গত নিবন্ধে আমরা ইতিকাফের পরিচয়, গুরুত্ব, তার মহান উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনা করেছিলাম। এই নিবন্ধে ইতিকাফের প্রকারভেদ ও মাসআলা ও মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব। ইতিকাফ তিন প্রকার। যথা- ১. ওয়াজিব ইতিকাফ, ২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ, ৩. নফল ইতিকাফ।
১. ওয়াজিব ইতিকাফ : যা মান্নত করার কারণে ওয়াজিব হয়। সে ইতিকাফ অবশ্যই পালন করতে হবে।
২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ : যা রমজানে (লাইলাতুল কদরের সওয়াব অর্জনের জন্য) শেষ ১০ দিন করা হয়। তা আমাদের প্রিয় নবী সা. ও সাহাবায়ে কেরামগণ করেছেন।
৩. নফল ইতিকাফ : নফল ইতিকাফের কোনো নির্ধারিত সময় নেই। যে কোনো মাসের যে কোনো দিনের যে কোনো সময় তা করা যায়। আর এই ইতিকাফকেই নফল ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফের কিছু জরুরি মাসআলা
১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ যেহেতু শেষ দশ দিনব্যাপী, তাই প্রথম থেকেই পুরো দশ দিনের ইতিকাফের নিয়ত করে নিতে হবে। একসাথে দশ দিনের নিয়ত না করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ আদায় হবে না; বরং তা নফলে পরিণত হবে।
২. বিশ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে পৌঁছা জরুরি। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪২)।
৩. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরি। কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
৪. ইতিকাফ অবস্থায় প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাও বলা যাবে। মোবাইলে কারো সাথে আলাপ করা যাবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়; এতে ইতিকাফের মাহাত্ম্য নষ্ট হয়ে যায়।
৫. ডাক্তাররা প্রয়োজনে চিকিৎসাপত্র লিখে দিতে পারবেন। তবে বিনিময় নিতে পারবেন না।
৬. মসজিদের মুয়াজ্জিন যদি ইতিকাফ করেন, আর আজানের জায়গা যদি মসজিদের বাইরে হয় তাহলে বাইরে গিয়ে তার জন্য আজান দেয়া জায়েজ। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪৫)।
৭. ইতিকাফকারী নফল অজুর জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে।
৮. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ শুরু করলে তা পূর্ণ করা জরুরি। ওজর ব্যতীত তা ভাঙা জায়েজ নয়।
৯. পুরুষরা মসজিদে ও নারীরা ঘরে নামাজের স্থানে ইতিকাফ করবে। নারীদের ঘরে নামাজের জায়গা নির্দিষ্ট না থাকলে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নেবে। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪০-৪৪১)।
১০. শরঈ মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ সহীহ হয় না। শরঈ মসজিদ পাঞ্জেগানা হোক বা জামে মসজিদ হোক উভয়টিতেই ইতিকাফ বিশুদ্ধ হবে।
১১. মল-মূত্র ত্যাগ, অজু ও ফরজ ও সুন্নত গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১২)। স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। স্বাভাবিক গোসল না করলে খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি হলে মসজিদের ভেতর বসে মাথা বের করে দিয়ে মাথায় পানি ঢালবে। তাতেও সমস্যা না কাটলে অজু-ইস্তিঞ্জার জন্য যখন মসজিদ থেকে বের হবে, আসার পথে যদি পানির ব্যবস্থা থাকে, অতিদ্রুত গোসল সেরে নেবে। শুধু গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ হবে না।
১২. পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো উভয়ই নাজায়েজ।
নারীদের ইতিকাফ
১. নারীরা তাদের ঘরের নামাজের স্থানে ইতিকাফ করবে। নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারিত না থাকলে ইতিকাফের কয়েক দিন আগ থেকে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে একটি জায়গাকে নামাজের জায়গা হিসেবে নির্দিষ্ট করে নেবে। এরপর সেখানে ইতিকাফ করবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১, আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪০-৪৪১)।
২. নারীরা ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থান ঘরের অন্য কোথাও যাবে না। অন্যত্র গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
৩. নারীদের ইতিকাফ স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে হতে হবে। স্বামীর নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ইতিকাফ করলে ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১)।
৪. নারীদের পিরিয়ড (ঋতু) অবস্থায় ইতিকাফ করা শুদ্ধ নয়। কারণ, পিরিয়ড শুরু হলে রোজা রাখা যায় না; অথচ সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরি। তাই তাদের জন্য উচিত পিরিয়ডের দিনগুলোর শুরু-শেষের দিকে লক্ষ রেখে ইতিকাফ করা। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১)।
ইতিকাফকারী কিভাবে সময় কাটাবে?
ইতিকাফের সময়গুলো তাসবীহ-তাহলীল ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে। কিছু দ্বীনী মাসআলা-মাসায়িলের কিতাবাদি পড়াশোনা করা যেতে পারে। সেগুলো পড়ে অন্যকে শোনানো যেতে পারে। বেশি বেশি কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত করা, কুরআনের অর্থ বোঝা ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অনুধাবন ইত্যাদিতে সময় কাটানো যেতে পারে। ইতিকাফ অবস্থায় একদম চুপ থাকা মাকরূহ তাহরীমী। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন