সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে কদরের ফজিলত

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পুরো রমজান মাসেই শবে কদরের তালাশে থাকা উচিত। রমজানের প্রত্যেকটি রাত যদি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো যায়, তবে শবে কদর অবশ্যই ভাগ্যে মিলবে বলে আশা করা যায়। আর তা সম্ভব না হলে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে জিকির-আজকার, নফল নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে যদি কাটানো যায়, তবে শবে কদর মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এটা সম্ভব না হলে, অন্তত এই রাতগুলোতে যেন এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। এতে আশা করা যায়, শবে কদরের ফজিলত থেকে মাহরুম হতে হবে না। কারণ, হাদিস মতে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সমতুল্য। আর যদি বেজোড় রাতগুলো পূর্ণভাবে ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করার সুযোগ না হয়, তবে অন্তত ২৭ তারিখের রাতের গুরুত্ব দেয়া এবং পুরো রাত ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা দরকার।

শবে কদরের প্রধান ফজিলত কোরআনের সূরা কদরেই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে বুখারী শরীফে একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, ইসলামী বিধান মনে করে এবং তা সওয়াবের প্রত্যাশায়, তবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ অপর হাদিসে আছে, ‘হযরত জিব্রাইল আ. কদরের রাতে একদল ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং নামাজে বা অন্য কোনো ইবাদতে নিয়োজিত বান্দাদের জন্য দোয়া করেন।’

অন্য আরেক হাদিসে আছে, রাসূল সা. বলেন, এই মহান বরকতময় রাত তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত, সে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হলো। (ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ এ রাতে যার ইবাদতে কোনো অংশ নেই, তার মতো হতভাগ্যও আর কেউ নেই। শবে কদরের মহত্ত¡ এ একটি বিষয় হতেও পরিষ্কার হয় যে, এ রাতেই কোরআন নাজিল হয়। তাই এ রাতের মর্যাদা অপরিসীম।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. একদা রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করেন, শবে কদর যদি কখনো আমি পাই, তবে কোন দোয়াটি আমি আল্লাহর নিকট করব? তিনি বলেন, তুমি এই দোয়াটি পাঠ করবে। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ, হে আল্লাহ আপনি অসীম ক্ষমাশীল, ক্ষমা আপনার পছন্দ। অতএব, আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। (তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)।

মুফতিয়ে আজম আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ শফী রহ. বলেন, এ পবিত্র রজনীকে শুধু জুলুস এবং ওয়াজ মাহফিলে কাটিয়ে শুয়ে পড়া বড়ই অকল্যাণকর। ওয়াজ মাহফিল তো প্রত্যেক রাতে হতে পারে। ইবাদতের এই মূল্য ফিরে আসে না। হ্যাঁ, যেসব ব্যক্তি সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগি করার হিম্মত করে, তারা রাতের প্রথম ভাগে কিছু ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ করে নফল ইবাদত ও তাওবা-ইস্তেগফারে লিপ্ত হতে পারে।

শবে কদর অথবা শবে বরাতের অতিরিক্ত খানাপিনার আয়োজন করা কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আর এ প্রচলন আমাদের সালফে সালেহিনের মধ্যেও ছিল না। যদি কেউ শবে কদরের আলামত পেয়ে থাকে, তবে সে যেন তা গোপন রাখে এবং ইখলাসের সাথে ভালো করে দোয়া করে।

শবে কদর উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত কিংবা নামাজ কোনো নির্ধারিত রাকাতের উল্লেখ নেই। যতটুকু সম্ভব সারা রাত জাগ্রত থেকে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া দুরুদ ও তাওবা-ইস্তেগফারে লিপ্ত থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Abu Syed ১ জুন, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। শবে কদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১ জুন, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে পৃথিবীতে। আ্ল্লাহ আমাদের এই রাতকে ভাগ্যে লিখে দাও।
Total Reply(0)
জিন্নাতারা ১ জুন, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
কোরআনের সংস্পর্শে একটি সাধারণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ রজনীর সম্মানে বিভূষিত হয়েছে। কোরআনের সঙ্গে যার যতটুকু সম্পর্ক ও সংস্পর্শ থাকবে, তিনি ততটুকু সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং তাঁর খাস ব্যক্তি। (বুখারি শরিফ)। ‘যার অন্তরে কোরআনের সামান্যতম অংশও নেই, সে যেন এক বিরান বাড়ি।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১ জুন, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২)।
Total Reply(0)
Ferog Khan ১ জুন, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
হে মহান রব্বুল আলামীন আপনি আমাদের কে মাহে রমজানের শেষ দশকের মধ্যে শবেকদর পেতে ও নবী করিম (সা:)এর সুন্নাহ পালনে সহায়তা করুন।যাহাতে আমরা রমজানের শেষ দশকের মধ্যে,২১,২৩'২৫'২৭ ও ২৯রমজানের মধ্যে যেন শবেকদর খুঁজে পাই,এই রাত্রিতে আপনি আমাদের জীবনের সকল প্রকার গুনাহ মাফ করে আবার নতুন করে জীবন যাপন করতে সহায়তা প্রদান করেন। আমিন
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ১ জুন, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরী কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরূদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।
Total Reply(0)
Mijanur Rahman Joni ১ জুন, ২০১৯, ৯:৫৫ এএম says : 0
লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত একটি রজনী। লাইলাতুল কদরের অন্য নাম শবে কদর। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে পৃথিবীতে।
Total Reply(0)
Nizam Uddin ১ জুন, ২০১৯, ৯:৫৬ এএম says : 0
কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে আলাদা একটি সূরা অবতীর্ণ করেন। কেবল কোরআন নয় বরং হাদিসেও কদরের ফজিলত রয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে।
Total Reply(0)
Hasan Amir ১ জুন, ২০১৯, ৯:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কুরআন ও সুন্নায় ঘোষিত মর্যাদাবান রাত লাইলাতুল কদরে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে পরকালের কামিয়াবি ও জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির তাওফিক দান করুন। বিগত জীবনের গোনাহ মাফে আল্লাহর দরবারে কান্না ও রোনাজারি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Jahid Hasan ১ জুন, ২০১৯, ১০:০০ এএম says : 0
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে শবে কদরের কল্যাণ লাভ করার তাওফিক দিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন