হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ হয়রানি চরমে পৌঁছেছে। সাধারণ যাত্রী থেকে ভিআইপি কেউ এ হয়রানি থেকে বাদ যাচ্ছেন না। শত শত যাত্রীর প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে লাগেজ গয়েব হয়ে যাচ্ছে। লাগেজ কেটে ও তালা ভেঙ্গে তল্লাশী করে নিয়ে যাচ্ছে মুল্যবান সামগ্রী। শুধু বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তা নয়, দেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার সময়ও লাগেজ কেটে অনেক যাত্রীর মূল্যবান সামগ্রী গায়েব করে দেয়া হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে তার গন্তব্যে গিয়ে বুঝতে পারছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ কেটে বা তালা ভেঙ্গে মালামাল লুট করা হয়েছে। তখন তাদের আর কিছু করার থাকছে না। এ হয়রানির পাশাপাশি যথাযথ ও তড়িৎ ব্যবস্থার অভাবে প্রায়ই ঘন্টার পর ঘন্টা লাগেজের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকতে হয় বিদেশ ফেরত যাত্রীদের।
বিমানবন্দরে অন্তত অর্ধশত লাগেজ কাটা পার্টি সক্রিয় রয়েছে। তাদের এই অপকর্মে বিমানবন্দরের কয়েকটি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মচারীও জড়িত রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অনেকের ধারণা। বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে অন্তত দুই-তিন’শ লাগেজ হারানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এর বিপরীতে হাতেগোনা কিছু লাগেজ পাওয়া গেলেও অধিকাংশেরই হদিস মেলে না। অথচ বিমানবন্দরের গোডাউন ছাড়িয়ে বহির্গমনের সর্বত্র লাগেজের স্তুপ।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান নিয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃৃপক্ষ আয়োজিত গণশুনানিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ডেস্কে অসহযোগিতার পাশাপাশি লাগেজ নিয়ে নানারকম ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন সাধারন যাত্রীরা। এসময় লাগেজ কাটা, লাগেজ সময় মতো না পাওয়া, হারানো লাগেজ ফিরে পেতে হয়রানি ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন যাত্রীরা। কিন্তু এর পরেও কোন অগ্রগতি নেই এসব অব্যবস্থাপনার। লাগেজ থেকে দুর্বৃত্তরা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পারফিউম, মোবাইল ফোনের অ্যাকসেসরিজ, চকলেট, ঘড়ি, ক্যামেরাসহ অসংখ্য মূল্যবান সামগ্রী কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, কুয়ালালামপুর, ব্যাঙ্কক, হংকং, দিল্লী এমনকি কলকাতায়ও একই সময়ে লাগেজ ডেলিভারি পাওয়া যায়। এর বিপরীতে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে সমসংখ্যক লাগেজ ডেলিভারি দিতে সময় লাগছে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
জনৈক যাত্রী অভিযোগ করেন যে, সম্প্রতি তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতায় যান। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে নির্দিষ্ট বেল্টে যখন লাগেজ হাতে পান তখন তিনি অবাক। তার লাগেজের মধ্যে একটির তালা ভাঙ্গা ও অন্যটি কাটা। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ঘটনাটি ঘটেছে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানেই তাদের লাগেজের তালা ভেঙ্গে ও কেটে তল্লাশী করা হয়েছে। মূল্যবান কিছু না থাকায় নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, লাগেজ বিমানে উঠার আগে যদি এভাবে কেটে ও তালা ভেঙ্গে তল্লাশী করা হয়, তা হলে এটা একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যে চক্র এ কাজের সাথে জড়িত তারা লাগেজের ভেতরে কোন মাদক, অস্ত্র বা কোন নিষিদ্ধ বস্তু ঢুকিয়ে দিতে পারেন। পরে অন্য দেশের বিমানবন্দরে গিয়ে ধরা পড়ার পর কি অবস্থা দাড়ায় তা চিন্তা করারও বাইরে।
তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনায় যে শুধু ব্যক্তির ক্ষতি হয় তা নয়, দেশের ইমেজও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি।
জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারী থাইল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ ভাঙ্গা পার্টির কবলে পড়েন হেনা হোসাইন নামে এক নৃত্যশিল্পী। লাগেজ কাটা চক্র তার ব্যাংকক থেকে শপিং করা মূল্যবান আইপ্যাড ও দামি মেকআপ বক্সসহ অনেক কিছু নিয়ে গেছে। এ ধরনের অভিযোগ বিস্তর।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এপিবিএনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দরের লাগেজ কাটা চক্রগুলোকে ধরতে নানা কৌশল নেয়া হয়েছে। লাগেজ হয়রানি চরে েেপৗঁছেছে। লাগেজ কাটা চক্রকে সহযোগিতা করছে বিমানবন্দরেই কর্মরত অসাধু পুলিশ, কাস্টম ও সিভিল এভিয়েশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। দীর্ঘদিন ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ চক্র সক্রিয় আমরা এদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন