আকীকা শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ হল, নবজাতকের মাথার জন্মলগ্নের চুল। যেমন বলা হয়, নবজাতকের আকীকা করা হয়েছে, এর অর্থ হলো তার মাথার চুল কামিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ইসলামী শরীয়তে আকীকা বলতে বোঝায়, নবজাতকের জন্মের পর তার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট জন্তু যবেহ করা।
এটাকেই মানুষ আকীকা বলে জানে। কেউ এই বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন বলে আমার জানা নেই। আকীকার ফজিলত : হাদীস শরীফে আকীকার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীর হাদীসে আছে, ‘হযরত সালমান ইবনে আমের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানের সাথে একটি আকীকা নিবন্ধিত রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষ হতে রক্ত প্রবাহিত কর এবং আপদ-বিপদ দুরীভূত কর। (সহীহ বুখারী : ৫৪৭১; ২/৮২২)।
হাদীস শরীফে আরও বলা হয়েছে, ‘হযরত সামুরাহ ইবনে জুন্দুর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকীকার সাথে বন্ধনকৃত। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জন্তু যবেহ করবে এবং তার মাথার চুল মুন্ডন করে নাম রাখবে। সুনানে নাসায়ী : ৪২২০; ২/১৬৭)।
আকীকার মাসআলা: উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা প্রমাণিত হয় যে, আকীকা করা ওয়াজিব নয়; বরং সুন্নাত বা মুস্তাহাব। ছেলে অথবা মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সপ্তম দিবসে তার নাম রাখা এবং আকীকা করা সুন্নাত। যদি কেউ সপ্তম দিবসে আকীকা করতে অপারগ হয়, তবে ১৪ অথবা ২১তম দিবসে বা এরূপ সাতদিন অন্তর যে কোনো দিন আকীকা করা উত্তম। তবে এতে প্রথম সাত দিনে করার যে সওয়াব রয়েছে, তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
আকীকার নিয়ম হল, ভ‚মিষ্ঠ সন্তান ছেলে হলে তার আকীকা দু’টি ছাগল অথবা দু’টি ভেড়া, আর মেয়ে হলে একটি ছাগল বা একটি ভেড়া যবেহ করবে। আর কেউ যদি কোরবানির সাথে আকীকা সেরে নিতে চায়, তবে তা বৈধ হবে। যেহেতু কোরবানিতে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকে, তেমনি আকীকাতেও একই উদ্দেশ্য থাকে।
তাই আকীকার কারণে কোরবানিতে কোনো সমস্যা হবে না। এটাই অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। এখানে ছেলের জন্য দুই শরীক এবং মেয়ের জন্য এক শরীক রাখবে। কেউ অপারগ হলে ছেলের পক্ষ হতে একটি ছাগল বা ভেড়া অথবা গরুর এক অংশ দ্বারা আকীকা করা জায়েজ হবে। (সুনানে নাসায়ী : ৪৫৩১)।
একটি গরুর মধ্যে যেমন কোরবানির সাত অংশ থাকে, তেমনি আকীকাতেও সাত অংশ হতে পারে। (কিফায়াতুল মুফতী : ৮ নং খন্ড)। যে জন্তু দ্বারা কোরবানি জায়েজ, সেসব জন্তু দ্বারা আকীকাও জায়েজ। আর যে জন্তু দ্বারা কোরবানি হয় না, তা দ্বারা আকীকাও সহীহ হবে না। (বেহেশতি জেওড় : ৩ নং খন্ড)। আকীকার গোস্ত সন্তানের পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী, ভাই-বোনসহ সকলে খেতে পারবে।
এমনকি কেউ বড় হয়ে আকীকা করলে সে নিজেও আকীকার গোস্ত খেতে পারবে। তবে আকীকার গোস্তের এক-তৃতীয়াংশ গোস্ত গরিব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া উত্তম। অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের খাওয়াতে পারবে। (কিফয়াতুল মুফতি : ৮ নং খন্ড)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন