সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আকীকার ফজিলত ও আহকাম

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৫৯ পিএম

আকীকা শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ হল, নবজাতকের মাথার জন্মলগ্নের চুল। যেমন বলা হয়, নবজাতকের আকীকা করা হয়েছে, এর অর্থ হলো তার মাথার চুল কামিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ইসলামী শরীয়তে আকীকা বলতে বোঝায়, নবজাতকের জন্মের পর তার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট জন্তু যবেহ করা।

এটাকেই মানুষ আকীকা বলে জানে। কেউ এই বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন বলে আমার জানা নেই। আকীকার ফজিলত : হাদীস শরীফে আকীকার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীর হাদীসে আছে, ‘হযরত সালমান ইবনে আমের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানের সাথে একটি আকীকা নিবন্ধিত রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষ হতে রক্ত প্রবাহিত কর এবং আপদ-বিপদ দুরীভূত কর। (সহীহ বুখারী : ৫৪৭১; ২/৮২২)।

হাদীস শরীফে আরও বলা হয়েছে, ‘হযরত সামুরাহ ইবনে জুন্দুর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকীকার সাথে বন্ধনকৃত। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জন্তু যবেহ করবে এবং তার মাথার চুল মুন্ডন করে নাম রাখবে। সুনানে নাসায়ী : ৪২২০; ২/১৬৭)।

আকীকার মাসআলা: উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা প্রমাণিত হয় যে, আকীকা করা ওয়াজিব নয়; বরং সুন্নাত বা মুস্তাহাব। ছেলে অথবা মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সপ্তম দিবসে তার নাম রাখা এবং আকীকা করা সুন্নাত। যদি কেউ সপ্তম দিবসে আকীকা করতে অপারগ হয়, তবে ১৪ অথবা ২১তম দিবসে বা এরূপ সাতদিন অন্তর যে কোনো দিন আকীকা করা উত্তম। তবে এতে প্রথম সাত দিনে করার যে সওয়াব রয়েছে, তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

আকীকার নিয়ম হল, ভ‚মিষ্ঠ সন্তান ছেলে হলে তার আকীকা দু’টি ছাগল অথবা দু’টি ভেড়া, আর মেয়ে হলে একটি ছাগল বা একটি ভেড়া যবেহ করবে। আর কেউ যদি কোরবানির সাথে আকীকা সেরে নিতে চায়, তবে তা বৈধ হবে। যেহেতু কোরবানিতে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকে, তেমনি আকীকাতেও একই উদ্দেশ্য থাকে।
তাই আকীকার কারণে কোরবানিতে কোনো সমস্যা হবে না। এটাই অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। এখানে ছেলের জন্য দুই শরীক এবং মেয়ের জন্য এক শরীক রাখবে। কেউ অপারগ হলে ছেলের পক্ষ হতে একটি ছাগল বা ভেড়া অথবা গরুর এক অংশ দ্বারা আকীকা করা জায়েজ হবে। (সুনানে নাসায়ী : ৪৫৩১)।

একটি গরুর মধ্যে যেমন কোরবানির সাত অংশ থাকে, তেমনি আকীকাতেও সাত অংশ হতে পারে। (কিফায়াতুল মুফতী : ৮ নং খন্ড)। যে জন্তু দ্বারা কোরবানি জায়েজ, সেসব জন্তু দ্বারা আকীকাও জায়েজ। আর যে জন্তু দ্বারা কোরবানি হয় না, তা দ্বারা আকীকাও সহীহ হবে না। (বেহেশতি জেওড় : ৩ নং খন্ড)। আকীকার গোস্ত সন্তানের পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী, ভাই-বোনসহ সকলে খেতে পারবে।

এমনকি কেউ বড় হয়ে আকীকা করলে সে নিজেও আকীকার গোস্ত খেতে পারবে। তবে আকীকার গোস্তের এক-তৃতীয়াংশ গোস্ত গরিব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া উত্তম। অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের খাওয়াতে পারবে। (কিফয়াতুল মুফতি : ৮ নং খন্ড)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মাহিন আদনান ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 1
আকীকা কাকে বলে : আকীকা শব্দের অর্থ কাটা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যে প্রাণীকে জবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে। চাই তা ছেলে হোক বা মেয়ে। কেননা, এ প্রাণীর হলক তথা গলা কাটা করা হয়।
Total Reply(0)
মোঃ জামান হোসেন জন ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 1
যে সুন্নতগুলোর তাৎপর্য অনেক কিন্তু আমরা তার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেই না আকীকা তার অন্যতম। ইসলাম পূর্বকাল থেকে চলে আসা এই আমলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তিনি একে অনুমোদন করেছেন, নিজে করেছেন এবং অন্যদের করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
Total Reply(0)
মু. অহিদুল হক ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
কিন্তু এ সুন্নতটি আজ বিস্মৃতপ্রায়। মুসলিমগণ এর আমল বাদ দিয়ে এর স্থলে চালু করেছেন নানা বিজাতীয় ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন রীতিনীতি।
Total Reply(0)
হাঃমাওঃ শিব্বির আহমদ হাবিবী ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
হাদীসের ইঙ্গিত থেকে যেমন অনুমিত হয়, এর সঙ্গে শিশুর পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ জড়িত। আমরা দেখি নব জাতকের এটা-সেটা রোগ-বালাই লেগেই থাকে। রোজই তার চিকিৎসার পেছনে, পথ্য ও ওষুধ কিনতে গিয়ে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। হাজার হাজার টাকা আমরা অসন্তুষ্টি আর অভিযোগ নিয়ে শিশুর অসুখ-বিসুখের পেছনে ব্যয় করতে পারি অথচ আকীকার মতো চমৎকার একটি আমল করতে পারি না, একটি বা দু’টি ছাগল জবাইয়ের মাধ্যমে। যার মাধ্যমে অনেক বিপদাপদ থেকেই বেঁচে যেতে পারে আমাদের প্রিয় আত্মজ।
Total Reply(0)
বাহলুল ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
‘জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিল, যখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতো, সে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম।’ [আবূ দাউদ : ২৮৪৩; বাইহাকী : ১৯৭৬৬; মুস্তাদরাক : ৭৫৯৪]
Total Reply(0)
নাহিয়ান ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
সন্তান দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। কেননা, সন্তানই অন্যতম সেরা নেয়ামত।
Total Reply(0)
saif ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:০৫ এএম says : 0
সন্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ এমন গুরুত্ব পূর্ন বিষয় নিয়ে লেখার জন্যে এবং প্রকাশ করার জন্যে। আল্লাহ্‌ তায়ালা আপয়ানদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুন। আসলেই ইনকিলাব পত্রিকার এই একটা বিষয়ই আমাকে বাধ্যকরে একবার দেখতে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন