শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ফজিলত

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে-পরে যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করি, এগুলোর ফজিলতও অনেক। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলো জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত। -জামে তিরমিযী : ৪১৪।
এ ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা তো আমরা অবশ্যই আদায় করব, পাশাপাশি কিছু নফলেরও অভ্যাস করি। অন্য কোনো নফল পড়তে না পারলেও অন্তত ইশরাকের দুই রাকাত, জোহরের দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার পর দুই রাকাত, মাগরিবের পর আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। আমরা কত সময় অনর্থক কথাবার্তা ও গল্পগুজবে নষ্ট করে ফেলি। এর জন্য একদিন আমাদের আফসোস করতে হবে।

ইশরাক নামাজ : ইশরাক নামাজ সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাতে আদায় করল। এরপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকল। সূর্য উদয়ের পর দুই রাকাত নামাজ পড়ল। সে এক হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ করল। -জামে তিরমিযী : ৫৯৩।

জোহরের সুন্নাত ও নফল : আমরা জোহরের ফরজের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করি। হাদিস শরীফে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার পর আরও দুই রাকাত নামাজের কথা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত জোহরের নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। - জামে তিরমিযী : ৪২৯।

জোহরের পূর্বের চার রাকাত বলতে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যা এক সালামে পড়া হয়। আর পরের চার রাকাত দুই সালামে পড়তে হয়। প্রথম দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আর পরের দুই রাকাত সুন্নাতে জায়েদা। এ দুই রাকাত সুন্নাতে জায়েদা হলেও এর ফজিলত অনেক বেশি।

আওয়াবিন নামাজ : মাগরিবের পর আওয়াবিন নামাজ সম্পর্কে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। একটি হলো, মাগরিবের ফরজের পর সুন্নাতসহ ছয় রাকাত নামাজ পড়লেই তা আওয়াবিন বলে গণ্য হবে। অপর বর্ণনায় সুন্নাতের পর ছয় রাকাতের কথা বলা হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় বর্ণনা অনুযায়ী আমল করতে না পারলেও প্রথম বর্ণনা অনুযায়ী তো সহজেই আমল করতে পারি। আওয়াবিন নামাজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত পড়বে তাকে ১২ বছর নফল ইবাদতের সওয়াব দান করা হবে। - জামে তিরমিযী : ৪৩৭।

তাহাজ্জুদ নামাজ : তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বুযুর্গ বুযুর্গ হননি, কোনো আল্লাহওয়ালা আল্লাহওয়ালা হননি তাহাজ্জুদ ছাড়া। শেষরাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করা খুবই বরকতময় আমল। এ সময়টি খুবই বরকতময়। হাদিস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন, ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি গোনাহ ক্ষমা করে দেবো। কে আছো, রিজিকের প্রত্যাশী, আমি রিজিক দান করব। কে আছো, বিপদগ্রস্ত আমি বিপদ থেকে মুক্তি দেবো।’

এমন বরকতময় সময়ে ঘুমিয়ে না থেকে উঠে কিছু নফল নামাজ পড়ে দোয়া করি। এটা যদি সম্ভব না হয় অন্তত ঘুমের আগে তাহাজ্জুদ পড়ে নিই। ফতোয়া শামীতে আছে, কেউ যদি এশার সুন্নাতের পর বিতরের আগে তাহাজ্জুদের নিয়তে চার রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ পাক তাকেও তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন।

ইশরাক দুই রাকাত, জোহরের সুন্নাতের পর দুই রাকাত, মাগরিবের সুন্নাতের পর চার রাকাত ও তাহাজ্জুদের চার রাকাত মোট ১২ রাকাত নফল নামাজ। অন্তত এ ১২ রাকাত নফল নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করি। নামাজ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বাধা প্রদান করে। - সূরা আনকাবুত (২৯) : ৪৫।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Mahmud Rony ৫ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজরের (ফারয (ফরয) সলাতের) পূর্বের দু রাকাআত সুন্নাত আদায় করার প্রতি যত কঠোরভাবে খেয়াল রাখতেন অন্য কোন নাফল সলাতের প্রতি ততখানি রাখতেন না। মুসলিম- ১৫৭১
Total Reply(0)
Maruf ৫ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের (ফরয) নামাযের পূর্বে চার রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআত (সুন্নাত নামায) আদায় করতেন। ততিরমিজি ৪২৪—সহীহ। ইবনু মাজাহ– (১১৬১)।
Total Reply(0)
MD Harun ৫ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
উন্মু হাবীব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে চরে রাকআত (সুন্নাত মুওয়াক্কাদা) এবং ফরযের পরে চার রাকআত (দু'রাকআত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা এবং দু'রাকআত মুস্তাহাব) সালাত আদায়ে অভ্যস্থ হবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। তিরমিজি ৪২৭—সহীহ। নাসায়ী ১৮১৯- ইবনু মাজাহ– (১১৬০)। আবু দাউদ- ১২৬৯
Total Reply(0)
Liyakot Ali Lipto ৫ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ যে সুন্নাত আদায়ের জন্যে অনেক তাকীদ ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদায় না করলে ধমকিও এসেছে। এটা আদায় না করলে গোণাহ হবে।
Total Reply(0)
Md Abul Kashem ৫ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪১ এএম says : 0
Nice Discussion
Total Reply(0)
সাইফ আল ইসলাম ৫ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৫৫ এএম says : 0
সন্মানিত লেখক সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ, ইনকিলাব সংশ্লীষ্ট সকলকে ও, আল্লাহ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন।
Total Reply(0)
বাবুল ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১০:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাই ফরজ ওয়াজিব সুন্নাত যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১০:২৫ এএম says : 0
সুন্নতে মুয়াক্কাদা তো আমরা অবশ্যই আদায় করব, পাশাপাশি কিছু নফলেরও অভ্যাস করি।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৩ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা লেখক মহোদয়কে জাযায়ে খায়ের দান করুন।- আমীন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৪ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা লেখক মহোদয়কে জাযায়ে খায়ের দান করুন।- আমীন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৪ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা লেখক মহোদয়কে জাযায়ে খায়ের দান করুন।- আমীন।
Total Reply(0)
Amir husain ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১৬ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা লেখক কে জাযায়ে খায়ের দান করুন
Total Reply(0)
Amir husain ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:১৬ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা লেখক কে জাযায়ে খায়ের দান করুন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন