রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামে বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ইসলামী জীবন জিজ্ঞাসার পূর্ণতা ও স্থিতিশীলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। আরবী ‘বাইয়াত’ শব্দটি ‘বাইয়ুন’ শব্দ থেকে নির্গত। বাইয়ুন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আনুগত্যের শপথ, নেতৃত্ব মেনে নেয়া, অঙ্গীকার, লেনদেন, চুক্তি ও ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় বাইয়াত হলো আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে ইসলামী জীবনযাত্রার দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সত্তার নিকট আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির নাম। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাতে বাইয়াত নেয়ার অর্থই হলো আল্লাহপাকের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা তোমার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাইয়াত গ্রহণ করে, আল্লাহর হাত তাদের ওপর সংস্থাপিত, তারপর যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তার ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম তারই ওপর বর্তাবে। আর যে আল্লাহকে দেয়া অঙ্গীকার পূরণ করবে অতিসত্বর আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার প্রদান করবেন।’ (সূরা ফাতহ : আয়াত ১০)।

বাইয়াত পূর্ণ করা অঙ্গীকারের অন্যতম অংশ। এজন্য বাইয়াত গ্রহণকারীর উচিত অঙ্গীকার পূর্ণ করার ওপর অবিচল ও সুদৃঢ় থাকা। এ ব্যাপারে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা যখন অঙ্গীকার করো তখন আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো, তোমরা দৃঢ়তার সাথে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করো না, আর তোমরা নিজেদের জন্য আল্লাহকে জিম্মাদার স্থির করেছ, তোমরা যা করো তা নিশ্চয়ই আল্লাহপাক জানেন। (সূরা নাহল : আয়াত ৯১)।

বস্তুত নির্দিষ্ট কতিপয় জিনিস বা বিষয়ের ব্যাপারেও বাইয়াত গ্রহণ করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, যখন মুমিন রমণীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাইয়াত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জেনে-বুঝে কোনো অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না, তখন তুমি তাদের বাইয়াত গ্রহণ করবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)।

আর বাইয়াত গ্রহণকারীর সামর্থ্য অনুযায়ী অঙ্গীকার গ্রহণ করাও বৈধ। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট নসিহত শ্রবণ ও আনুগত্যের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করতাম, তখন তিনি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তা পালন করার অনুমতি প্রদান করেছেন। (সহিহ বুখারী : ৯/৭২০২)।

বাইয়াত গ্রহণকারীর সারা জীবন অঙ্গীকারের ওপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. শীতের এক সকালে বের হলেন। মুহাজির ও আনসারগণ তখন পরিখা খননের কাজে লিপ্ত ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আখেরাতের কল্যাণই তো প্রকৃত কল্যাণ। অতএব, তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। তখন তারা সাড়া দিয়ে জবাব দিলো, আমরাও সেই জামায়াত যারা আজীবন জিহাদ করার জন্য মুহাম্মাদ সা.-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। (সহিহ বুখারী : ৯/৭২০১)।

সুতরাং যুগ ও কাল পরম্পরায় ইসলাম ধর্মের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সত্তার কাছে নসিহত শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে বাইয়াত গ্রহণ করা ঈমানদার মাত্রেরই কর্তব্য। কেননা, বাইয়াত ছাড়া মৃত্যুকে জাহেলি মৃত্যু বলে হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রাসূলুল্লাহ সা. হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (তাবরানী : অধ্যায় ১৯, পৃ. ৩৩৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Motiur Rahman ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
বাইয়াত গ্রহণকারীর সারা জীবন অঙ্গীকারের ওপর অবিচল থাকা অপরিহার্য।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
যুগ ও কাল পরম্পরায় ইসলাম ধর্মের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সত্তার কাছে নসিহত শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে বাইয়াত গ্রহণ করা ঈমানদার মাত্রেরই কর্তব্য
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
বাইয়াত বা শপথ ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানব জীবনে সফলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
Total Reply(0)
রিমন ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ পাকের বড়ই ইহসান যে তাদের মধ্যে হতে তাদের জন্য একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি আল্লাহ পাকের আয়াতগুলো তেলায়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাযকিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত (আধ্যাত্মিক) জ্ঞান শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হেদায়েত প্রাপ্ত ছিল না। (সূরা আল এমরান, আয়াত-১৬৪)
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুক।
Total Reply(0)
নাবিল ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
এই ইসলামিক কলামটি জন্য আমি নিয়মিত দৈনিক ইনকিলাব পড়ি
Total Reply(0)
তানিয়া ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযাহ দান করুক।
Total Reply(0)
সাইফ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৫১ এএম says : 0
লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ এমন গুরুত্ব পূর্ন লেখার জন্য ও তা প্রকাশ করার জন্যে, আল্লাহ্‌ আপনাদের এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করবেন।
Total Reply(0)
মুহাইমিন ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৫৩ পিএম says : 0
সোনার বাংলা পত্রিকার পরে এই একটি পত্রিকা একটু ইসলামের কথা বলে।বাকি সব সরকারি পত্রিকা।
Total Reply(0)
ABDUL MAZID SHAMIM ৩ আগস্ট, ২০২২, ১০:০১ এএম says : 0
চমৎকার , আগে কখনোই বিষয়টি জানতাম না
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন