গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ছিল। এর মধ্যে শনিবারে হঠাৎ ভারি বর্ষণে খুলনা ও বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে একাকার হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলার কাঁচা, অর্ধ কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। আমন বীজতলাও পানিতে ডুবে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী।
এদিকে খুলনা নগরীতে বৃষ্টি কমলেও কমেনি রাস্তাঘাটে জমে থাকা পানি। পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে খুলনা নগরীর খালিশপুরের বাস্তহারা কলোনীসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নগরীতে বসবাসকারি মানুষের জীবন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ঘরের ভিতরে পানি থৈ থৈ করছে। বৃষ্টি কমলেও বেশ কয়েকটি রাস্তায় এখনও হাঁটু পানি। গত ক’দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টির ফলে এ দুর্দশা সৃষ্টি হয়েছে। পাইকগাছা পৌর সদরসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একাকার হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের। অতিরিক্ত পানিতে গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ভারি বর্ষণে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৩০টি কাঁচা, অর্ধ কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে।
ডুমুরিয়ায় একদিনের প্রবল বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ও অফিসপাড়া। ভেসে গেছে ৬টি পুকুরে থাকা শতাধিক মন মৎস্য পোনা। এতে ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়েছেন খামার ব্যবস্থাপক। ডুমুরিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার কারনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বাগেরহাটে ভারি বর্ষণে বাগেরহাটের প্রায় আড়াইশ’ মৎস্য ঘেরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার তিনটি পৌরসভা ও উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে পারেনি। কৃষিতেও প্রভাব পড়েছে ভারি বর্ষণে। কাড়াপাড়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার ঘেরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ঘের ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাট সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, দুই থেকে আড়াইশ’ ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সহ¯্রাধিক মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য চাষিদের নেট দিয়ে নিজ নিজ ঘের নিরাপদ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। তালায় উপজেলা সদরের অফিসপাড়াসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফসলের ক্ষেত, মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
জানা যায়, আকস্মিক বৃষ্টিতে উপজেলার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাটু থেকে কোমর পানি। নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্কুল-কলেজের ক্লাস রুমে পানি প্রবেশ করেছে। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে তালা সদর, খলিলনগর, জালালপুর, মাগুরা খেরশা, তেঁতুলিয়া ইসলামকাটি এলাকাসহ পাটকেলঘাটা বাজারের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তালা গেনালী টেকনিক্যাল কলেজ, কে এম মডেল হাইস্কুল, কাঠুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, গঙ্গারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ ক্লাসরুমে ২/৩ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান রাজু জানান, তার ইউনিয়নের দাসকাটি নিকারীপাড়া, মাছিয়াড়া কয়েকটি গ্রাম ও মৎস্যঘের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন