সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সত্যালোকের সন্ধানে-২

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর হাদিস সকল যুগেই সংরক্ষিত ছিল। অবশ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ছিল বিভিন্ন। প্রথম যুগে অর্থাৎ সাহাবিদের আমলে হাদিস স্মৃতিতে ধারণ করে সংরক্ষণ করা হতো। তারপর লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। (ফাতহুল বারী : খন্ড ১, পৃ. ১৬৮)। তবে, হাদিস শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় ও বিবরণ অতি প্রশস্ত ও বিশাল। সৃষ্টজগতে এমন কোনো বিষয় বা বস্তু নেই, যার মূলকথা কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় না। সে হিসেবে হাদিসের শ্রেণী অনেক। হাদিস শাস্ত্রের বিরাট একটি অংশ জুড়ে আছে বিভিন্ন বিষয়ের উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত। কিছু হাদিসে শরীয়তের বিধিবিধান বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদিসে বিভিন্ন রকম দোয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসের কিছু অংশ জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর ও আখেরাতের বর্ণনা দখল করে আছে।
কতিপয় হাদিস আছে ফজিলত সম্পর্কে। কিছু হাদিস কিয়ামতের নিদর্শন, ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য ঘটনাবলি ও ভবিষ্যদ্বাণীর বিবরণ রয়েছে। কিছু হাদিসে পৃথিবীর বিভিন্ন ফিতনা, বিপর্যয়ের উল্লেখ, কিছু হাদিসে নিয়ম-কানুন, শিষ্টাচার, কিছু হাদিসে মরণের পর বরযখ জীবনের বিবরণসমূহ স্থান পেয়েছে। কিছু হাদিস মানুষের পারস্পরিক অধিকার, আচার-বিচার ও দন্ডবিধির বিষয় আলোচনা করেছে।

সারকথা হলো এই যে, হাদিস শাস্ত্রে জীবন ও জগতের এবং দ্বীন ও ঈমানের পরিপূর্ণ বিরাট অংশ বর্ণিত হয়েছে। যারা হাদিস অস্বীকার করে তারা আল্লাহপাকের ওহিকে অস্বীকার করে। হাদিসও ওহি। শরীয়তের ভাষায়া যাকে ওহিয়ে গায়রে মাতলু বলা হয়। সুতরাং কোরআন ও হাদিস অস্বীকারকারীদের মুসলমান বলার কোনোই সুযোগ নেই, বরং তারা কাফের। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানা যায় যে, হিজরী তৃতীয় শতকে কুখ্যাত ওয়াসিল বিন আতা কর্তৃক মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রকাশ ঘটে। তাদের মতাদর্শের সাথে আহলুল সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শের কোনোই মিল নেই। মুতাজিলীরা তাদের জ্ঞানে উপলব্ধি করতে না পেরে ইসলামবহির্ভূত পন্থায় হাদিসকে প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। (মিজানুল ইতিদাল : খন্ড ১, পৃ. ২১ এবং ইনকারে হাদিসকে নাতায়েজ : পৃ. ৩৩)।

সর্বপ্রথম ধর্মচ্যুত মুতাজিলা সম্প্রদায়। কতিপয় যুক্তিতর্ক ও মনগড়া সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে খবরে ওয়াহিদের হুজ্জত হওয়া অস্বীকার করে। অথচ খবরে ওয়াহিদ হুজ্জাত হওয়া সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য দলিল বর্তমান রয়েছে। এর দিকে নজর না দিয়ে মুতাজিলা ও বর্তমান বিশ্বের হাদিস অস্বীকারকারীগণ ইসলামের সাথে সম্পর্কহীনতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ প্রবণতার জন্যই হাদিস অস্বীকার করে থাকে। তাদের মধ্যে যারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলো- আবদুল্লাহ চাখারলভী, হাফিজ আসলাম জিয়াজপুরী, নিয়াজ ফতেহপুরী, ডা. গোলাম জিলানী বোরক, ডা. আহমদ দীন, কুখ্যাত মাশরেকী ও গোলাম আহমদ পারভেজ।
এসব ব্যক্তি ইসলাম হতে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং তাদের ও তাদের অনুসরীদের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে আছে। এসব ব্যক্তি ও তাদের অনুসারীদের ভ্রান্ত মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে পথভ্রষ্টতা ও অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ‘খোদ গোমরাহ আস্ত কাছেরা রাহবরী বুনাদ।’ অর্থাৎ, তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট, অন্যদের কী পথ দেখাবে? আল্লামা হাযেমী ‘আল উজালা’ নামক গ্রন্থে স্পষ্টতই বলেছেন, ইলমে হাদিস জীবন ও জগতের সকল বিষয়কেই শামিল করে, যার সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। তার প্রতিটি অংশ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইলম বা বিষয়ের মর্যাদা রাখে। কোনো অনুসন্ধিৎসু সারা জীবন ব্যয় করেও এর শেষ সীমায় পৌঁছতে পারবে না। (তদরীরুর রাবী : খন্ড ১, পৃ. ১৯-২০)।

হাদিস অস্বীকারকারীদের ধৃষ্টতা এতখানি বেড়ে যে, তারা কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য করার ওজুব ও অপরিহার্য হওয়াকেও অস্বীকার করে বসে, তারা বলে, ‘রাসূল হিসেবে নবী করিম সা.-এর আনুগত্য করা সাহাবাদের ওপরও ওয়াজিব ছিল না। আমাদের ওপরও ওয়াজিব নয়। আবার তারা কখনো বলে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর বাণী সাহাবিদের জন্য হুজ্জত হলেও আমাদের জন্য হুজ্জত ও দলিল নয়।
আবার কখনো বলে, হাদিস সকল মানুষের হুজ্জত, কিন্তু হাদিস সংরক্ষিত নেই, নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে হাদিস আমাদের নিকট পৌঁছেনি। (ইনকারে হাদীসকে নাতায়েজ : পৃ. ৩২)। মূলত তাদের এ সকল কথার শেষ পরিণতি ও লক্ষ্যস্থল হলো, হাদিস কোনো হুজ্জত নয়। এমনকি বর্তমানে উপস্থিত ও সংরক্ষিত হাদিসের কিতাবগুলোও আমলযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত হাদিস অস্বীকারকারীদের নিকট নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণের জন্য বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য কোনো দলিল নেই। তাদের যা আছে, তা হলো কিছু না হক সন্দেহ ও ধোঁকাবাজি; যা তারা উপস্থাপন করে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মনির হাসান ৮ জুন, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
হাদিস ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় অপরিহার্য প্রামাণিক মূূল ভিত্তি। যা ওহীর শ্রেণীভূক্ত। হাদিসকে ওহীয়ে 'গায়রে মাত্বল' বলা হয়। স্বয়ং আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন -" মা ইয়ান্ত্বিক্বু আনিল হাওয়া ইন হুয়া ইল্লা ওয়াহয়ু ইউহা"। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে থেকে কিছু বলেন নি ওহী বা ঐশী প্রত্যাদেশ ব্যতীত। ( সূরা জম-৩১)
Total Reply(0)
হাবিবুর ৮ জুন, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
ইসলামের যাবতীয় মৌলনীতি কোরআন দ্বারা নির্ধারিত। আর হাদিস সে মৌলিক নীতিমালাকে ভিত্তি করে প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
Total Reply(0)
গুলাম ৮ জুন, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
পবিত্র ক্বোরআনে প্রায় পাঁচশো আয়াতে, সালাত সাওম,হজ্জ্ব যাকাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে হুকুম আহকাম ও মৌল নীতিমালাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো বাস্তবায়ন ও পালনের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয় নি।
Total Reply(0)
বাকের ভাই ৮ জুন, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
আল্লাহ তা' লার হুকুম ও নির্দেশনা মোতাবেক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কথা ও কাজের মাধ্যমে তথা স্বীয় জীবনে এ সকল হুকুম আহকাম বাস্তবায়ন করে এর পালন পদ্ধতি নিজ অনুসারীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আলোচনার মাধ্যমে এর বিশদ বিবরণ প্রদান করত কোরআনের উপর আমল করার পথ সুগম করে দিয়েছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন