সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহররমের ১০ তারিখ মহাপ্রলয়ের দিন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মাহে মহররমে হযরত হুসাইন রা. স্বীয় লোকজনসহ জালিম ইয়াযীদ ও তার লোকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেছেন। সে জন্য মাহে মহররমে হযরত হুসাইন রা.-এর এ ত্যাগের কথা স্মরণ করে দীনের হিফাজতের জন্য জান-মাল কোরবানি করার প্রত্যয় করা আমাদের কর্তব্য। তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, সৃষ্ট জগতের প্রলয় শিঙ্গার ফুৎকারের মাধ্যমে সাধিত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেটা হবে নির্ধারিত দিনে।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ২০)। আরও ইরশাদ হয়েছে : ‘যেদিন শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেদিন পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর বাসিন্দারা বেকারার হয়ে যাবে।’ (সূরা নমল : আয়াত ৮৭)। এই ফুৎকার মহররমের ১০ তারিখ কোনো এক শুক্রবার দিন উচ্চকিত হবে। কিন্তু কিছু লোক আশুরার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে অতিরঞ্জিত ও গর্হিত কার্যকলাপ দ্বারা বিদআত ও নাজায়েজ বিষয়ের অবতারণা করে চলেছেন। মুসলমানদের সেসব গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন :

১. আশুরার সিয়ামকে শোক পালনের উদ্দেশ্যে করা : মহররম মাসের বা আশুরার সুন্নত আমল হিসেবে রোজা রাখা কর্তব্য। আশুরার সেই রোজার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হাদিস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। আর তা হলো, অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ ও সিয়াম পালন করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে শোক পালনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের কোনো সুযোগ নেই। অথচ অনেকে তা করে থাকেন। বলা বাহুল্য, আশুরার এই সিয়ামের সূচনা হয়েছে মুসা আ.-এর সময় থেকে। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় জীবদ্দশায় সেই সিয়াম পালন করেছেন। অপরদিকে কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওফাতের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরিতে। হাদিস শরীফে সেই রোজা পালনের উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সা. যে উদ্দেশ্যে আশুরার রোজা রেখেছেন, আমাদেরও সেই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে রোজা রাখতে হবে।

২. ১০ই মহররমকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা : রাফেজিরা (কট্টর শিয়া) হযরত হুসাইন রা.-এর শাহাদতের শোক স্বরূপ শোক দিবস পালন করে। পক্ষান্তরে একটি গোষ্ঠী রাফেজিদের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে এ দিনটিকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করে। এ উভয় প্রকার কাজই গর্হিত ও বিদআত। রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এ দিনটিকে শোক দিবস হিসেবেও পালন করেননি, আবার আনন্দ উৎসবে পরিণত করেননি। তারা শুধুমাত্র ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ সিয়াম পালন করেছেন। সুতরাং আমাদেরও তা-ই করতে হবে।

৩. তাযিয়া : তাযিয়া অর্থ বিপদে সান্ত¦না দেয়া। তবে বর্তমানে শাহাদাতে হুসাইন রা.-এর শোক মিছিলে রূপ নিয়েছে। অথচ ইসলামে কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক (আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিনের অধিক) শোক পালন করা নিষেধ। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৪৬২)। তাই শিয়াদের উদ্ভাবিত উক্ত তাযিয়া সম্পূর্ণ বিদআত। তা থেকে সকলের দূরে থাকতে হবে।

৪. আশুরা উপলক্ষে চোখে সুরমা লাগানো : অনেকেই আশুরার দিন বা ১০ই মহররম উপলক্ষে এদিন বিশেষ ফজিলতের আশায় চোখে সুরমা লাগিয়ে থাকেন। এটাও সুস্পষ্ট বিদাআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. আশুরার নিয়মরূপে চোখে সুরমা লাগাননি এবং কোনো ফজিলত বর্ণনা করেননি। এ মর্মে যা প্রচলিত আছে, তা মাওযূ বা জাল।

৫. ১০ই মহররমে বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা : অনেকে ১০ই মহররমে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে থাকেন। এটাও সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এদিনে বিশেষ কোনো সালাত আদায় করেছেন বা বলেছেন মর্মে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল নেই। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সিয়াম ব্যতীত আশুরা সম্পর্কিত কোনো বিশেষ নিয়মের আমলের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং আশুরা উপলক্ষে আমাদের ইসলামের সহীহ আমলরূপে রোজা পালন করতে হবে। এ জন্য আশুরার দিন এবং তার সাথে মিলিয়ে তার আগের বা পরের দিনসহ রোজা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর এ মাসকে সম্মানিত জ্ঞান করে এ মাসে দাঙ্গা-ফাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়াও কারবালার ঘটনার ব্যাপারে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হতে বিরত থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Jibon Dawan ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসে একটি অতীব গুরুত্ব স্মরণীয় ঘটনা। এই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজও মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয় কারবালার ঘটনা স্মরণ করে চোখের জ্বলে বুক ভাসায়।
Total Reply(0)
Md Hasan ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
ইসলামী খেলাফতের ব্যাপারে কোন ধরনের আপোষ না করার কারণেই কারবালার ঘটনা ঘটেছিল। কারবালার ঘটনা আমাদেরকে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করার কথাই শিক্ষা দেয়।
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
প্রায় ১৪০০ বছর ধরে সারা বিশ্বের মুসলমান ১০ই মহররমের শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রোজা রাখেন।
Total Reply(0)
Faysal Mohammed ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
‘সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে পবিত্র আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। মহান আল্লাহ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। আশুরার দিন আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদমকে (আ:) সৃষ্টি করেছেন। এই দিন হযরত নূহ (আ:)-এর আমলের প্লাবন শেষ হয় এবং নূহ (আ:)-এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে।
Total Reply(0)
Md Foyej Ullah ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসটি বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। আকাশ-জমিন সৃষ্টিসহ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনেই সংঘটিত হয়েছিল। পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা এ দিন ঘটেছিল। মহররম সংগ্রামী শিক্ষার এবং আত্মসচেতনতার মাস। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী চেতনা খুঁজে পাওয়ার মাস।
Total Reply(0)
belal mahmud ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
মহররম আসে দায়িত্ব পালনে সাহসিকতার পথপ্রদর্শক হিসেবে। আসে নির্ভীকভাবে পথ চলার কল্যাণময় শুভ বার্তা নিয়ে। মহররম আসে পুরনো বছরের জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে নতুন সাজে সজ্জিত করতে। এ মাস আসে আমাদের নতুন শপথ ও প্রত্যয় গ্রহণের অঙ্গীকার নিয়ে। মহররম মাস এলে মুসলিম বিশ্বে জেগে ওঠে ইসলামী সংস্কৃতি।
Total Reply(0)
Kamal ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
মহররম সব অন্যায়, পাপাচার, অনাচার ও সহিংসতাকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের মানসিক, দৈহিক ও আত্মিকভাবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শাশ্বত শিক্ষা দেয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন