বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মকবুল হজের ফজিলত

মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ৩০ জুলাই, ২০১৯

হজ পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয় : আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। -সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ৮১১।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৫২১।
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, আতা ইবনে ইয়াসার রাহ. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ করে, হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৮৮১৭; তাফসিরে ইবনে কাসীর ১/৩৫৮।

আমর ইবনুল আস রা. বর্ণনা করেন, (দীর্ঘ এক হাদিসে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ) পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়। -সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১২১।

হজে মাবরূরের প্রতিদান হলো জান্নাত : আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৭৭৩।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা হজ ও উমরা পরপর একত্রে পালন করো। কেননা এ দু’টি (হজ ও উমরাহ) দারিদ্র্য ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর হজে মাবরূরের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ৮১০।

জাবির রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হজে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, হজের সদাচার কী? তিনি বললেন, খানা খাওয়ানো এবং উত্তম কথা বলা (অর্থাৎ অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগ করা)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, খানা খাওয়ানো ও বেশি বেশি সালাম করা (সালামের বিস্তার ঘটানো)। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৪৪৮২ ।

সর্বোত্তম আমল হজে মাবরূর : হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজে মাবরূর বা কবুল হজ। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ২৬।

মায়িয রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, এক আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনা। তারপর জিহাদ করা। অতঃপর কবুল হজ অন্যান্য আমল হতে এত উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ যেরূপ সূর্যের উদয়াচল হতে অস্তাচলের ব্যবধান। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৯০১০।

এ সম্পর্কিত অন্য একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে আবাসা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অতঃপর এমন দু’টি আমল, যা অন্য সকল আমল হতে শ্রেষ্ঠ। তবে যে ব্যক্তি তার অনুরূপ আমল করে তা ব্যতীত মকবুল হজ অথবা মকবুল উমরা। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭০৭। মকবুল হজের আরো অনেক ফজিলত হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ায় এই নিবন্ধে তিনটি ফজিলত সম্পর্কেই আলোচনা করা হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মাহিন আদনান ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মোটেই মুখাপেক্ষী নন।’
Total Reply(0)
Abdul Alim Emon ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর আদায় কর, কেননা এ দুটি কাজ দারিদ্র্য ও গুনা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন বেত লোহার মরিচা এবং সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ।
Total Reply(0)
মোঃ জামান হোসেন জন ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
হজ উম্মতে মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। তাঁর কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয় আর হজের ঐতিহাসিক কার্যক্রম মুসলিম উম্মাহর জন্য মূলত ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, যা বর্তমান মুসলিমের জন্য অনুকরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। হজ এমন একটি ইবাদত, যার অসিলায় মানব জীবনের গুনাসমূহ মাফ হয় আর মকবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। সে লক্ষ্যে হজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)
Farhad Aziz Kiron ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
হজের মাধ্যমে গোটা মুসলিম ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। কাবা চত্বর লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় এবং একত্রে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
Mst Saleha Khanom ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত বৈষম্য দূরীভূত করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়; যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হজ যেহেতু গোটা মুসলিম উম্মাহর এক মহামিলন কেন্দ্র, এ উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির সব শ্রেণির মানুষ পবিত্র কাবায় এসে সমবেত হয়। এ সুবর্ণ সুযোগে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বশান্তি স্থাপন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করতে প্রয়াস পায়, যা এ অশান্ত পৃথিবীতে বর্তমান সময়ের দাবি বিধায় হজের গুরুত্ব সমকালীন সংকট নিরসনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া হজ সম্পাদনের কারণে পারস্পরিক খোঁজখবর নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সব হাজীর মধ্যে জাগ্রত হয়।
Total Reply(0)
Shamaun Iqbal Shamun ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
হজপালন করার সৌভাগ্য আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ অনুগ্রহ। শুধু অর্থ-সম্পদ ও শারিরীক সামর্থ্য থাকলেই হজপালনের সৌভাগ্য হয় না। তার পরও যাদের সৌভাগ্যে হজের সুযোগ ঘটে তাদের উচিৎ মাবরূর হজ পালনের চেষ্টা করা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন