এবারের বিশ্বকাপে রান-বন্যার প্রত্যাশা করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই। দলগুলো তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়বে অহরহ। বাংলাদেশের হয়ে স্কোরবোর্ডে ৩০০ প্লাস রান তোলার ভিতটা গড়ে দেবেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। তবে ইনিংসের শেষদিকে গিয়ে মূল কাজটা সারতে হবে লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদেরই। আর ডেথ ওভারে দ্রুত রান তোলার এই দায়িত্বটা বুঝে নিতে তৈরি সাব্বির রহমান।
হার্ডহিটার হিসেবে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন সাব্বির। উইকেটে নেমেই বল পিটিয়ে মাঠছাড়া করার দক্ষতা রয়েছে তার। বিশ্বকাপেই সেই দক্ষতারই পূর্ণ চিত্রায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করছেন ২৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। গতকাল আইসিসি ওয়েবসাইটের কাছে সাব্বির জানান, ‘আমার কাজ থাকবে ৬, ৭ কিংবা ৮ নম্বরে ব্যাটিং করা। আমি দ্রুত রান তুলে খেলতে পছন্দ করি। বিশ্বকাপে সে কাজটাই করব। শেষ ওভারগুলোতে বেশি বেশি রান তুলে দলের স্কোর বড় করতে মুখিয়ে আমি। বাংলাদেশের ইনিংসে বাড়তি গতি আনতে চাই আমি।’
নিজের দায়িত্বটা সহজ করতে উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের কাছে সাহায্য চাইছেন সাব্বির। বিশেষ করে দেশসেরা ওপেনার এবং গেল চার বছর ধরে অতিমানবীয় ফর্মে থাকা তামিম ইকবালের কাছে। তামিম বড় ইনিংস খেললে লেজের দিকে নেমে মারমুখী ব্যাটিং করার রসদ পেয়ে যাবেন তিনি, এমনটাই ভাবছেন সাব্বির, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি তামিম লম্বা সময় ধরে উইকেটে থাকবেন। এই ধরুন, ৪০ ওভার পর্যন্ত। আর যদি উইকেট ভালো হয়, আমি স্কোরটাকে আরও বড় করতে পারব।’
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাব্বিরের স্ট্রাইক রেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার উপরে আছেন কেবল সৌম্য সরকার (৯৯.৯৩)। সাব্বিরের স্ট্রাইক রেট ৯১.৫১। ২০১৪ সালে অভিষেক হওয়ার পর ৬১ ওয়ানডে খেলে ১ হাজার ২১৯ রান করেছেন তিনি। তার নামের পাশে রয়েছে ১ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফসেঞ্চুরি।
এই লড়াইয়ে সাব্বিরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মোসাদ্দেক হোসেনকেও। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেওয়ার সময় এই লড়াই হয়তো অনুমিত ছিল না নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের। শেষের দিকে ঝড় তোলা আর ফিনিশারের ভূমিকায় নেওয়া হয়েছিল সাব্বিরকে। একাদশে তার জায়গাও ধরে নেওয়া হয়েছিল অনেকটা নিশ্চিত। মোসাদ্দেককে নেওয়া হয়েছিল বেশ কিছুর বিকল্প ভাবনা হিসেবে। মেহেদী হাসান মিরাজ যদি কার্যকর না হন, কিংবা কাঁধের চোটের কারণে মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত যদি বোলিং করতে না পারেন, কিংবা মিডল অর্ডারে কেউ যদি চোটে পড়েন, এমন অনেক কিছুই। সমীকরণটা বদলে দিয়েছেন মোসাদ্দেক। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন সাব্বির। সেই ম্যাচেই সাতে নেমে ২৭ বলে ৫২ রানের ম্যাচ জেতানো এক অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন মোসাদ্দেক। তার ব্যাট থেকে সেদিন ছক্কা এসেছিল ৫টি।
ওই ম্যাচের পর টিম ম্যানেজমেন্টর ভাবনায় বদল যদি নাও আসে, অন্তত তাদেরকে নাড়া দিতে পেরেছেন মোসাদ্দেক। বিস্ফোরক হিসেবে তার পরিচিতি না থাকলেও জানান দিতে পেরেছেন যে কাজটা প্রয়োজনে পারবেন তিনি। আর বোলিংয়ে তো তিনি সাব্বিরের চেয়ে অনেকটা এগিয়েই। সব মিলিয়ে পজিশনের বিবেচনায় এখনও হয়তো এগিয়ে আছেন সাব্বিরই, তবে মোসাদ্দেকও বিবেচনায় থাকছেন প্রবলভাবে। লড়াইটাও তাই জমে উঠেছে বেশ।
সেই লড়াইয়ের আঁচ স্পর্শ করছে এই দুজনকেও। এমনিতে মাঠের বাইরে দুজনের সম্পর্ক দারুণ। জায়গা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাস্তব। পাশাপাশি দাঁড়িয়েই দুজনকে কথা বলতে হলো এই লড়াই নিয়ে। উত্তাপটা টের পাচ্ছেন সাব্বির। বুঝতে পারছেন লড়াইটা কঠিন। নিজের জায়গা ধরে রাখতেও তিনি প্রত্যয়ী, ‘সবসময় কঠিন পরিস্থিতিতেই আমি খেলেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েই খেলেছি। এবারও কাজটা সহজ হবে না আমার। তবে চেষ্টা করব নিজের যেটা করার আছে, শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব ও সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব।’
সাব্বিরের যতটা হারানোর ভয়, মোসাদ্দেকের ততটাই সুযোগ প্রাপ্তির। হারানোর আছে তার সামান্যই। তিনি তাই কেবল মন দিতে চান নিজের কাজটাতেই, ‘সেভাবে চিন্তা করছি না (সাব্বিরের সঙ্গে জায়গার লড়াই)। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমি চাই না যে কেউ খারাপ করুক আর আমি আসি। সবার আগে বাংলাদেশ দল। সবাই ভালো করুক, দল ভালো করুক। আমার সুযোগ আসবে আমি ভালো করার চেষ্টা করব।’
দুজনের লড়াইয়ের ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটিও। সেই ম্যাচে পারফর্ম করলে যেমন সাব্বিরের জায়গা নিশ্চিত হয়ে যাবে, তেমনি তিনি ব্যর্থ হলে ও মোসাদ্দেক দারুণ কিছু করলে বদলে যেতে পারে চিত্র। আপাতত দুজনেরই অপেক্ষা সুযোগের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন