সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নারীর জীবনে কেন এ নির্মমতা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সংবাদ এসেছে, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে বর্তমানে কোনো নারী নেই। আরেক গ্রামে ৮০ জন পুরুষের বিপরীতে একজন করে নারী। উত্তর প্রদেশের এক গ্রামে এক স্ত্রীর জন্য গড়ে পাঁচ থেকে সাতজন স্বামী। এসব নারী বিহারসহ ইউপির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ক্রীতদাসীর মতো খরিদ করে আনা হয়। এদের স্বামী-স্ত্রী কিভাবে বলা যাবে?

কারণ, হিন্দু ধর্মেও তো শাস্ত্রীয়ভাবে এক নারীর স্বামী বহু পুরুষ হতে পারে না। পৌরাণিক কাহিনীতে এ ধরনের কথা থাকলেও বাস্তব জীবনে এমন হতে পারে না। ইসলামে তো এসব কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী শিশুর ভ্রুণ হত্যা বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে, নির্মম পিতা-মাতারা নীতিহীন চিকিৎসকদের সহায়তায় এভাবে আল্লাহর দান ও মহান নিয়ামত কন্যাশিশুকে জন্মের আগেই হত্যা করতে থাকলে আগামী দিনের ভারতীয় সমাজ কেমন অধঃপতনের সম্মুখীন হবে তা কল্পনাও করা যায় না।

ইসলামপূর্ব যুগের নারী শিশু হত্যার তুলনায় এ প্রবণতা বহুগুণ বেশি ক্ষতি বয়ে আনবে। কেননা, যুগ যুগ চেষ্টার পর মানব সভ্যতাকে ইসলাম বর্তমান উন্নত ও আধুনিক এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মুসলিম সমাজ পারিবারিক দিক দিয়ে একটি পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে।

পশ্চিমা সভ্যতায় এসব বালাই কম। যে জন্য যৌন নৈরাজ্য ওদের সমাজে বেশি। পিতৃপরিচয়হীন শিশুর সংখ্যা সীমাহীন। কুমারী মায়ের সংখ্যাও সে সমাজে ভয়াবহ পর্যায়ের। ভারতবর্ষে কোনো কোনো অঞ্চলে ও কিছু বিশেষ গোত্রে কিছুদিন আগেও ভিন্ন ভিন্ন বিবাহরীতি, ভাইবোনে বিবাহ, এক ব্যক্তির একাধিক বোনকে বিবাহ ইত্যাদি প্রচলিত ছিল।

বর্তমানে আবার নারী জন্মের অনুপাত মানুষের হস্তক্ষেপে অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় এক নারীর বহু স্বামী প্রথা ফিরে আসছে। এটাকে ঘরে ঘরে চরিত্রহীনতা বা সামাজিক পতিতাবৃত্তি বলাও ভুল হবে না। এরা স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃত নয়। বরং এদের যৌনদাসী বললেই সঠিক চিত্রটি ফুটে ওঠে। এ অভিশপ্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রচলিত বিবাহ বিধান ও নারীর সম্মানজনক জীবন প্রবাহ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত সুস্থ হবে না।

ভারতসহ পৃথিবীর সব অঞ্চলে নারীকে যদি ইসলামের প্রদর্শিত পন্থা অনুযায়ী সম্মান অধিকার ও অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাহলে মানুষ তার কন্যাসন্তানকে হত্যা করবে না। কারণ, একটি কন্যাসন্তানই আগামী দিনের মা। দুনিয়ার নবী-রাসূল পীর-আউলিয়া জ্ঞানী-গুণী মনীষী-মহাজন প্রত্যেকেই কোনো না কোনো নারীর সন্তান।

প্রিয় নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছয় বছরের শিশু তখন তিনি মাতৃহারা হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মাতৃজাতির জন্য শুভ কামনা ও অফুরন্ত দোয়া করে গেছেন। দুধ-মা হযরত হালিমা সাদিয়া বৃদ্ধা অবস্থায় একবার মহানবী (সা.)-কে দেখতে এলে তিনি নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন তার বসার জন্য।
তিনি নিজেও ছিলেন চার কন্যার জনক। ছোট মেয়ে হযরত ফাতিমা (রা.)-কে নিজ জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তার সাথে সম্মানের সাথে কথা বলতেন। ফাতিমা বেড়াতে এলে নিজে এগিয়ে গিয়ে তাকে স্বাগত জানাতেন। নিজের জায়গা ছেড়ে তিনি তাকে সেখানেই বসাতেন।

উম্মতকে বলেছেন, ঘরে কোনো শৌখিন জিনিস আনলে ছেলেদের না দিয়ে তা প্রথম কন্যার হাতে তুলে দাও। এরপর অন্যদের দেবে। হাদিস শরীফের ব্যাখ্যা থেকে এমন অনেক প্রেরণা পাওয়া যায়। বলা হয়েছে, তোমরা মেয়েদের দিকে খুব খেয়াল রেখো। তাদের যত্ম নেবে। কারণ, তারা তোমার ঘরে ক’দিনের মেহমান। কন্যাদের সংসার-সন্তানসহ সারা জীবন এক ধরনের সেবিকার মতো জীবন যাপন করতে হয়।

সাহাবায়ে কেরামকে বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা বা বোনকে লালন-পালন করবে, সুশিক্ষা দেবে ও উত্তম ঘরে পাত্রস্থ করবে সে জান্নাতি। সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে এ সংখ্যা কমিয়ে দু’জন, এমনকি শেষ পর্যন্ত একজন কন্যাকে লালন-পালনের ক্ষেত্রেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

তাই মুসলমানরা শিশু কন্যাকে পিতার জান্নাত লাভের বরকতময় কারণ মনে করে থাকেন। মায়ের পদতলে যেমন বেহেশত, কন্যার প্রতি যত্ম, লালন, সম্মান, মায়ামমতা ঠিক তেমনই জান্নাত লাভের নিশ্চিত উপায়। ইসলামে এ প্রেরণা যুগ যুগ ধরে কার্যকর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Masum Bhuiyan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
কন্যা সন্তান হলে অপছন্দ করা, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করা, ইসলামপূর্ব বর্বর জাহেলি যুগের কুপ্রথা। এমন কাজে আল্লাহ তাআলা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন।
Total Reply(0)
সাদ্দাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)
Total Reply(0)
আবেদ খান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
রাস‍ুল (সা.) মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। কন্যা সন্তান লালন-পালনে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
তফসির আলম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
আল্লাহর উপহার ভেবে এবং বাস্তবিক ভালোবেসে যারা কন্যা সন্তানদের প্রতিপালন করবে, সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে, আল্লাহ তাআয়া তাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যারা অবজ্ঞা করবে ও তাদের লালন-পালনে অবহেলা করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি দেবেন। তাই কন্যা সন্তানকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসা উচিত। সেজন্য আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
বিদ্যুৎ মিয়া ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৮ এএম says : 0
কন্যা শিশু ও নারীর প্রতি চরম অবহেলা ও অবিচার হলো জাহেলী যুগের চরিত্র। যে সমাজে নারী কোনো মর্যাদা ছিল না। নারী ও কন্যাদেরকে ভোগ ও আনন্দ বিনোদনের সামগ্রী হিসেবে মনে করা হতো। আজকের আধুনিক দুনিয়ায়ও জাহেলী যুগের প্রেতাত্মারা সজাগ। তাদের প্রতি কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সতর্ক বাণী।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৯ এএম says : 0
অত্যান্ত সুন্দর ও সময়োপযোগী লেখা । লেখককে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
রিপন ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কন্যা সন্তান ও নারীদের প্রতি জাহেলী যুগের মতো আচরণ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। তাদের প্রতি সদ্বয় হওয়ার এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করে হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
মাহফুজ আহমেদ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
সুতরাং সাবধান! কন্যা সন্তান জন্ম নিলেই কোনো নারীকে দোষারোপ করা ঠিক নয়; বরং কন্যা সন্তানের প্রতি সুবিচার করুন। ছেলে সন্তানের মতোই তাকে আদর-যত্নে, মায়া-মমতায় বেড়ে ওঠার সব দায়িত্ব পালন করুন।
Total Reply(0)
Anwar ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৩৬ এএম says : 0
লেখককে জানাচ্ছি অসংখ্য মোবারকবাদ ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন