পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এবার যারা হজব্রত পালনে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেয়া, স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহসহ হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি হজ পালনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে হজ প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে হজ বিষয়ক প্রয়োজনীয় বইপুস্তক কিংবা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
সারা জীবনের আশা-আকাক্সক্ষা ও লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় একেবারে ঘনিয়ে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি যেভাবেই আপনি হজে যান না কেন, হজ অফিস থেকে আপনাকে অবগত করাবে। আপনিও খবর রাখার চেষ্টা করবেন।
যেহেতু হজ ফ্লাইট খুব নিকটে, তাই আপনার ফ্লাইটের সময়সূচি আগেভাগেই নিশ্চিতভাবে জেনে নেবেন। ফ্লাইটের অন্তত এক সপ্তাহ আগে নিম্নের সামগ্রীগুলো সংগ্রহ করুন- ১. গলায় ঝুলিয়ে ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ। যাতে পাসপোর্ট, টিকিট, হজের বই ও প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যায়। ২. ভিসার কপি। কারণ, সৌদি সরকার হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। এই ভিসা পাসপোর্টের সঙ্গে লাগানো থাকে না। কাগজে প্রিন্ট করে দেয়। ফলে হজযাত্রীদের এটি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। আগে পাসপোর্টের সঙ্গে ভিসা লাগানো থাকত বলে আলাদা করে ভিসা সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো না। বিমানের টিকিট, প্রয়োজনীয় রিয়াল বা ডলার। চার-পাঁচ হাজার টাকা, যা দিয়ে হজ পালন শেষে বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে যাওয়া যায়। ছবি ও ঠিকানা সংবলিত পাসপোর্টের প্রথম দুই পৃষ্ঠা, ভিসা ও টিকিটের ফটোকপি করে দু-তিন জায়গায় রাখুন। অনেক সময় প্রয়োজন হয়। ৩. ইহরামের কাপড় ২-৩ সেট। একটু মোটা হলে সতর ঢাকতে সুবিধা হয়। ইহরামের কাপড় সাদা ও সুতি হওয়া ভালো। আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের পিস নিচে পরার জন্য, আর তিন গজের পিস গায়ের চাদরের মতো ব্যবহারের জন্য। একটি হাজীবেল্ট রিয়াল রাখার জন্য।
৪. মেয়েরা বোরকা, সালোয়ার-কামিজ ও ব্যবহারের কাপড় প্রয়োজন অনুযায়ী নেবেন। মার্জিত ঢিলেঢালা বোরকা ব্যবহার করবেন। সাদা বোরকা জরুরি নয়, বরং তা তাড়াতাড়ি ময়লা হয়। মিনায় পর্দা করার জন্য বড় চাদর ও গায়ে দেয়ার পাতলা কাঁথা নেবেন। যদি হোটেলে থাকেন তাহলে কাঁথা নেয়ার দরকার নেই। হোটেল থেকে কম্বল সরবরাহ করবে। ৫. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, টুপি, গামছা ও রুমাল প্রয়োজন অনুযায়ী নিন। ৬. বিছানার চাদর, মেসওয়াক, পেস্ট ও ব্রাশ, গুঁড়া সাবান, গোসলের সাবান, শ্যাম্পু, ছোট ছাতা। আরামদায়ক ও মজবুত স্যান্ডেল ২-৩ জোড়া, জুতার ব্যাগ, কিছু সুতলি, কয়েক গজ নাইলনের রশি, সাদা কাগজ, কলম ও ডায়েরি। ৭. প্লেট, গ্লাস, চামচ ও দস্তরখান, সুগন্ধিমুক্ত তেল ও ভ্যাসলিন নিন। ৮. তায়াম্মুমের জন্য মাটি নিন।
৯. রেজারসহ ব্লেড ৫টি, নেইলকাটার, ছোট চাকু, ছোট আয়না ও কাঁচি, সুচ, সুতা, সেফটিপিন নিন। লৌহজাত দ্রব্যাদি মনে করে বিমানে বড় ব্যাগে দেবেন, সঙ্গে রাখবেন না। ১০. নির্ভরযোগ্য কোনো আলেম ও মুফতির লিখিত হজের কিতাব, মুনাজাতে মকবুল সঙ্গে রাখুন। ১১. একটি হাওয়াই বালিশ ও শীত হলে শীতের কাপড় নিন। ১২. একটি বড় দামি ও মজবুত ট্রলিব্যাগ ও প্লেনের কেবিন বক্সে ঢোকার উপযোগী হাতব্যাগ এবং মিনায় ব্যবহারের জন্য একটি ছোট (পিঠে ব্যবহার উপযোগী) ব্যাগ নিন। ১৩. মাথাব্যথা, ঠন্ডা, জ্বর, কাশি, বমি, পেট খারাপ, আমাশয় ও ডায়াবেটিসের ওষুধ। এ ছাড়া খাওয়ার স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, ইনসুলিন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিন। ১৪. মোবাইল চার্জার, মাল্টিপ্ল্যাগ ও জামা আয়রনের ছোট একটি ইস্ত্রিও সঙ্গে নিতে পারেন। ১৫. অল্প কিছু শুকনা খাবার ও পছন্দের কোনো বিস্কুট ইত্যাদি নিতে পারেন। ১৬. লাগেজের ওপরে নাম-ঠিকানা ইংরেজিতে লিখুন। কী কী লিখতে হবে এজেন্সির কাছ থেকে জেনে নেবেন। সাধারণত নাম-ঠিকানা ও পাসপোর্ট নম্বর লেখা হয়।
উপরোল্লিখিত তালিকা একটি ধারণামাত্র। এসব কিছু আপনি আপনার প্রয়োজন, অভ্যাস ও রুচিমাফিক কমবেশ করতে পারেন। মনে রাখবেন, মক্কা-মদিনায় এসব কিছুই পাওয়া যায়। প্রয়োজনে সেখান থেকেও ক্রয় করতে পারেন। এসব জিনিসি বড় লাগেজে দিয়ে হাতব্যাগে এক সেট ইহরামের কাপড়, মেয়েদেরও এক সেট কাপড়, কিছু শুকনা খাবার, গামছা, মেসওয়াক, কলম, টিসু ও জরুরি ওষুধ রাখবেন। অনেক সময় লাগেজ পেতে বিলম্ব হয়, তাই এই বাড়তি সতর্কতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন