এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গতকাল রোববার সকাল থেকে মা মাছের ডিম দেখা যায়। এর আগে গত শনিবার থেকেই নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছিল। ডিম সংগ্রহকারীরা পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ব্যাপক খুশি।
জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলে শনিবার হালদা নদীর জোয়ারের পানি বেশি হওয়ায় আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মা মাছের ডিমের নমুনা দেখা দেয়। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আবার জোয়ার হলে মা-মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়ে দেয়। এ খবরে ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে হালদা নদীতে নেমে পড়ে।
সাধারণত মুষলধারে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন এবং পাহাড়ি ঢলের স্্েরাতে হালদায় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। অথবা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বৃষ্টি হলে হালদায় ডিম পাওয়া যায়। কিন্তু এবার দেখা যায় ব্যতিক্রম। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার মাঝামাঝিতে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হওয়ায় মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। নদীর মাছুয়া ঘোণা, অঙ্কুরি ঘোণা, নাপিতের ঘাট, আজিমের ঘাট, পুরাকপালী, নয়াহাট, পুলিশ ফাঁড়িরমুখসহ বিভিন্ন স্পট থেকে ডিম সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
এই মৌসুমে প্রথম দফা মা-মাছ ডিম দিয়েছে। এক হাজার নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদায় নেমে আনুমানিক দশ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। আগামী পূর্ণিমা ও অমাবস্যার তিথিতে আবারও মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। মধ্যরাতেও হালদাতে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। এখন রেণু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত ডিম আহরণকারীরা। এই ডিম আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বিক্রি করা হবে বলে জানান তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুর কিবরিয়া জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার হালদা নদীতে মা মাছের ডিমের সংখ্যা কম। ২০১৮ সালে ডিমের পরিমাণ পাওয়া গেছে ২২ হাজার ৮০০ কেজি ৬০ গ্রাম। এবার ডিমের পরিমাণ মিলেছে আনুমানিক ১০ হাজার কেজি।
তিনি আরও জানান, গত শনিবার কোনো অমাবস্যা বা কোন পূর্ণিমার তিথি ছিল না। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল পেয়ে মা মাছগুলো ডিম ছেড়ে দেয়। গত বছরের তুলনায় এবার ডিম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, হালদা নদীর উভয় পাড়ে নদী ভাঙন রোধে পাথরের বøক বসানোর কারণে মা মাছের ডিম দেয়ার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাছাড়া এবার কোনো তিথি ছাড়া ডিম দিয়েছে, ফলে এবারের ডিমের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিন রাত হালদা নদীর পাড়ে অবস্থান করে ডিম সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখেন। তিনি জানান, ডিম সংগ্রকারীদের সুবিধার্থে হালদার পাড়ে আরো কয়েকটি মৎস্য হ্যাচারি নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম জানান, এবার হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়বে এমন আশা নিয়ে পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার জন্য প্রহর গুণছিল ডিম সংগ্রহকারীরা। এখন ডিম সংগ্রহ করতে করে ডিমসংগ্রহকারীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে, ইনশাআল্লাহ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ডিম হতে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন