বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইতিকাফে মাবুদের সান্নিধ্য লাভের অপূর্ব সুযোগ-২

মাওলানা মুহাম্মাদ শুয়াইব | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ২৮ মে, ২০১৯

গত নিবন্ধে আমরা ইতিকাফের পরিচয়, গুরুত্ব, তার মহান উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনা করেছিলাম। এই নিবন্ধে ইতিকাফের প্রকারভেদ ও মাসআলা ও মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব। ইতিকাফ তিন প্রকার। যথা- ১. ওয়াজিব ইতিকাফ, ২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ, ৩. নফল ইতিকাফ।
১. ওয়াজিব ইতিকাফ : যা মান্নত করার কারণে ওয়াজিব হয়। সে ইতিকাফ অবশ্যই পালন করতে হবে।
২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ : যা রমজানে (লাইলাতুল কদরের সওয়াব অর্জনের জন্য) শেষ ১০ দিন করা হয়। তা আমাদের প্রিয় নবী সা. ও সাহাবায়ে কেরামগণ করেছেন।
৩. নফল ইতিকাফ : নফল ইতিকাফের কোনো নির্ধারিত সময় নেই। যে কোনো মাসের যে কোনো দিনের যে কোনো সময় তা করা যায়। আর এই ইতিকাফকেই নফল ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফের কিছু জরুরি মাসআলা
১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ যেহেতু শেষ দশ দিনব্যাপী, তাই প্রথম থেকেই পুরো দশ দিনের ইতিকাফের নিয়ত করে নিতে হবে। একসাথে দশ দিনের নিয়ত না করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ আদায় হবে না; বরং তা নফলে পরিণত হবে।
২. বিশ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে পৌঁছা জরুরি। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪২)।
৩. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরি। কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
৪. ইতিকাফ অবস্থায় প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাও বলা যাবে। মোবাইলে কারো সাথে আলাপ করা যাবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়; এতে ইতিকাফের মাহাত্ম্য নষ্ট হয়ে যায়।
৫. ডাক্তাররা প্রয়োজনে চিকিৎসাপত্র লিখে দিতে পারবেন। তবে বিনিময় নিতে পারবেন না।
৬. মসজিদের মুয়াজ্জিন যদি ইতিকাফ করেন, আর আজানের জায়গা যদি মসজিদের বাইরে হয় তাহলে বাইরে গিয়ে তার জন্য আজান দেয়া জায়েজ। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪৫)।
৭. ইতিকাফকারী নফল অজুর জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে।
৮. সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ শুরু করলে তা পূর্ণ করা জরুরি। ওজর ব্যতীত তা ভাঙা জায়েজ নয়।
৯. পুরুষরা মসজিদে ও নারীরা ঘরে নামাজের স্থানে ইতিকাফ করবে। নারীদের ঘরে নামাজের জায়গা নির্দিষ্ট না থাকলে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নেবে। (আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪০-৪৪১)।
১০. শরঈ মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ সহীহ হয় না। শরঈ মসজিদ পাঞ্জেগানা হোক বা জামে মসজিদ হোক উভয়টিতেই ইতিকাফ বিশুদ্ধ হবে।
১১. মল-মূত্র ত্যাগ, অজু ও ফরজ ও সুন্নত গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১২)। স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। স্বাভাবিক গোসল না করলে খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি হলে মসজিদের ভেতর বসে মাথা বের করে দিয়ে মাথায় পানি ঢালবে। তাতেও সমস্যা না কাটলে অজু-ইস্তিঞ্জার জন্য যখন মসজিদ থেকে বের হবে, আসার পথে যদি পানির ব্যবস্থা থাকে, অতিদ্রুত গোসল সেরে নেবে। শুধু গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ হবে না।
১২. পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো উভয়ই নাজায়েজ।
নারীদের ইতিকাফ
১. নারীরা তাদের ঘরের নামাজের স্থানে ইতিকাফ করবে। নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারিত না থাকলে ইতিকাফের কয়েক দিন আগ থেকে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে একটি জায়গাকে নামাজের জায়গা হিসেবে নির্দিষ্ট করে নেবে। এরপর সেখানে ইতিকাফ করবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১, আদ্দুরুল মুখতার ২/৪৪০-৪৪১)।
২. নারীরা ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থান ঘরের অন্য কোথাও যাবে না। অন্যত্র গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
৩. নারীদের ইতিকাফ স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে হতে হবে। স্বামীর নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ইতিকাফ করলে ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১)।
৪. নারীদের পিরিয়ড (ঋতু) অবস্থায় ইতিকাফ করা শুদ্ধ নয়। কারণ, পিরিয়ড শুরু হলে রোজা রাখা যায় না; অথচ সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরি। তাই তাদের জন্য উচিত পিরিয়ডের দিনগুলোর শুরু-শেষের দিকে লক্ষ রেখে ইতিকাফ করা। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১১)।
ইতিকাফকারী কিভাবে সময় কাটাবে?
ইতিকাফের সময়গুলো তাসবীহ-তাহলীল ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে। কিছু দ্বীনী মাসআলা-মাসায়িলের কিতাবাদি পড়াশোনা করা যেতে পারে। সেগুলো পড়ে অন্যকে শোনানো যেতে পারে। বেশি বেশি কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত করা, কুরআনের অর্থ বোঝা ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অনুধাবন ইত্যাদিতে সময় কাটানো যেতে পারে। ইতিকাফ অবস্থায় একদম চুপ থাকা মাকরূহ তাহরীমী। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২১৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Hossin Belal ২৮ মে, ২০১৯, ২:৫৪ এএম says : 0
রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির সুমহান বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে মাহে রমজান আসে প্রতি বছর। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর জন্যই পবিত্র রমজানের পুরো মাস সিয়াম পালন করা ফরজ। মাহে রমজানের মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে কদর রাতপ্রাপ্তির সুনিশ্চিত প্রত্যাশায় সর্বোপরি মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের জন্য রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফকে সুন্নাত করা হয়েছে।
Total Reply(0)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ২৮ মে, ২০১৯, ২:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বলেন: যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে (মাকামে ইব্রাহিম) নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেয়ো না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো মানুষের জন্য, যাতে তারা তাকওয়া লাভ করতে পারে। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ১৫/১৫, আয়াত: ১২৫, মঞ্জিল: ১, পারা: ১ আলিফ লাম মিম, পৃষ্ঠা: ২০/১৮)।
Total Reply(0)
জহির মাসুম ২৮ মে, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 0
ইতিকাফ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই সবার উচিত যথানিয়মে ইতিকাফ করা।
Total Reply(0)
মো রিয়াজুল ইসলাম ২৮ মে, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 0
ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদাত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়।
Total Reply(0)
সীমান্ত ঈগল ২৮ মে, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 1
নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন