একজন মুমিন অপর মুমিনের দোসর, বন্ধু ও অন্তরঙ্গ সাথী। জীবন চলার পথে সকল অঙ্গনে তারা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। আল কোরআনে এই বিশেষত্বগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন, এবার সেদিকে লক্ষ্য করা যাক। ১. আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। (সূরা হুযরাত : আয়াত ১০)।
এই আয়াতে যে বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো, ক. সকল মুমিন একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ। এই বন্ধন অবিচ্ছেদ্য ও অভঙ্গুর। সুখে-দু:খে, কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনার সর্বত্রই এর জোয়ার ধারা মুমিনদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে তোলে। খ. মুমিনগণ আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে। তার নির্দেশ পালনে কোনো রকম শৈথিল্য প্রদর্শন করে না এবং তার নির্দেশের বিরোধীতা করে না। তাই তারা সর্বদাই আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হিসেবে স্নেহ, করুণা ও অনুগ্রহ লাভ করে থাকে।
২. ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তারা তোমাকে ধোকা দিতে চায়, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই তোমাকে তার সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। আর তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। যদি তুমি ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, তার সবকিছু ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। (সূরা আনফাল : আয়াত ৬২-৬৩)।
এই আয়াতে আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সা. কে স্মরণ করিযে দিয়েছেন যে, ক. বিশ্ববাসীরা আপনার সাথে ধোকা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করলে আপনার ব্যথিত ও চিন্তান্বিত হওয়ার কিছুই নেই। কেননা, আল্লাহপাক আপনার সমগ্র দায়িত্ব নিজ হাতে ধারণ করে আছেন। মুনাফিকদের শঠতা ও প্রবঞ্চনা আপনার কোনো অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। খ. মহান আল্লাহপাক মুমিনদের অন্তরে অবিচ্ছেদ্য প্রীতি ও ভালোবাসা স্থাপন করেছেন। এটা আল্লাহর এক অনুপম অনুগ্রহ। তা না হলে তাদেরকে প্রীতি ও স্নেহের বাধনে আবদ্ধ করা কারও পক্ষে কোনোভাবে সম্ভব ছিল না।
৩. ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা সকলে আল্লাহর রুজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, এবং বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর রহমতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহপাক তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গিয়েছ। আর তোমরা আগুনের গর্তের কিনারায় ছিলে, তারপর তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহপাক তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। (সূরা আল ইমরান : ১৩০)।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ক. মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর রুজ্জু বা বিধানকে একতা ও আন্তরিকতার সাথে ধারন করা। বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতাকে সর্বোতোভাবে বর্জন ও পরিহার করা। কেননা, বিজয় ও সফলতা অর্জনে ঐক্য ও একতাবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একতাই সফলতার চাবিকাঠি স্বরূপ। খ. মুমিনগণকে আল্লাহপাক জাহান্নামের কিনারা থেকে রক্ষা করে জান্নাতের সুখময় পরিমন্ডলে নিয়ে এসেছেন। এটা তার অফুরন্ত দয়া ও করুণার মূর্ত প্রকাশ। হেদায়াতপ্রাপ্তদের জন্য বিরাট এক নেয়ামত।
৪. ইরশাদ হয়েছে, তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বর্ষণের কারণে তুমি তাদের প্রতি বিনম্র হয়েছিল। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের হতে, কঠিন হৃদয়ের হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত; সুতরাং তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর; তারপর যখন দৃঢ় সংকল্প করবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত১৫৯)।
এই আয়াতে আল্লাহপাক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, ক. ইসলামের প্রচার ও প্রসারের মূল হলো, দয়ার্দ্রতা, নম্রতা ও সহৃদয়তা, যা রাসূলুল্লাহ সা. এর মাঝে পরিপূর্ণ ছিল। খ. ঈমানদারগণ পরস্পর পরামর্শ আলোচনা ও সহযোগিতাসূলভ আচরণ করে থাকে। এর কোনো ব্যত্যয় হয় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন