মুসলিম জাতি এক অনন্য জাতি। তাদের রয়েছে সোনালি ইতিহাস, গৌরবময় ঐতিহ্য। তাদের মনোবল ছিল আকাশছোঁয়া, হৃদয় ছিল দৃঢ়চেতা। তারা ছিল সতেজ ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী।
তাদের ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রজীবন পুরোটাই ছিল অনুসরণীয়, ঈর্ষণীয় ও সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ। মুসলিম জাতি ছিল বিজয়ী জাতি। অন্যায় ও জুলুমের কাছে নতিস্বীকার তাদের ইতিহাসে নেই। সমগ্র পৃথিবী আমাদের চিনেছে, জেনেছে এ পরিচয়েই। কিন্তু আজ এ কী হচ্ছে! আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে নিগৃহীত, নির্যাতিত ও অধিকারবঞ্চিত সম্প্রদায় হলো মুসলমান। তাদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রু কোনো কিছুরই আজ নিরাপত্তা নেই। মুসলমানরা আজ ইহুদি, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, শিখ, কমিউনিস্ট- এক কথায় সকল কুফরি শক্তির হাতে মার খেয়ে খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। পৃথিবীর আকাশ-বাতাস মুসলমানের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে, রক্তে লাল হয়ে উঠছে এ জমিন, তবুও যেন তাদের দিকে ফিরে তাকানোরও কেউ নেই।
কোরআনে কারীমে ঘোষণা হচ্ছে, তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদের পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছেন। তিনি তাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করবেন, যে দ্বীন তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। এরপর যে অকৃতজ্ঞ হয় তারাই পাপিষ্ঠ। - সূরা আন নূর (২৪) : ৫৫।
আল্লাহ তায়ালা কখনোই ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। তিনি মিথ্যা বলতে পারেন না। অতএব, আমাদের ওপর যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তার কারণ আমাদের ঈমান ও আমলের ত্রুটি ও ঘাটতি। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা তার এ ওয়াদা পূরণ করে দেখিয়েছেন আবার সে গুণ ও বৈশিষ্ট্য হারানোর দরুন মুসলমানদের বিপর্যয়ের সম্মুখীনও করেছেন।
হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়্যব রহ. বলেন, বর্তমান যুগে মুসলমানরা অভিযোগ করে, বিভিন্ন জাতি আমাদের ওপর জুলুম করছে- খ্রিষ্টানরা এই জুুলুম করেছে, হিন্দুরা এই জুলুম করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, মুসলমানদের হত্যা করেছে। আমি বলি- এ অভিযোগ ভুল। কেউ তোমার প্রতি জুলুম করেনি; তুমি নিজেই নিজের ওপর জুলুম করেছ।
কারণ, যে রূহ ও জীবনী শক্তির কারণে তুমি জীবিত ছিলে, অর্থাৎ কোরআন ও ঈমান, তা তুমি ধ্বংস করে লাশে পরিণত হয়েছ। এখন সবার কর্তব্য হলো, লাশ দাফন করে দেয়া, জ্বালিয়ে দেয়া। লাশ জমিনে পড়ে থাকলে দুর্গন্ধ হয়ে পরিবেশ দূষিত করে তুলবে। কেউ লাশ জ্বালিয়ে দিলে অথবা লাশে আঘাত করলে অভিযোগ কেন?
এ করুণ পরিণতি থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো, নিজের মধ্যে রূহ ও জীবনী শক্তি সৃষ্টি করা। জীবিতের ওপর হামলার দুঃসাহস কেউ করবে না। লাশ পড়ে থাকলে যে কেউ তার ওপর হামলা করবে। তুমি তো লাশের মতো হয়ে গেছ। এখন কেউ জ্বালিয়ে দিলে কাঁদো কেন? আঘাত করলে অভিযোগ করো কেন? তুমি নিজের মধ্যে রূহ ও জীবনী শক্তি সৃষ্টি করো। অর্থাৎ গোনাহ বর্জন করো এবং নেক আমল করো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন