুন রুমানাপাড়া ও বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়াডের দুপপানিছড়াপাড়া- জারুছড়ির সীমান্তবর্তীর এই ইটভাটার অবস্থান
সরে জমিনকালে রুমানা পাড়ার বাসিন্দা নলতিলির বম বলেন ইটভাটা স্থাপনের কারণে শুধুমাত্র পাহাড় কেটে মাটি ভরাট দিয়ে ছড়ায় পানি উৎসের প্রবাহ বন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
ভাটায় ইট পোড়াতে লাখ লাখ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হবে। মণে মাত্র পঞ্চাশ টাকায় লাকড়ি সরবরাহ করতে হবে বলে ইটভাটার পক্ষের লোকজন পাড়াবাসীকে জানিয়েছে।
কম টাকায় আগামী পাঁচ বছরে এতো লাকড়ি সংগ্রহ করে নেয়া হলে পাড়ার রিজার্ভ বন সহ আশপাশের এলাকায় কোনো স্থানে গাছ আর থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। একই বসতবাড়ি তৈরি সামগ্রী হিসেবে গাছ- বাঁশ পাওয়া যাবেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ভানরাম বম বলেছেন- ইটভাটার তৈরিতে পাহাড় কাটা ও পাড়া রিজার্ভ থেকে লাকুড়ি গাছ কাটা নিয়ে পাড়াবাসীর মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে দুভাগে বিভক্ত। বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে চাপাচাপির কারণে ইটভাটা তৈরিতে কেউ আর কিছু বলছে না। তবে পাড়াবাসীর মধ্যে এ বিভক্তি ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
সরে জমিনকালে আরো জানা গেছে ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিকদের থাকার ঘর তৈরিতে পাড়ার লোকজনকে কাজ করিয়েছে। তবে একমাস সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের শ্রমের মজুরি দেয়নি ইটভাটা মালিক মিলন ঠিকাদার। এ অভিযোগ পাড়াবাসীর।
ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক ভাটায় ইট পোড়ানোর ধাপের কেলিং কাজ করছে। ইটগুলোতে লেখা আছে( বিএমএফ/ ইগঋ)। তবে এ অর্থ বলতে পারেনি সাইটের কেরানি দিদারুল ইসলাম কতজন শ্রমিক কাজ করছেন, এ প্রশ্নে আমান উল্লাহ বলেছেন- শুরুতে ৫০/৬০জন ছিলো। ম্যানেজার ও লেবার মাঝি শ্রমিকদের পাওনা মজুরি টাকা না দেয়ায় অনেকজন চলে গেছে। তাদের মধ্যে কারোর বাড়ি লামা উপজেলা আর নোয়াখালী।
শ্রমের টাকা খবর কি, একথায় সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যায় শ্রমিক শাহরিয়ার ও আব্দুল্লাহ। তাদের বাড়িও নোয়াখালি। শ্রমিকরা জানায় প্রতি রাউন্ডে এক মাথে তিন লক্ষ ইট পোড়ানো যাবে।
তাই লাকড়ি অনেক লাগবে।
সরে জমিনে হাটতে হাটতে ইটভাটায় দেখা হয় নতুন রুমানা পাড়ার প্রধান কাপঙির বম কারবারী সঙ্গে। তিনি জানান ইটভাটা করার জন্য প্রতি বছরে ৪০ হাজার পাঁচশত টাকায়
বান্দরবানের মিলন কন্ট্যাক্টরের সাথে চুক্তি হয়েছে। চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে স্বাক্ষরের পর ওই চুক্তি পত্র এখনো পাড়াপ্রধান কাপঙির বমকে দেননি ঠিকাদার মিলন। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা ছাড়পত্রের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ঠিকাদার মিলন বলেন অন্যান্য জায়গায় যেভাবে ইটভাটা হয়, সেভাবে করছি। বান্দরবানের নিয়মকানুন তো সবাই জানেন, একথা বলে এরিয়ে যান । তবে শিশু শ্রমিক যদি থেকে থাকে, তাদের চলে যেতে বলবেন,
এ কথা জানিয়েছেন মিলন ঠিকাদার।
বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ইনস্পেক্টর আব্দুস সালাম বলেন রুমায় ইটভাটা কোনো অনুমতি নেই, যদি কেউ করে থাকে, তা ভেঙ্গে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসাইন বলেছেন- ইটভাটার স্থাপনের কথা শুনেছি। ইটভাটা পরিদর্শন করে বৈধ কাগজপত্র কিংবা প্রশাসেনের অনুমতি পত্র আছে কিনা তা দেখে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন