শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কোরআনে ‘হিকমাত’ শব্দের ব্যবহার ও দিকনির্দেশনা-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্বে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত যাদেরকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, তাদেরকে তিনি হিকমাতও দান করেছিলেন। তারা কিতাব ও হিকমাত সহযোগে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে সর্বাত্মকভাবে কাজ করেছেন। তা ছাড়া তিনি কিছু কিছু পছন্দনীয় বান্দাদেরকেও হিকমাত দানে সৌভাগ্যবান করেছেন। এখনো করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এই ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। এদের মধ্যে হযরত লুকমান হাকিমের নাম প্রাতঃস্মরণীয়। তাকেও আল্লাহপাক হিকমাত প্রদান করেছিলেন। আল কোরআনে তার বিবরণ বিবৃত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি লুকমানকে হিকমাত দান করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা করে নিজেরই জন্য এবং কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। (সুরা লুকমান : আয়াত ১২)। উল্লেখ্য, হযরত লুকমান একজন অতি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান এবং ধর্মভীরু ব্যক্তি ছিলেন।

তার পরিচয় সম্পর্কে নিম্নোল্লিখিত বর্ণনাগুলো পাওয়া যায়। যথা- ক. তিনি হযরত দাউদ আ.-এর সমসাময়িক একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি ফাতওয়া প্রদান করতেন। খ. তিনি আবিসিনিয়ার অধিবাসী একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস ছিলেন। গ. কেউ কেউ বলেছেন, তিনি একজন নবী ছিলেন। ঘ. প্রাচীন আরবী উপাখ্যানে তিনজন লুকমানের উল্লেখ পাওয়া যায়।

তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল লুকমান হাকিম। হযরত উল্লিখিত আয়াতে তারই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ কোরআন বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি নবী ছিলেন না, একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। কেননা, আল কোরআনে বিবৃত তার নসিহতগুলোর সর্বত্রই হিকমাতের রূপ-রস-গন্ধে ভরপুর।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কিতাব ও হিকমাত স্মরণ রাখার জন্য তাগিদ করেছেন। এ বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, যার প্রতিফলন এভাবে ঘটেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী পত্নীগণ), আল্লাহর আয়াত এবং হিকমাতের কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, আল্লাহ অতি সূ²দর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৪)। পিয়ারা নবী সা. প্রাণপ্রিয় পতœীগণকে যে সকল সদুপদেশ দিতেন তা সবই ছিল হিকমাতের নূরে নূরান্বিত ও সমুজ্জ্বল। এর প্রবাহধারা সারা বিশ্বকে চিরকাল সত্য পথ ও মতের স্রোতধারায় প্লাবিত ও বিমোহিত করতে থাকবে।

হযরত ঈসা আ.-এর ৩৩ বছরের জীবনে ও কর্মে-হিকমাতের নূরানী আবা সর্বত্রই মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছিল। আল কোরআনে এর বিশ্লেষণ এভাবে করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করল, যে বলেছিল, আমি তো তোমাদের নিকট এসেছি হিকমাত ও প্রজ্ঞাসহ এবং তোমারা যে বিষয় মতভেদ করছ, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আমাকে অনুসরণ করো।’ (সূরা যুখরুফ : আয়াত ৬৩)।

এই পৃথিবীতে আল্লাহপাকের পক্ষ হতে বহু হিকমাত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান ও সতর্কবাণী এসেছে। এর দ্বারা মানুষ কোনো ফায়দা বা উপকারিতা লাভ করেনি। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে তাই বিব্রত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তা পরিপূর্ণ হিকমাত ও জ্ঞান, তবে এই সতর্কবাণী তাদের কোনো উপকারে আসেনি।’ (সূরা কামার : আয়াত ৫)। সুতরাং এই শ্রেণীর লোকদের উপেক্ষা করে চলাই শ্রেয়।
পরিশেষে মহান রাব্বুল ইজ্জত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা এভাবে প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদের একজনকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, সে তাদের নিকট তার আয়াত আবৃত্তি করে তাদের পবিত্র করে, এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়, ইতিঃপূর্বে তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে ছিল।’ (সূরা জুময়া : আয়াত ২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Faysal Mahmud ৬ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪৩ এএম says : 0
হিকমত হল হালাল বিষয়টাই আরো সুন্দরভাবে সম্পাদন করা। হিকমত হল দুটি হালাল কাজের মাঝে অপেক্ষাকৃত উত্তমটি ও উপযোগীটা বাছাই করা। (একটি হালাল আর একটি হারাম থেকে হারামটি বাছাই কোনদিনও হিকমত না!!)
Total Reply(0)
LIAQUAT ALI ৬ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে প্রজ্ঞা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। কুরআনকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে জ্ঞান ও হিকমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
BulBul ৬ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪৪ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা যাকে কিছু শিখিয়ে দেন বা দান করে তাও হিকমতপূর্ণ এবং যাকে কোনো জ্ঞান বা শিক্ষা হবে বঞ্চিত রাখেন তাও তাঁর হিকমত। মহান রাব্বুল আলামিন প্রজ্ঞাময় এবং ন্যাবিচারক।
Total Reply(0)
Najir ahammed ৬ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪৪ এএম says : 0
ইমাম মালিক রহঃ বলেন- “হিকমতের অর্থ আমার বুঝে যা আসে তা হল এটা আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে পান্ডিত্য। আর এটা মহান স্বীয় দয়া ও করুনার দ্বারা মানুষের অন্তরে ঢেলে দেন।” (ইবনে কাছীর)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন