সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

কোরআনুল কারীম গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করলে আল্লাহপাকের কর্মকান্ডের হেকমত উপলব্ধি করা যায়। তিনি যখন কোনো জাতির কাছে রাসূল পাঠান, তখন সেই রাসূল তার মাতৃভাষায় দ্বীন কায়েম করেন এবং তাতে তিনি কোনোরূপ অস্পষ্টতা বা ত্রুটি রেখে যান না।

পরবর্তী স্তরে তার থেকে বর্ণনার ধারা ক্রমাগত চলতে থাকে এবং তার উম্মতদের ভেতর তার সাহাবা, সহচর, ও সহযোগীরা ঠিক সেভাবেই দ্বীন উপস্থাপন করেন যেভাবে তা করা উচিত। এই ধারাবাহিকতায় একটি পর্যায় পর্যন্ত দ্বীনের ধারক ও বাহকরা দ্বীনের কাজকর্ম নিয়মনীতি এবং বিধানগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে থাকেন এবং যথার্থ দ্বীনের কাজ আনজাম দিতে থাকেন। এই বিশেষত্বটি আল কোরআনে এভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি এমন কোনো নবী প্রেরণ করিনি যে তার জাতির ভাষায় দ্বীন প্রচার করেনি বা কিতাব পায়নি।’ বস্তুত মহান রাব্বুল আলামীন পিয়ারা নবী সা.-কে এমন এক চরম শূন্যতার যুগে প্রেরণ করেছিলেন, যখন পৃথিবীর সকল সত্য ধর্মই বিলুপ্ত হয়ে পড়েছিল। হযরত আদম হতে যে সত্য দ্বীনের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা হযরত নূহ আ.-এর যুগে বহুমাত্রিক রূপ লাভ করে।

এ সময় নবীগণের কাছে সহীফাসমূহ অবতীর্ণ হয়। এই সহীফাসমূহের নির্দেশনাবলিই ছিল দ্বীনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তারপর হযরত নূহ আ. হতে হযরত ঈসা আ. পর্যন্ত সময়ে তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল কিতাব নাযিল হয়। হযরত দাউদ আ.-এর পরবর্তী সহচরেরা যাবুর কিতাবকে বিকৃত করে ফেলেছিল। হযরত মূসা আ.-এর অসুসারীরা তাওরাত কিতাবকে রদবদল করে এর এক নতুন রূপ দিয়েছিল। হযরত ঈসা আ.-এর অনুসারীরা ইঞ্জিল কিতাবকে ইচ্ছামাফিক অদলবদল করে ফেলেছিল। দ্বীনের মূল ভিত্তি আসমানী কিতাবসমূহে দেখা দিয়েছিল চ‚ড়ান্ত বিকৃতি। সত্য দ্বীনের কোনো নামগন্ধও তখন অবশিষ্ট ছিল না।

মানুষের ভেতর তখন জাতি ও গোত্রগত হিংসা, অনাচার ও বাড়াবাড়ি ব্যাপক রূপ ধারণ করেছিল। যার কারণে তখনকার মানুষ তাদের বিকৃত দ্বীন ও জাহেলি কুসংস্কার বর্জন করতে পারছিল না। এহেন দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-কে আল্লাহপাক সমগ্র বিশ্বের জন্য প্রেরণ করলেন। এবং তাকে এমন এক সংবিধানগ্রন্থ প্রদান করলেন, যা বিকৃত করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যার বিধানগুলো মানবসংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কলাকৌশল সম্বলিত।

একই সময়ে সে যুগের কতিপয় জাতির ওপর আল্লাহর গজব ও অভিশম্পাত নাজিল হয় এবং তাদের সাম্রাজ্য পারস্য ও রোম ধ্বংসের ফয়সালা নির্ধারিত হয়। সাথে সাথে মানবসভ্যতার চতুর্থ স্তর পুনর্বিন্যাসের ও দ্বীন ইসলামের প্রতিষ্ঠার নির্দেশ জারি হয়। রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমন এবং তার মর্যাদা ও বিজয়কে উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নের কারণ নির্ধারণ করা হয়। উল্লিখিত সম্রাটদের কোষাগারের চাবিগুলো রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে সোপর্দ করা হয়। বস্তুত তার এ সাফল্যের ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল কোরআনের বিধান ছাড়া অন্য সবকিছু রহিত হয়ে যায়।

রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগে যত আম্বিয়ায়ে কেরাম এসেছেন তার সময় অনুযায়ী কিছু কিছু বিধান বাড়িয়েছেন। কিন্তু কমাননি মোটেও। তাছাড়া তারা খুব কমই পরিবর্তন করতেন। যেমন হযরত ইব্রাহীম আ. হযরত নূহ আ. দ্বীনের সাথে কোরবানি ও খাতনাসহ কয়েকটি বিষয়ের সংযোগ ঘটিয়েছেন। যথা, উটের গোশত হারাম করা ও শনিবারকে সপ্তাহের সম্মানিত দিন বলে ঘোষণা করা ইত্যাদি

তবে আমাদের প্রিয়নবী সা. কোরআনুল কারীমের বিধান অনুসারে কিছু কিছু নীতি ও আইন বাড়িয়েছেন, কমিয়েছেন এবং পরিবর্তন করেছেন। এতে করে এমন একটি দ্বীন আমরা পেয়েছি, যা আর কোনো দিন পরিবর্তন হবে না, যা পরিপূর্ণ ও যার ওপর আল্লাহপাক রাজি-খুশি আছেন। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলোম এবং আমার নেয়ামতসমূহ তোমাদের ওপর পূর্ণমাত্রায় প্রদান করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে আমি মেনে নিলাম।’ এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মাহিন আদনান ৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসুল(সাঃ) এর হাদিসের(কথা, কাজ ও সমর্থন) মাধ্যমে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো মসুলমানদের উপর কার্যকর হয়েছে। সকল মসুলমানকে অবশ্যই আল-কুরআন ও হাদিসের বিধি-নিষেধগুলোকে নিজে মান্য করা ও সামাজিক জীবনে তাহার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা-সাধনা করা বাধ্যতামূলক।
Total Reply(0)
মোঃ আজহার রুবেল ৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
মানুষ তার সারা জীবনে যা কিছু করে যেমন- ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় বা আধ্যাত্বিক এবং সামগ্রিক কর্মতৎপরতা ইসলামের আদেশ-নিষেধের আওতাভূক্ত্। ইসলাম শুধুমাত্রই একটি ধর্মের বা মতের নাম নয়, বরং ধর্ম হচ্ছে ইসলামের একটি শাখা। ইসলাম মানব জীবনের সর্বময় স্তরের যাবতীয় কর্মতৎপরতা পরিচালনার পথ-প্রদর্শন করে।
Total Reply(0)
মোঃ জামান হোসেন জন ৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
ইসলাম হচ্ছে “আল্লাহ প্রদত্ব জীবন-বিধান(আল-কুরআনের বিধি-নিষেধ সমুহ) রাসুর (সাঃ) এর পন্থায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে আল্লাহর সন্তোশ অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা”।
Total Reply(0)
মোঃ জামান হোসেন জন ৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
ইসলাম হচ্ছে “আল্লাহ প্রদত্ব জীবন-বিধান(আল-কুরআনের বিধি-নিষেধ সমুহ) রাসুর (সাঃ) এর পন্থায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে আল্লাহর সন্তোশ অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা”।
Total Reply(0)
বাহারুল ৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
ইসলামী অনুশাষনই প্রকৃত শান্তির পথ। যে ব্যক্তি ইসলাম অনুসরণ করে সে মুসলমান। মুসলমান হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী। আর ইসলাম হচেছ নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পনের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা। একমাত্র ইসলামের অনুসরণই প্রকৃত কল্যাণ দিতে পারে। প্রত্যেক শান্তিকামী মানুষের উচিৎ আল কোরআন এবং রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদিস নিজে অনুসরণের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা এবং রাষ্ট্র তথা সমাজে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
Total Reply(0)
৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
আল কুরআনে দ্বীন শব্দটি ছয়টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে : (১) দ্বীন মানে প্রতিদান : ‘প্রতিদান দিবসের মালিক’ (সূরা ফাতিহা : ১-৪)। ‘তুমি কি তাকে দেখেছো, যে প্রতিদান (দিবসকে) অস্বীকার করে?’ (সূরা মাউন : ১)। (২) দ্বীন মানে আইন : ‘আল্লাহর আইন কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের দু’জনের প্রতি যেনো তোমাদের দয়া না হয়।’ (সূরা নূর :২)
Total Reply(0)
মিজানুর রহমান ৮ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৪৪ এএম says : 0
কুরআন একটি মহা হেদায়েত গ্রন্থ। কাজেই এর অর্থ হৃদয়ঙ্গম করে সে অনুযায়ী জীবনযাপন করাই সবার কর্তব্য। তথাপিও অর্থ না বুঝে শুধু শব্দাবলী পাঠ করাও তা মানুষের মনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে, তাদেরকে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। কুফর ও শিরকের যত মনোমুগ্ধকর জালই হোক, কুরআন তিলাওয়াতকারী অর্থ না বুঝলেও সে এ জালে আবদ্ধ হতে পারে না। এটাই কুরআনের মোজেজা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন