ভারতে গত কয়েক বছরে নব্বই লাখের মতো নারী-শিশুকে ভ্রুণ অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের গড় হিসেবে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ লাখ নারী আত্মহত্যা করে। চিকিৎসকদের নীতিভ্রষ্টতার সুযোগ নিয়ে অনেক দম্পতি গর্ভাবস্থায় তাদের শিশুর লিঙ্গ জেনে নেয়। ততদিনে শিশুটির গর্ভকালীন বয়স চার থেকে সাত মাস হয়ে যায়। এ সময় গর্ভপাত ঘটিয়ে নারী শিশুর জন্ম রোধ করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রুণ হত্যা করা মানব হত্যার সমান মহা পাপ। জন্মের পর একটি শিশু হত্যা যেমন অপরাধ, প্রাণ সঞ্চারিত ভ্রুণ হত্যাও সমান অপরাধ। এসব মূলত নারী জীবনের দুঃখ, হতাশা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখে দেখে একটি সমাজ এমন পাপে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ইসলাম-পূর্ব আরবে কোনো কোনো গোত্র নিজের কন্যা অন্যত্র বিয়ে দেয়াকে অবমাননাকর মনে করত বলে তারা কন্যা শিশুদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলত। যে জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে সংস্কার কাজ পরিচালনা করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন (কুসংস্কারগ্রস্ত অসুস্থ সমাজের) কাউকে সংবাদ দেয়া হয় যে, তোমার কন্যা সন্তান হয়েছে তখন তার চেহারা হয়ে যায় মলিন। -আল-কোরআন। আল্লাহ অন্যত্র বলে দিয়েছেন, নারী বা পুরুষ যেই ঈমান আনে ও নেক কাজ করে তাদের উভয়কেই আমি একই ধরনের উত্তম প্রতিদান দেবো। -আল-কোরআন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়ে নারীর সম্মানকে আকাশচুম্বী করে দেন। অসংখ্য হাদিস এ মর্মে বিবৃত করেন। তিনি ঘোষণা দেন, নারীদের প্রতি উত্তম আচরণ আমার সর্বাপেক্ষা বড় অগ্রাধিকার। পৃথিবীতে আমার প্রিয় বিষয়সমূহের অন্যতম মাতৃজাতি। মায়েদের পদতলে সন্তানের বেহেশত।
এক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জানতে চাইল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি সবচেয়ে বেশি উত্তম আচরণ কার সাথে করব? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তোমার মায়ের সাথে। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল, এরপর কে? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারো একই প্রশ্ন করলে মহানবী (সা.) আবার উত্তর দিলেন, তোমার মা। লোকটি তখন বলল, এরপর কে? নবীজী (সা.) বললেন, তোমার পিতা।
এখানে মাকে বাবার চেয়েও তিন গুণ বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলাম নারীকে দুনিয়ার সব ধর্ম ও আদর্শের চেয়ে বেশি সম্মান-মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে। নারীকে বিয়ের অধিকার, তার সম্মানজনক মোহরানার অধিকার, স্বামী পছন্দ করার অধিকার, নিজের মত প্রকাশের অধিকার, খোরপোষ, বাসস্থান, শিক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদির সকল অধিকার এবং নারী মর্যাদার নীতিমালা রক্ষা করে মানুষের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যে তার জীবনের অধিকার, পবিত্র পারিবারিক সম্পর্কের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, উপার্জনের অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, ধর্মীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার ইসলামের মতো আর কেউই নিশ্চিত করেনি। ইতিহাস পাঠক লক্ষ করলেই নানা ধর্মে নানা মতবাদে যুগে যুগে নারীর সাথে কৃত আচরণের বিবরণ পেয়ে যাবেন। সেই তুলনায় ইসলাম নারীকে কী দিয়েছে তা মিলিয়ে দেখলে ইসলাম যে মানবতার মুক্তির পয়গাম এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আধুনিক সময়েও মানবাধিকার ও নারী মুক্তির নামে মানব সভ্যতার জন্য অকল্যাণকর নানা লোভ ও টোপ দিয়ে নারীকে যেভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এর মারাত্মক পরিণতি ও ভয়াবহ ফলাফল চোখে না দেখা পর্যন্ত মানুষ অনুধাবন করতে পারবে না। পশ্চিমে এর বিষফল অনেকটা চোখে পড়ছে। ইসলাম মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাব বিবেচনা করেই বিধান দেয়। এসব খুব গভীরভাবে খেয়াল করলে এখানেও মানুষ ইসলামের মহান সৌন্দর্য দেখতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন