ঢাকার সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার জাহান বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অধীনস্থদের পদে পদে হয়রানি, ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষের বিনিময়ে লোন প্রদানসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু নিন্দিত ও সমালোচিত খালেদা আক্তারের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। একই অফিসে একই পদে কিভাবে ১০বছর ধরে দায়িত্বপালন করছে তা নিয়েও জনমনে দেখা দিয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা।
উপজেলার একাধিক সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার খুঁটির জোর কোথায় যে, তিনি একই কর্মস্থলে ১০ বছর ধরে রয়েছেন অথচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না!
এদিকে খালেদা আক্তার জাহানের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে রাজাশন এলাকার আব্দুর রহমানের পুত্র মো: আব্দুর রশিদ গত ২৫আগষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন ভুক্তভোগীরাও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলেও পরে খালেদার হয়রানীর ভয়ে আর কথা বলতে রাজী হয়নি।
অভিযোগে থেকে জানা যায়, খালেদা আক্তার মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধিনে আশুলিয়ার জিরাবোতে বিক্রয় কর্মী হিসেবে প্রথমে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সেলাই প্রশিক্ষন কর্মী এরপর পদোন্নতি নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষক হন। এর দীর্ঘদিন পর একই উপজেলায় ২০০৯ সালের ৩ডিসেম্বর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে সংস্থাটির কাঙ্খিত সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। অফিসেও তাকে নিয়মিত পাওয়া যায়না। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবম‚র্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রায় দেড় যুগেরও বেশিসময় ধরে সাভার উপজেলায় থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরমধ্যে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবেই ১০বছর ধরে দায়িত্বপালন করছেন। কিন্তু সরকারী নথি অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা এক অফিসে ৩বছরের বেশি সময় থাকতে পারবে না। তাহলে খালেদা আক্তার কিভাবে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে একই অফিসে রয়েছে... কি মধু আছে এই অফিসে?
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, খালেদা আক্তারকে তার অফিসে কর্মরত স্টাফরা উৎকোচ না দিলে বাৎসরিক এসিআর প্রদান করেন না এমনকি সার্ভিস বহি আপটুডেট করতেও তাকে পারসেন্টটিস দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্য্যালয়ের হিসাব রক্ষক কাম ক্রেডিট সুপারভাইজার নসিমা আক্তার বলেন, ২০০৪ সালের খাদ্য নিরাপত্তাহীন দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও আমাদের ইনক্রিমেন্ট এখনও পাইনি। গত ১৫বছরে ওই প্রকল্পে ইনক্রিমেন্টের প্রায় ৪লাখ টাকা না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তারের গাফলতির কারনে সেই টাকা এখনও আমরা পাচ্ছি না। শুধু নাসিমাই নয় তারমতো প্রশিক্ষক বিলকিস বানুও এখনও টাকা পাননি। সম্প্রতি বিলকিস বানুকে অন্য উপজেলায় বদলিও করে দেন তিনি।
সুপারভাইজার নাসিমার ভাষ্যমতে সারাদেশেই ওই প্রকল্প চলছিল। প্রকল্পের কাজ শেষে সারাদেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পেলেও সাভার উপজেলার কর্মকর্তা খালেদা আক্তার তাদের দুই জনের টাকা আটকে দেন। তাদের কাছ থেকে সুবিধা না পাওয়ায় আজও তারা টাকা পাচ্ছে না এমন অভিযোগ তাদের।
প্রশিক্ষক বিলকিস বানু। সম্প্রতি তাকে বদলি হয়ে ধামরাই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্য্যালয়ের পাঠিয়েছেন। তিনি মুঠফানে বলেন, খালেদা আক্তারের খুটির জোড় টাকা। যার কারনে তাকে কেউ নাড়াতে পারেনা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাভারেই কর্মরত রয়েছে সে। তিনি বলেন, খুদ্র ঋণ দেয়ার নাম করে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের টাকাও তিনি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন। ২০০৪ সালের খাদ্য নিরাপত্তাহীন দরিদ্র মহিলা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও আমার পাওনা ইনক্রিমেন্ট ৬লাখ টাকারও বেশি এখনও পাইনি। যা খালেদা আক্তার আটকে রেখেছে। এসব বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাইনি। অবশেষে তিনি আমাকে ধামরাই উপজেলায় বদলি করে দিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, কত অনুরোধ করে বললাম আমি অসুস্থ্য আমাকে অন্যত্র পাঠিয়েন না কিন্তু সে আমার কথায় কোন কর্নপাতই করলেন না, অথচ সে (খালেদা আক্তার) নিজেই বছরের পর বছর একই যায়গায় রয়েছেন।
জাতীয় মহিলা সংস্থা সাভার শাখার শিক্ষক তমা খন্দকার মুঠফোনে খালেদা আক্তারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও পরে বিভিন্ন চাপের কারনে আর রাজী হয়নি। কিন্তু এক অনুষ্ঠানে খালেদার হাতে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, খালেদা আক্তারের গাজিপুর, আশুলিয়া ও ঢাকায় বাড়ি এবং উত্তরা ও ধানমন্ডিতে ফ্লাট রয়েছে। তিনি নিজে চলাচল করেন দামি প্রিমিও গাড়িতে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার জাহানের সাথে কথা বলতে কয়েকদিন অফিসে ঘুরার পর তাকে পাওয়া যায়। এপ্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই তিনি এ প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তাদের আমার কাছে নিয়ে আসেন, এরপর আমি কথা বললো। তখন তিনি এ প্রতিবেদকসহ উপস্থিত অন্য সংবাদকর্মীদেরও অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন