পাঁচ
আমি মনে করি, কেবল নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য বহুতল অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করা মাকরূহ থেকে মুক্ত নয়। তবে ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ভাড়া দিয়ে অর্থ রোজগার করার জন্য অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করা মাকরূহ নয়। বরং তা ছাওয়াবের কাজও হতে পারে, যদি মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান কল্পে তা তৈরি করা হয়। বিশেষত তা যদি বড় বড় শহরগুলোতে তৈরি করা হয়। কারণ বর্তমান যুগে আমাদের এই ঢাকা শহরের মত শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ করা না হলে; আরো দু চার দশটি ঢাকা শহরের মত শহরের প্রয়োজন হবে। তখন দেখা দিবে তীব্র ভূমি সংকট। ইসলাম এমন কোন সিদ্ধান্ত দেয় না, যা মানুষের সমস্যা বাড়ায়। ইসলাম এসেছে মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য, সমস্যা বাড়াবার জন্য নয়। এ কারণেই ফকীহগণ বলেছেন, ‘যেখানেই মানব কল্যাণ সেখানেই ইসলাম’।
স্থাপত্য শিল্পের প্রতি ইসলামের দিক নির্দেশনা ঃ ইসলামী গবেষকগণ স্থাপত্য শিল্প নির্মাণে বেশ কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামের দৃষ্টিতে যে সব মূলনীতি অবলম্বন করে স্থাপত্য শিল্প নির্মিত হওয়া আবশ্যক তার বিবরণও দিয়েছেন। আমরা এখানে পাঠকদের সামনে তা পেশ করছি :
স্থাপত্য শিল্প নির্র্মাণে ইসলামের নির্দেশিত সীমারেখা ও বৈশিষ্ট্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে ঃ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মসজিদ নির্মাণের সময় অবশ্যই নবী স. কর্তৃক মাসজিদে নববী তৈরিকালে নির্ধারিত বিশেষ শিল্পরূপটির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাকে প্রায় চতুর্ভূজাকৃতি বিশিষ্ট করে ভিতরে বাইরে একেবারে সাদাসিধে করে তৈরি করতে হবে। কিবলা ছাড়া বাকি তিন দিকে দরজা জানালা রাখা যাবে। এটাই হলো ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদের স্থাপত্য রীতি।
বারেতা আলম আল-ইসলামী মসজিদের ডিজাইনে তার স্থাপত্য রীতি ও রূপ-রেখা অক্ষুণœ রাখা আবশ্যক বলে মনে করে। এ কারণেই তারা গোটা বিশ্বের মুসলিমদেরকে মসজিদের স্থাপত্য রীতি ও রূপ-রেখা অক্ষুণœ রাখার জন্য আহবান জানিয়েছেন। এখানে আমরা রাবেতার উপদেশাবলি পেশ করছি:
মসজিদকে মুসলিম সমাজের প্রাণকেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতে হবে। কেননা ইসলামে সমাজের সকল জনহিতকর কার্যক্রম ধর্মীয় কর্তব্যের শামিল। কাজেই মসজিদের জন্য নির্বাচিত স্থানটি হবে একেবারে শহরের মধ্যে বা এমন উন্মুক্ত স্থানে যেখানে সকলেই সহজে যাতায়াত করতে পারে। তা শহরেই হোক কিংবা গ্রামে বা মহল্লায় বা কর্মস্থলে হোক।
মসজিদ সাদাসিধেভাবে তৈরি করতে হবে। যে পরিবেশে তা তৈরি করা হচ্ছে তার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য স্থাপত্য রীতিতে আধুনিক কলা কৌশলের ব্যবহার করা যাবে। যেমন: ক) সালাতের স্থানটি এমন স্বাস্থ্যকর হতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস থাকে এবং অতিরিক্ত ঠাÐাও না হয়; আবার অতিরিক্ত গরমও না হয়। খ) মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে সালাত আদায়ের জন্য রাখা যাবে, যেখানে তারা পুরুষদের সাথে মেলামেশা না করে যাতায়াত করতে পারে।গ) মসজিদে সালাতের স্থান ছাড়াও একটি লাইব্রেরী, আর তাতে বসে লেখা-পড়া করার মত স্থান এবং একটি মিলনায়তন বা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করার জন্য হল ঘর রাখা যাবে। ঘ) মসজিদের পাশে সালাতের সময় ছাড়া অন্য সময়, বিশেষত শীত-গ্রীষ্মের ছুটির সময় যাতে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে, আনন্দ-বিনোদন করতে পারে সে জন্য খেলার মাঠ থাকতে পারে।ঙ) মেয়েদেরকে ঘর রান্নার কাজ শেখাবার জন্য একটি বিশেষ বিভাগ রাখা যাবে। চ) মসজিদের সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা দানের জন্য একটি ডিস্পেনসারী রাখা যাবে। মৃত মানুষদের গোসল দান ও কাফন পরাবার জন্য একটি আলাদা কক্ষ রাখা যাবে। ছ) মসজিদ নির্মাণের সময় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে, যেখানে মসজিদের সম্মান রক্ষা করা যায়। সুতরাং তা সিনেমা হল বা ক্লাব ইত্যাদির পাশে নির্মাণ করা ঠিক হবে না; যেখানে মসজিদের সম্মান রক্ষা করা যাবে না। জ) মসজিদের পাশে মসজিদ সংলগ্ন মুসাফিরখানা থাকতে পারে, যেখানে বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা ও মেহমানদারী করার ব্যবস্থা থাকবে।
পর্দার ব্যবস্থা থাকা ঃ ইসলামের দৃষ্টিতে স্থাপত্য শিল্প নির্মাণের সময় যে সব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় তার অর একটি হলো বাড়ি-ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে মুসলিমদের পর্দা রক্ষা করা সহজতর হয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদেরকে সতর ঢাকতে ও পর্দা করতে আদেশ দিয়েছেন। মানুষের নজরের বাইরে থাকতে বলেছেন। অন্যের বাড়ি-ঘর পূর্বানুমতি না নিয়ে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন