রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হজ ও কোরবানির পর : চেতনায় চিরন্তন হোক ‘আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা’

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৩১ আগস্ট, ২০১৯

বিশ্বজুড়ে আল্লাহর বান্দারা আদায় করেছেন এ সময়ের দুই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত-হজ ও কোরবানি। হজ সম্পন্ন হয়েছে হজের নির্ধারিত স্থানে- মক্কা ও মীনায়, আরাফা ও মুযদালিফায়। হজের কোরবানিও নির্ধারিত স্থানেই করা হয়েছে। আর বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনপদগুলোতে আদায় হয়েছে সাধারণ কোরবানি। মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর ইবাদতের তাওফিক দিয়েছেন এ জন্য আমাদের কর্তব্য তাঁর শোকরগোযারি করা। আর ব্যক্তিগত ও মানবীয় দুর্বলতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে সেজন্য ইস্তিগফার করা।
এই ইবাদতের মাধ্যমে তার কত নিয়ামত আমাদের প্রতি: প্রথম নিয়ামত, তিনি আমাদের তাঁর হক সম্পর্কে জানিয়েছেন। একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, জান, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী আর আল্লাহর কাছে বান্দার প্রাপ্য কী? বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, বান্দা শুধু তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর কাছে বান্দার প্রাপ্য, যে তাঁর সাথে শরীক করে না তাঁকে (জাহান্নামের) আযাব থেকে নাজাত দিবেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩)।

তাঁর নৈকট্য তো শুধু তখনই অর্জিত হবে যখন তাঁর হক্ব সঠিকভাবে জেনে তা আদায় করা হবে। জগতে বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা হয়তো সত্যি সত্যি সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য প্রত্যাশা করে, কিন্তু হায়! তাঁর হক সম্পর্কে তাদের সঠিক উপলব্ধি নেই, ফলে তা আদায় করারও তাওফীক নেই।

দ্বিতীয় নিআমত, তিনি আমাদের শিখিয়েছেন তাঁর ইবাদতের সঠিক নিয়ম। সালাত-যাকাত, সিয়াম-ইতিকাফ, হজ ও কোরবানী ইত্যাদি ইবাদত তিনি আমাদের দান করেছেন তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূত্রে কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে। এ তাঁর কত বড় নিআমত এবং ঈমানদারের কত বড় সৌভাগ্য তা কিছুটা উপলব্ধি করা যাবে এই সৌভাগ্য-বঞ্চিত মানুষগুলোর অবস্থা চিন্তা করলে।

জগতে অসংখ্য মানুষের উপাসনা-নিষ্ঠতা প্রমাণ করে তাদের মনে আছে স্রষ্টার উপাসনার ঐকান্তিক প্রেরণা। কিন্তু হায়! ‘শিরকী উপাসনা’ এবং ‘শিরক ও উপাসনা’র কোনোই মূল্য নেই স্রষ্টার কাছে। তাঁর কাছে একমাত্র ঐ উপাসনাই গ্রহণযোগ্য, যা ঈমান ও তাওহীদের সাথে হয় এবং নিয়ম ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়।

মুসলিমের পরম সৌভাগ্য, ইসলামের সূত্রে সে লাভ করেছে আল্লাহ তাআলার যথার্থ ইবাদতের, তাওহীদ-ভিত্তিক ইবাদতের নিয়ম ও সুন্নাহ। এই মহা নিয়ামতের গুরুত্ব এভাবেও বোঝা যায় যে, স্বয়ং আল্লাহ এই নিয়ামতের শোকরগোযারি করার এবং তাঁর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনারই আদেশ করেছেন। ‘এবং যেন তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকরগোযারি কর।’ (সূরা বাকারা (২) : ১৮৫)

তৃতীয় নিয়ামত, ওই তাওহীদ-ভিত্তিক ইবাদত আদায়ের তাওফীকও তিনিই দান করেছেন। তাঁরই তাওফীকে সম্পন্ন হয় সকল ভালো কাজ। তাঁর তাওফীক ছাড়া বিরত থাকা যায় না কোনো মন্দ কাজ থেকে। বান্দা যখন যথার্থভাবে আল্লাহ অভিমুখী হয় তখন আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। তাঁর হেদায়েতেই বান্দার পক্ষে ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।

চতুর্থ নিয়ামত, এই ইবাদত ও ইতাআতের বিনিময়ে বান্দাকে তিনি দিয়েছেন পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। হজ্বের বিষয়ে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ- ‘মকবুল হজের একমাত্র বিনিময় জান্নাত’। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯)। তাঁর আরো ইরশাদ, ‘যে হজ করল, (আর তাতে) অশ্লীলতা ও নাফরমানী থেকে বেঁচে রইল, সে ওই দিনের মতো (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যে দিন সে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৫০)।

আর দ্বিতীয় ইবাদত কোরবানির এই ফযিলত তো সবার জানা- কোরবানির দিবসে আদম-সন্তানের আর কোনো আমল নেই যা আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়েও প্রিয়। এই কোরবানি কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে তার শিং, খুর ও চুলসহকারে। আর কোরবানির রক্ত ভূমিতে পড়ার আগেই তা পৌঁছে যায় আল্লাহর সন্তুষ্টির স্থানে। সুতরাং এতে তোমাদের চিত্ত প্রফুল্ল হোক। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১২৬)।

এ তো একান্তই তাঁর দান। তিনিই তাঁর হক সম্পর্কে জানিয়েছেন, এবং সেই হক আদায়ের সঠিক পন্থাও তিনিই শিখিয়েছেন। এরপর তা পালনের তাওফীকও দান করেছেন। অতপর এর বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আমরা সর্বান্তকরণে তাঁরই প্রশংসা করি এবং সর্বসত্তায় তাঁরই অভিমুখী হই।

কোরবানির সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক যবানে যে জ্যোতির্ময় বাক্য উচ্চারিত হয়েছিল অর্থাৎ ‘আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা’ (ইয়া আল্লাহ! (এ) তোমার পক্ষ হতে আর তোমারই জন্য), তাই যেন হয় আমাদের হৃদয়ের চিরন্তন আকুতি, আমাদের গোটা জীবনের সকল পুণ্যকর্মের প্রেরণা ও অনুভূতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Jewel Hossain ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
হজ ও কোরবানি ইসলামী ইবাদতগুলোর মধ্যে অপরিসীম। হজ সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, 'নিশ্চয় মানবজাতির জন্য (কল্যাণের) প্রথম যে ঘরটি বানানো হয়েছিল, সেটি বাক্কায় অবস্থিত। এ ঘরটি বরকতপূর্ণ এবং বিশ্বজগতের জন্য হেদায়েতের কারণ' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত :৯৬)।
Total Reply(0)
Md Mostafizur Rahman ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ এবং বিশ্ব নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারতের সাধ প্রতিটি মুসলমানেরই হৃদয়ে জাগে। আল্লাহ সবার সামর্থ দিন।
Total Reply(0)
মশিউর রহমান ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
হজ পালন করলেই নিষ্পাপ হয়ে যাব, এমন এক অদ্ভুত মনমানসিকতাও আমাদের সমাজে অনেকের মাঝে বিরাজ করে। হজ করলেই সবাই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, তা ঠিক নয় বরং পূর্বের সব দোষ-ত্রুটির ক্ষমা চেয়ে মুমিন-মুত্তাকি হয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করার মাধ্যমেই এর কল্যাণ নিহিত।
Total Reply(0)
মু. অহিদুল হক ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
এমনটি যদি হয়, হজ থেকে ফিরে এসে আবার আগের মতো জীবন অতিবাহিত করছি, নানা মন্দ কাজও করছি, তাহলে এমন হজ আল্লাহর দরবারে কোনো মূল্য রাখে না। হজের সঙ্গে সঙ্গে আরেক বিষয় যা মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাহলো, পশু কোরবানি দেওয়া বা তাতে অংশ নেওয়া।
Total Reply(0)
বাহলুল ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
দুটি ইবাদতের লক্ষ্যই আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করা; ত্যাগ ও সাধনা করা। এর একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহকে পাওয়া। এছাড়া পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য নেই। এই দুটি ইবাদতে লৌকিকতার অনেক বেশি আশঙ্কা থেকে যায়। এজন্য এখানে ইখলাস ও তাকওয়ার শতভাগ উপস্থিতি থাকলেই আল্লাহকে পাওয়ার উদ্দেশ্য অর্জিত হতে পারে।
Total Reply(0)
মাহিন আদনান ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
জ যদি কারও জীবনের গতিধারায় পরিবর্তন আনতে না পারে তবে সেই হজ তার জন্য কল্যাণকর নয়।
Total Reply(0)
কাবের ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
দোয়া করি, যারা পবিত্র হজ পালন করেছেন তাদের সবার হজ আল্লাহপাক কবুল করুন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন