যত ছোট চরিত্র হোক, কৌতুক অভিনয় সহজ কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে মানুষকে হাসানো যে কোনো কাজের চেয়ে বেশ কঠিন। একজন বিরস মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। অথচ আমাদের চলচ্চিত্রে এক সময় এমন সব দক্ষ কৌতুকশিল্পী ছিলেন যে তাদের সংলাপ শোনার প্রয়োজন পড়ত না, নাম শুনলেই মনে অজান্তে মুখে হাসি চলে আসত। আর তাদের অভিনয় দেখলে তো পেটে খিল ধরে যেত। কৌতুক অভিনেতারা কখনো কখনো নায়কের চেয় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। কৌতুক অভিনয় এতটাই আকর্ষণীয় যে কখনো কখনো নায়কও কৌতুক অভিনয় করে থাকেন। সারাবিশ্বের চলচ্চিত্রে তা দেখা যায়। একটা সময় আমাদের চলচ্চিত্রে অবিস্মরণীয় কৌতুক অভিনেতা ছিলেন। এখন সেই মাপের কৌতুক শিল্পীও নেই, চলচ্চিত্রেও কৌতুক চরিত্র দেখা যায় না, কৌতুক শিল্পী উপহার দেয়ারও কোনো পদক্ষেপ নেই। বলা যায়, চলচ্চিত্র থেকে কৌতুক শিল্পীর চরিত্র হারিয়ে গেছে। আমাদের চলচ্চিত্রের প্রাথমিক লগ্ন থেকে যে সকল কৌতুক অভিনেতা তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে সাইফুদ্দীন, আশীষ কুমার লৌহ, রবিউল, আনিস, খান জয়নুল, আলতাফ, হাসমত, মতি, দিলদার, বø্যাক আনোয়ার এদের সকলেই এখন পরলোকগত। সবশেষ চলে গেলেন শক্তিমান কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদ ও আনিস। কোনোরকম ভাঁড়ামো নয়, বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক অঙ্গভঙ্গি, ডায়লগ এবং এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে দর্শককে এক ধরনের নির্মল আনন্দদানে তারা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। চরিত্র রূপায়ণের মাধ্যমে দর্শক মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তারা। এমনকি আমজাদ হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, সুভাষ দত্তের মতো বিখ্যাত নির্মাতারাও সিনেমার পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। এ টি এম শামসুজ্জামান একটা সময় খল অভিনেতা হিসেবে পর্দায় উপস্থিত হতেন। এরপর তিনি এই কৌতুক চরিত্রটিকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ দর্শককে নির্মল বিনোদন এই চরিত্র দিয়েই দেওয়া সম্ভব। হুমায়ূন ফরীদিও মাঝে মাঝে খল চরিত্র থেকে বেড়িয়ে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন। নব্বই দশক পর্যন্ত আমাদের চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতাদের অবস্থান এবং কদর ছিল জমজমাট। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ছিল তাদের। তখন টেলি সামাদ ও দিলদারকে নায়ক করে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের অভিনীত সিনেমা সুপারহিট হয়েছে। অথচ বর্তমান সময়ে সিনেমার এই অতি প্রয়োজনীয় চরিত্রটি উধাও হয়ে গেছে। সিনেমায় আগের মতো দেখা যায় না কোন কৌতুক অভিনেতাকে অথবা কোন কৌতুকেরদৃশ্য। কঠিন কোনো বিষয়কে গুরুগম্ভীর না করে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারলে তা দর্শকহৃদয়ে সহজে পৌঁছে যায়। মানুষ বিনোদন পেতে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যায়। কৌতুক হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। কৌতুক ছাড়া সিনেমা পূর্ণতা পেতে পারে না। এখনকার দর্শক বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আগের মতো আলাদা করে কৌতুক দেখে না। তাছাড়া কৌতুকের মতো কঠিন একটি কাজ সহজে সব শিল্পী আয়ত্তে আনতেও পারে না। ফলে এই চরিত্রে কেউ বেশিদিন টিকতে পারছে না। এখন অন্য চরিত্রের চেয়ে নায়ক-নায়িকা হওয়ার প্রতি সবার ঝোঁক বেশি। এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে বলে অনেকে আলাদা করে কৌতুকের দৃশ্য বা কৌতুকশিল্পী নিতে চায় না। তবে এ কথা মানতেই হবে যে- দর্শককে পূর্ণ বিনোদন দিতে কৌতুক বা কৌতুক অভিনেতার বিকল্প নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন