বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মকবুল হজের ফজিলত-২

মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মকবুল হজের আলোচনা করতে গিয়ে গত নিবন্ধে আমরা তিনটি ফজিলত উল্লেখ করেছিলাম। আজ আরও কয়েকটি ফজিলত নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব।

নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জিহাদ হলো হজ ও উমরাহ : উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরূর। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ১৫২০।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে- আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরূর। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর হতে আমি হজ ছাড়িনি। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ১৮৬১।

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- বৃদ্ধ, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো হজ ও উমরা। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯৪৫৯। হুসাইন বিন আলী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমি ভীরু ও দুর্বল (জিহাদে যাওয়ার শক্তি-সামর্থ্য নেই)। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি অস্ত্র ও শত্রæর সাথে লড়াইবিহীন জিহাদ-হজ পালন করতে এসো।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৮৮০৯।

হজ ও উমরাকারীর দোয়া কবুল করা হয় : জাবির রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- হজ ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেয়া হয়।-মুসনদে বাযযার, হাদিস : ১১৫৩; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস : ৫২৮৮। ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী (গাজী), হজ ও উমরা আদায়কারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা দোয়া করলে দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেয়া হয়।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩।
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তিন প্রকারের লোক আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি : গাজী, হজ ও উমরাকারী।- ৩৬৯২; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৩।

হাজীদের গুনাহ মাফ হয় এবং তারা যাদের গুনাহ ক্ষমা চায় তাদেরকে মাফ করা হয় : আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালা হাজীদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং হাজী যাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন, তাদেরকেও ক্ষমা করেন। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১৬৫৪। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ ও উমরাকারীগণ যখন দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯২; সুনানে নাসায়ী, ৫/১১৩।

হজ ও উমরার জন্য খরচ করার ফজিলত : আয়েশা রা. হতে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করার সময় তাকে তার উমরা সম্পর্কে বলেছেন, তুমি তোমার পরিশ্রম ও খরচ অনুপাতে নেকি পাবে। মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ১৭৭৬। আয়েশা রা. হতে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি তোমার উমরার সওয়াব তোমার খরচ অনুপাতে পাবে।-মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ১৭৭৭।

বুরাইদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- হজের জন্য খরচ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতোই, যার সওয়াব সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।-মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩০০০। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হজ হলো আল্লাহর রাস্তা। তাতে (আল্লাহর রাস্তায়) এক দিরহাম খরচের সওয়াব সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।-তবারানী, আউসাত, হাদিস : ৫৬৯০। জাবির রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন- কোনো হজকারী ব্যক্তি নিঃস্ব হয় না। জাবের রা.কে ইমআর শব্দের উদ্দেশ্য কী জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, অভাব-অনটন। -মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১০৮০।

ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- হজে গমনকারী ব্যক্তির উট চলার পথে যখনই পা উঠায় এবং পা রাখে এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা ওই হজকারীদের জন্য সওয়াব লিখে দেন। অথবা তার একটি করে গুনাহ মুছে দেন অথবা তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Arshad ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
যারা আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের ওপর সারা জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করাই ইসলামের পরিভাষায় হজ।
Total Reply(0)
হৃদয় ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
হজ উম্মতে মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। তাঁর কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয় আর হজের ঐতিহাসিক কার্যক্রম মুসলিম উম্মাহর জন্য মূলত ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, যা বর্তমান মুসলিমের জন্য অনুকরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
হজ এমন একটি ইবাদত, যার অসিলায় মানব জীবনের গুনাসমূহ মাফ হয় আর মকবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। সে লক্ষ্যে হজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
হজের মাধ্যমে গোটা মুসলিম ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। কাবা চত্বর লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় এবং একত্রে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত বৈষম্য দূরীভূত করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়; যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)
জিন্নাতারা ১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
জ যেহেতু গোটা মুসলিম উম্মাহর এক মহামিলন কেন্দ্র, এ উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির সব শ্রেণির মানুষ পবিত্র কাবায় এসে সমবেত হয়। এ সুবর্ণ সুযোগে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বশান্তি স্থাপন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করতে প্রয়াস পায়, যা এ অশান্ত পৃথিবীতে বর্তমান সময়ের দাবি বিধায় হজের গুরুত্ব সমকালীন সংকট নিরসনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া হজ সম্পাদনের কারণে পারস্পরিক খোঁজখবর নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সব হাজীর মধ্যে জাগ্রত হয়।
Total Reply(0)
পাবেল ১ আগস্ট, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন