ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত। (সহীহ বুখারী)। কোরআনুল কারীমের এক আয়াতের তেলাওয়াত একশত রাকাত নফল নামাযের চেয়ে উত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয় সে ঘরে আল্লাহ তাআলা অনেক কল্যাণ ও বরকত নাযিল করেন। যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয় না সে ঘরে কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয় না। -মুসনাদে বাযযার
অন্য এক হাদীসে আছে, কোরআন তেলাওয়াতকারী প্রতি হরফে দশটি করে নেকী পায়। আমি এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম সবগুলো মিলে এক হরফ; বরং আলিফ এক হরফ, লাম এক হরফ, মীম আরেক হরফ। -সুনানে দারেমী, ফাযায়েলে আ’মাল
আরেক হাদীসে আছে, যে অন্তরে কোরআনের কিছু অংশও নেই সে অন্তর যেন অনাবাদ ঘর। -সুনানে দারেমী, ফাযায়েলে আ’মাল
কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কীয় আরও অনেক হাদীস আছে। বিস্তারিত ফজিলত জানতে চাইলে ফাযায়েলে কোরআন পড়–ন। কোরআন তেলাওয়াতের এত ফযীলত থাকতে আমরা কোরআন বাদ দিয়ে অন্যান্য যিকিরকে অযীফা বানিয়ে নিয়েছি। কোরআন তেলাওয়াত জানি না বা তেলাওয়াত করলাম না এর জন্য কোনো দুঃখ হয় না। কিন্তু যিকির ছুটে গেলে আফসোসের অন্ত থাকে না।
কোরআনের অর্থ বোঝাও জরুরি: কোরআনুল কারীমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআন বুঝে কোরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য সমগ্র মানবকুলকে আহ্বান জানিয়েছেন। এসব আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, প্রতিটি মানুষ কোরআনের ওপর গভীর চিন্তা-গবেষণা করুক এটাই কোরআনের দাবি। কাজেই কোরআন সম্পর্কিত চিন্তা-গবেষণা কিংবা পর্যালোচনা করা শুধু আলেম, ইমাম, মুজতাহিদগণেরই একক কাজ নয়, বরং তা সকল মুসলমানের কাজ।
অবশ্য জ্ঞান-বুদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ের মতোই চিন্তা-গবেষণা এবং পর্যালোচনারও বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ইমাম, মুজতাহিদগণ গবেষণা করে একটি আয়াত থেকে বহু মাসআলা উদ্ভাবন করবেন। ওলামায়ে কেরাম চিন্তা-গবেষণা করে এসব বিষয় উপলব্ধি করবেন। আর সাধারণ মুসলমানগণ নিজের ভাষায় কোরআনের তরজমা অনুবাদ পড়ে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন। তাতে মনের ভেতর আল্লাহ তাআলার মহত্ত¡ ও বড়ত্বের উপলব্ধি এবং তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এটাই হলো সফলতার মূল চাবি-কাঠি।
সাধারণ মুসলমানের জন্য ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য পর্যায়ক্রমে কোনো বিজ্ঞ আলেমের কাছে কোরআন পাঠ করা উত্তম। তা সম্ভব না হলে কোনো নির্ভরযোগ্য তাফসীর অধ্যয়ন করবে। কোনো জটিলতা বা সংশয় দেখা দিলে নিজের মনমতো কোনো সমাধান করবে না; বরং বিজ্ঞ কোনো আলেমের সাহায্য নেবে।-মাআরেফুল কোরআন : ২৬৮
কোরআন বোঝা জরুরি: যে মুসলমান আপাতত কোরআনের অর্থ না বুঝেও তেলাওয়াত করে সে শব্দের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে অর্থ বোঝার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। যাতে প্রতিটি মুসলমান কোরআনের সত্যিকার নূর ও বরকত প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং কোরআন অবতরণের আসল উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। মাআযাল্লাহ, কোরআনকে তন্ত্র-মন্ত্র মনে করে কেবল ঝাড়-ফুঁকে ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত।
না বুঝে তেলাওয়াত করলেও সওয়াব হয়: নিঃসন্দেহে কোরআনের অর্থ বোঝার গুরুত্ব অপরিসীম। এর অর্থ এই নয়, না বুঝে পড়লে কোনো সওয়াব নেই। কারণ, কোরআন দুনিয়ার আর সব গ্রন্থের মতো নয়- কোরআনের অর্থ যেমন উদ্দেশ্য তেমনি শব্দও একটি বড় উদ্দেশ্য। কোরআনের অর্থের যথাযথ হেফাযত ও সংরক্ষণ যেমন অতীব জরুরি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি এর শব্দের হেফাযত ও সংরক্ষণও জরুরি। কেননা, কোরআনের শব্দের সাথেও বিশেষ বিশেষ বিধি-বিধান সম্পৃক্ত রয়েছে। শব্দের যথাযথ হেফাজতের জন্যই হলো তেলাওয়াত।
হাদীসে তেলাওয়াতেরও অনেক সওয়াব বর্ণিত হয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কেরাম কোরআন অনুযায়ী আমল করার জন্য একবার বুঝে বুঝে পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট হওয়া সত্তে¡ও সারাজীবন তেলাওয়াতকে অন্ধের যষ্টি মনে করতেন। কোনো কোনো সাহাবী প্রতিদিন এক খতম তেলাওয়াত করতেন। আবার কেউ দু-দিনে, তিনদিনেও খতম করায় অভ্যস্ত ছিলেন। সপ্তাহে এক খতম করার রীতি তো সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ব্যাপকভাবেই প্রচলিত ছিল। আর বছরে একবার করে খতম করতে না পারা তো ছিল একান্তই দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। এসব আলোচনা থেকে এ কথাই সুস্পষ্ট যে, কোরআনের ব্যাপারে এ কথা বলা একেবারেই সঙ্গত নয়, অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মতো শব্দ পাঠ করা নিরর্থক।
আমাদের দেশের কথিত কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ কোরআনকে অন্যান্য গ্রন্থের সঙ্গে তুলনা করে দাবি করেন, না বুঝে কোনো গ্রন্থের শব্দাবলি পড়া ও পড়ানো একেবারেই নিরর্থক ও বৃথা কালক্ষেপণ বৈ কিছুই নয়। কোরআন সম্পর্কে তাদের এই ধারণা নিতান্তই ভুল। কারণ, শব্দ ও অর্থ উভয়টির সমন্বিত আসমানীগ্রন্থের নামই কোরআন। কোরআনের অর্থ বোঝা ও তার বিধি-বিধান পালন করা যেমন ফরয ও উচ্চস্তরের ইবাদত, তেমনিভাবে তার শব্দ তেলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। -মাআরেফুল কোরআন : ৬৪
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন