শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্মরণকালের সর্বনিম্ন চামড়ার মূল্য: ফেইসবুকে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়

শাহেদ নুর | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম

ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমান গরু বা ছাগল বা এ জাতীয় পশু কোরবানী দিয়েছে। অন্যান্য বছরগুলোতে এ সময় প্রচুর চামড়া বিক্রি হয়। এই চামড়া বিক্রির টাকা সাধারণত মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেয়া হয়, অথবা হতদরিদ্র মানুষকে দেয়া হয়। কিন্তু এ বছর রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যায় নি বললেই চলে। যাদের পাওয়া গেছে তারা দাম এত কম বলছে যে, গত ৩১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, আর্থিক সংকটে আড়তদারেরা চামড়া কিনতে পারছেন না। আবার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম একবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, চামড়ার দাম নিয়ে অন্তরালে কেউ কেউ নোংরা খেলা খেলে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। চামড়ার দাম কম হওয়া অনেকে চামড়া ফেলে দিচ্ছে অথবা মাটিতে পুঁতে রাখছে এমন চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

সাংবাদিক ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ তার ফেইসবুকে এক দীর্ঘ স্টাট্যাসে লিখেন, ‘কুরবানীর চামড়া সিন্ডিকেটের পেছনে ইসলামী শিক্ষা বিরোধী চক্রের হাত নেই তো? ভারতের চামড়া শিল্পের বাজার বহুলাংশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চামড়ার উপর নির্ভরশীল। পাকিস্তান ভারতের সাথে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ায়, এ বছর ভারতকে বাংলাদেশের চামড়ার উপর অধিক নির্ভরশীল হতে হবে। ফলে বাজার চাহিদানুযায়ী চামড়ার দাম ভাল পাওয়ার কথা। কিন্তু এ বছর ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো। একসময় ৫০০ টাকায় একটি ভালমানের দেশী চামড়ার জুতা পাওয়া যেত, তখন কুরবানীর গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন ভাল মানের চামড়ার দেশী জুতা ৭/৮ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন গরুর চামড়া ২০-২০০ টাকায় নেমে এসেছে। এতে অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে চামড়া পুঁতে, পুড়িয়ে বা নদীতে ফেলে দিয়েছেন এমন ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই প্রবণতা জনপ্রিয় হলে কার কি হবে জানিনা, তবে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প ধংস হবে এবং বিদেশী কোম্পানীর পোয়াবারো হবে। কিন্তু কেন এমন হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশের উত্তর, সিন্ডিকেট। আমি বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে দেখি যাতে রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র রয়েছে, মুনাফাখোরি তো বটেই। কুরবানীর চামড়া সমাজের একেবারেই নিঃস্ব, দরিদ্রদের প্রাপ্য। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এ শ্রেণী চিরকালই শোষিত। তাদের কল্যাণের জন্য সরকার ও নেতাদের শো অফ থাকে, দায়িত্ব নয়। কারণ সরকার ও নেতাদের মধ্যে চামড়া ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের অংশিদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব থাকে। ফলে ওই যে বলে, ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- এখানেও তাই ঘটে। তার থেকেও বড় কথা, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো কুরবানীর চামড়া সরাসরি এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দান করে থাকে- যেখানে মূলত ইসলামী শিক্ষা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো সারা বছরের ব্যয়ের একটা বড় অংশ আসে এই চামড়া বিক্রির অর্থ থেকে। এ চামড়ার সঠিক দাম পাওয়া গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো আরো ভালভাবে চলতে পারতো এবং নিজেদের শিক্ষা ও পরিধি বিস্তার ঘটাতে পারতো। আমার মনে হয়, কুরবানীর চামড়ার দাম এভাবে ফেল দেয়ার পেছনে মাদ্রাসা তথা ইসলামী শিক্ষাকে দুর্বল রাখার একটি ষড়যন্ত্র গভীর থেকে কাজ করে। কেননা, সারা বছর কিন্তু চামড়ার দাম এমন থাকে না। কুরবানীর চামড়ার দাম নির্ধারক সিন্ডিকেটের পেছনে গভীরভাবে ইসলাম বিরোধী কোনো চক্র সক্রিয় থাকতে পারে বলে আমার সন্দেহ।’

লেখক মুনসুর আজিজ লিখেন, ‘একসময় আমরা গর্ব করতাম আমা‌দের নদ~নদী নিয়ে ‘তেরো শত নদীর দেশ বাংলা‌দেশ’। তারপর আমরা পাট নি‌য়ে গর্ব করতাম ‘সোনা‌লি আঁ‌শের দেশ বাংলা‌দেশ’, এরপর আমরা চামড়া নি‌য়ে গর্ব কর‌তে শেখলাম ‘কাঁচা সোনার দেশ বাংলা‌দেশ’ নিয়ে। নদীখে‌কোরা গি‌লে খে‌লো নদ~নদী, অথর্ব রাজনী‌তিক বুঝ‌লো না পা‌টের কদর। এখন আমরা তিলদিল ক‌রে গ‌ড়ে ওঠা চামড়া শিল্পকে গলা টি‌পে হত্যা কর‌ছি। ব্যক্তিস্বার্থ মানুষ‌কে অন্ধ ক‌রে দেয়। ৩০০০ টাকার চামড়ার মূল্য ৩০০ টাকাও নেই। একটা সময় আস‌বে ব্যবসায়ীরা বা‌ড়ি বা‌ড়ি ঘুর‌বে চামড়ার জন্য, তারা পা‌বে গা‌র্মে‌ন্টস এর ঝুট এর ন্যায় কু‌চি কুচি করা চামড়ার টুক‌রো। এরপর কপা‌লে থাপ্পর মার‌বে আর হায় হায় কর‌বে!’

‘এই চামড়ার টাকা পায় বেশির ভাগ এতিমখানার বাচ্চারা বা গরীব মানুষেরা। সব জিনিসপত্র যখন উর্ধমুখী তখন চামড়ার দাম প্রতি বছর নিম্নমুখী করা হচছে কি এতিম বা গরিবকে ঠকানোর জন্য?’ - রেহাল ইসলামের প্রশ্ন।

সোহেল রানা লিখেন, ‘ভালো কোনো ব্রান্ডের চামড়া জুতো কিনতে গেলে ১২০০ কিংবা ১৫০০টাকা লাগে, তাতে চামড়া লাগে মাত্র ১০ ইঞ্চি বাই ৪ চওড়া। কিন্তু একটা আস্তো চামড়া কিনতে গেলে লাগে ৩০০/৪০০টাকা! তাহলে বাকি টাকা কার পকেটে যায় ?’

‘এত বড় সিন্ডিকেট। সরকার কি চোখে টিনের চশমা পড়ে আছে ?’ - আহমেদ মুনিরের জিজ্ঞাসা।

ফারুক হোসাইন লিখেন, ‘গরিব মিসকিন এর হক এর প্রতি তামাশা ছাড়া আর কিছুই না, এজন্য চামড়াজাত দ্রব্য বা চামড়াজাত শিল্পের সহিত যারাই জড়িত অবশ্যই অবশ্যই তাদেরকে কড়ায়-গন্ডায় এর হিসাব একদিন দিতে হবে। আর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মুসলিমদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ হতে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি। সেইসাথে গরিবের হক প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।’

‘অতি মুনাফালোভি ট্যানারি মালিকদের কারণে চামড়ার বাজার ধ্বস। এইসব হারামখোর ব্যবসায়ীদের চামড়ার বাজার অচিরে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ লক্ষ লক্ষ চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছে। এটা বিশাল ক্ষতি । কারণ মানুষ ৫০/১০০ টাকা চামড়া বিক্রি না করে ক্ষোভে মাটিতে ফুতে ফেলেছে।’ - ইকবাল হোসেনের মন্তব্য।

এদিকে স্থানীয় শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সাধারণ মানুষ ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কতটা উপকৃত হতে পারেন- এসব বিষয়ে অস্পষ্টতার মধ্যেই দেশে প্রথমবারের মত কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে মানুষ যে দাম পাচ্ছে, সেটা ‘যৌক্তিক না’। মানুষ যেন ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করতেই সরকারের এ পদক্ষেপ।

রপ্তানির সুযোগ হলে আর ট্যানারিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না- এই আশায় কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা উৎপাদন শিল্প ও প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে দেশে এসব শিল্পের কাঁচমালের সহজলভ্যতা কমে যাবে, তাতে হুমকির মুখে পড়বে পুরো শিল্প।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মনিরুজ্জামান ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম says : 0
সরকারের উচিত এসব সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া
Total Reply(0)
Murtuza Chowdhury ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম says : 0
সরকারি উদ্যোগে চামড়া ক্রয় করা উচিত।
Total Reply(0)
Nazrul Islam ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম says : 0
It's should be open for export....who ever... where ever can...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন