রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হজ-পরবর্তী জীবন কেমন হওয়া উচিত-১

মাওলানা আব্দুল্লাহ ফাহাদ | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের মূল ভিত্তি, তার পঞ্চমটি হলো হজ। তবে নামাজ, রোজা থেকে হজের বিধানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা, এটি মুসলমানের ওপর প্রতিদিন অথবা প্রতি বছর ফরজ হয় না; বরং জীবনে মাত্র একবারই ফরজ হয়ে থাকে। আর বস্তুত হজ পালন আল্লাহর প্রতি বান্দার অকৃত্রিম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

হজের পুরো ব্যাপারটিই মূলত আল্লাহর এক অনুগত বান্দা নবী হজরত ইবরাহীম আ.-এর স্মৃতিচারণ। যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন পূর্ণ সফলতার সঙ্গে। পবিত্র কুরআন মজীদে যার বর্ণনা এসেছে। আল্লাহর প্রতি তার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা আর মহা ত্যাগ আল্লাহর দরবারে এতই কবুল হয়েছিল যে, পরবর্তী নবীর উম্মতের জন্যও সে পাগলপারা বান্দার রূপ ও বেশভূষা ধারণ করা ইবাদতের অংশ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ ভালোবাসার টানে, জিয়ারতে বাইতুল্লাহর ঈমানী আকর্ষণে ছুটে আসে হজ পালনে।

ইযার পরনে গায়ে চাদর জড়িয়ে ফকিরের বেশে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক... ধ্বনিতে মুখরিত থাকে সবখানে। যাদের অন্তর পবিত্র, যাদের অর্ন্তদৃষ্টি আছে, তারা দেখেন আল্লাহর কুদরত, তাঁর অপার মহিমা, তাদের মনে জাগে বারবার হাযিরীর সাধ। আর যাদের তা নেই, যাদের হৃদয় কলুষিত, তাদেরও হয় অনুভূতি, তারাও পায় অভাবিত স্বাদ। এ সময়ে যেন বয়ে বেড়ায় খোদার করুণার ফল্গুধারা, যার পরশে সৌভাগ্যবানরা হয়ে ওঠেন আত্মহারা।

কিন্তু এই সৌভাগ্য তো তাদেরই নসিব হয়, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন, যাদেরকে তিনি দিয়েছেন তাঁর ঘর জিয়ারত করার সামর্থ্য। নামাজ-রোজার মতো এই ইবাদতটি সাধারণ মুসলমানের ওপর আবশ্যকীয় নয়। এর জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু শর্তাবলি। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- ‘মানুষের জন্য আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর হজ করা অপরিহার্য, যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ - সূরা আল ইমরান ৯৭।
এই আয়াতের আলোকে ফকিহগণ বলেছেন, কোনো বালেগ মুসলমান দৈহিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হলেই তার ওপর হজ ফরজ হবে না; বরং হজ ফরজ হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে সামর্থ্য। অর্থাৎ নিজ দেশ বা অঞ্চল থেকে মক্কা-মদিনায় যাওয়া-আসার খরচ, সেখানে অবস্থানকালীন খরচ এমনকি এ পূর্ণ সফরে নিজের পরিবার-পরিজনের খরচ বহন করার সামর্থ্য থাকা।

আর যে ব্যক্তি উক্ত শর্তে উন্নীত হয় তার জীবনে কেবল একবার হজ করা ফরজ। আর মূলত এই একটি বারের হজই একজন মুসলমানের সতর্ক হওয়া, জীবনের ভুলগুলো শুধরে নতুন পথে চলা ও জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার পক্ষে যথেষ্ট। কেননা হজ মানুষের অন্তরে দুনিয়ার সবকিছুকে ভুলিয়ে একমাত্র মহান রাববুল আলামীনের ভালোবাসাকে বদ্ধমূল করে দেয়। আর তাই হজের সময় মানুষ স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজন ছেড়ে খোদার ভালোবাসায় ডুবে থাকে। মহা শক্তিধর, পরাক্রমশালী রবের দরবারে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ঐশী করুণায় হৃদয়-মন সিক্ত করে। বান্দা আর রবের সেই সময়কার অবস্থা বলে বোঝানোর নয়।

এটা শুধু সশরীরে উপস্থিত হয়ে অনুভব ও অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়। হজের লক্ষণীয় যে, নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদতের ফায়দা কুরআন মজীদে স্পষ্ট করেই বর্ণনা করা হয়েছে। নামাজের ফায়দা হলো, নামাজ মানুষকে সকল অশ্লীল ও খারাপ কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখে। আর রোজা মানুষের মধ্যে তাকওয়া-খোদাভীতি সৃষ্টি করে, মানুষের হৃদয়ে এই অনুভূতি জাগ্রত করে যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে দেখছেন। তেমনিভাবে জাকাতের ফায়দা হলো, জাকাত মানুষের সম্পদকে পবিত্র রাখে। এর মাধ্যমে ধনসম্পদে বরকত হয় ও গরিব-অসহায়দের প্রয়োজন মিটে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
নোমান ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫১ এএম says : 0
আর হজ শেষে দেশে ফিরে সব রকমের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। এজন্য আল্লাহ ওয়ালাদের সংস্পর্শে থাকা উচিত। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যনিষ্ঠদের সঙ্গে থাক।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)
Total Reply(0)
রিফাত ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৩ এএম says : 0
এইভাবে চলতে পারলে আমাদের হজ পরবর্তী জীবন স্বার্থক হবে, আমাদের জীবন ধন্য হবে এবং আমরা সফলতা অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ । আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন।(আমিন)
Total Reply(0)
লোকমান ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৪ এএম says : 0
হজের সফরের পূর্ণ সময়টা মূলত মানুষের জীবনে তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের এক মোক্ষম সময়। এ স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে একজন মানুষ নিজেকে পরিপূর্ণ মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলে। তাই দেশে ফিরেও যেন সেই তাকওয়া অটুট থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
Total Reply(0)
তুষার আহমেদ ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
কেউ যদি বান্দার যাবতীয় অনাদায়ী হক আদায় করে হজ্বের সফরে বের হয় এবং সকল বিধি-নিষেধ মেনে হজ্ব আদায়ে সক্ষম হয় তাহলে সে সদ্যভূমিষ্ট শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর এ নিষ্পাপ বান্দাটির সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক আরো গভীর হয়। সুতরাং হজ্বের পর দেশে ফিরেও যেন সে গুনাহ ও পঙ্কিলতামুক্ত থাকে, তার বাকিটা জীবন যেন নিষ্পাপ শিশুর মতোই কেটে যায় এজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৮ এএম says : 0
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে, আর তাতে কোনো ধরনের অপকর্ম বা পাপাচারে লিপ্ত না হয়, সে ব্যক্তি সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে (হজ থেকে) ফিরে আসে। ' (বোখারি : ১৪২৪, মুসলিম : ২৪০৪)
Total Reply(0)
খালেদ ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৪:০০ এএম says : 0
প্রত্যেক মুসলমানই হালাল উপার্জনের দ্বারা হজ পালন করেন কারণ হারাম উপার্জন দ্বারা হজ পালন করতে তা সঠিক বিবেচিত হবে না। সুতরাং হালাল উপার্জনের এই ধারাকে হজ পালন পরবর্তী জীবনে জারি রাখা আবশ্যক। আর
Total Reply(0)
সাইফ ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম says : 0
আল্লাহ সকল হাজী সাহেবকে তার পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন
Total Reply(0)
নাসির উদ্দিন ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫১ পিএম says : 0
খুবই সন্দর ও প্রয়োজনীয় আলোচনা। আশা করি সদ্য হজ করা হাজীরা উপকৃত হবেন।
Total Reply(0)
Mohammad H kabir ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ৬:০৬ এএম says : 0
Hazi should must be follow Quran Sunna.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন