দোয়া কবুলের সুন্নত বা হুজুরে আকরাম সা.-এর শেখানো কৌশল নিয়ে আমরা গত নিবন্ধে আলোচনা করেছিলাম। ওই নিবন্ধে আমরা দোয়া কবুলের ৫টি সুন্নত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিভাবে ফরিয়াদ করলে আল্লাহ কবুল করেন, এ বিষয়ে আজ আরো কয়েকটি সুন্নত নিয়ে আলোচনা করা হলো।
৬. দুই হাত তুলে চাওয়া : রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ খুব লজ্জাশীল, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যখন আল্লাহর নিকট দুই হাত তুলে কিছু চায়। তখন সেটা যদি তার জন্য কল্যাণকর হয় তবে আল্লাহ্ তা তাকে দেন। আর যদি তা তার জন্য কল্যাণকর না হয় তবে আল্লাহ্ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। ফলে তাকে কিছু না কিছু দিয়েই থাকেন।’ (আবু দাউদ)। তাই বুঝা গেল হাত তুলে দোয়া করা অতি লাভজনক, হাত তুলে দোয়া করলে কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। এটা দিনে রাতে যেকোনো সময় করা যাবে। হাদিসে কোনো সময়কে নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি আবার সবার সাথে সম্মিলিতভাবেও করতে বলা হয়নি। তাই যেকোনো সময় একাকী হাত তুলে নিজের চাওয়াটা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবেন।
৭. সিজদায় গিয়ে চাওয়া : রাসূল (সা.) বলেন, সিজদার সময় বান্দা তার রবের সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব, ওই সময় তোমরা সাধ্যমতো বেশি বেশি দোয়া করো। (মুসলিম, মিশকাত : ৮৯৪, অনুচ্ছেদ-১৪)।
৮. ইসমে আজমসহ দোয়া করা : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হুল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ’। (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করছি; কেননা তুমি আল্লাহ। তুমি একক ও মুখাপেক্ষীহীন। যিনি কাউকে জন্ম দেননি ও যিনি কারো থেকে জন্মিত নন এবং যাঁর সমতুল্য কেউ নেই)।
জনৈক ব্যক্তিকে এটা পড়তে শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওই ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে তাঁর ‘ইসমে আযম’ (মহান নাম)সহ দোয়া করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম সহকারে প্রার্থনা করবে, তাকে তা দেয়া হবে। আর যখন এর মাধ্যমে দোয়া করা হবে, তা কবুল করা হবে।’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৭ ‘দোয়া’ অধ্যায়-৩৪, ‘আল্লাহর ইসমে আযম’ অনুচ্ছেদ-৯; আবুদাউদ হা/১৪৯৩; ‘আওনুল মা’বূদ হা/১৪৮২-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
অর্থাৎ এই দোয়া পড়ার পর নিজের চাহিদা আল্লাহর কাছে জানাবে। এতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার দোয়া কবুল করে নেবেন ইনশাআল্লাহ।
আমরা দুনিয়াবি কোনো কাজকর্মে সফল হওয়ার জন্য যত উপায় উপকরণ থাকে, প্রায় সবটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রেও যদি আমরা সব রকমের চেষ্টা-প্রচেষ্টা কাজে লাগাই আর হাল ছেড়ে না দিই, তবে আশা করা যায়, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সব দোয়াই কবুল করে নেবেন ইনশাআল্লাহ আর হাল ছেড়ে দিলে কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দোয়া কবুল করেন না।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয়, যদি সে দোয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন, দোয়াতে তাড়াহুড়া হলো, প্রার্থনাকারী বলে আমি তো দোয়া করলাম, কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন