লালমনিরহাটে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীর ছেলে নব্যকোটিপতি মো. মাইদুল ইসলাম বিজিবি’র গরুর লাইনম্যান হিসেবে কাজের অন্তরালে হুন্ডী ও মাদক পাচার করছে, যা দেখার যেন কেউ নেই। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। মূল সিন্ডিকেট হোতারা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
মো. হারুন ও মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগের কপি দৈনিক ইনকিলাবের এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৯নং আদর্শ গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া ৫নং ওয়ার্ডের বকতার হোসেনের ছেলে মো. মাইদুল ইসলাম, আজগার আলীর ছেলে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রবি ও ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. আমিনুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারীর মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র, হুন্ডী, ইয়াবা, গাঁজা, হিরোইন ও ফেনসিডিল এর ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। সামান্য খুচরা মাছ ব্যবসায়ীর ছেলে হয়ে হুন্ডীর মাধ্যমে ভারতে কোটি কোটি টাকা পাচার করে আজ তিনি কোটিপতি। অপরদিকে দইখাওয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে প্রতিদিন ভারতীয় গরু পাচার করে আনছে। ওই হুন্ডী মাইদুল ইসলাম গং বিজিবির নজর ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন নীরব। ওই সিন্ডিকেটের হোতারা সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং সরকারের ইমেজ নষ্ট করে সীমান্ত পথে অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছে বলেও প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, যার ফলে যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে।
তাদের কারণে স্কুল-কলেজের ছাত্র ও উঠতি বয়সের যুবকরা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়ছেন। কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিভাবক মহল খুবই উদ্বিগ্ন। ওই সিন্ডিকেটের চোরাকারবারীরা এ অবৈধ পথে জিরো থেকে হিরো হয়েছে। তারা খুবই ভয়ংকর ও বেপরোয়া হওয়ায় এলাকাবাসী ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, মাইদুল ইসলাম এর দইখাওয়া বাজার প্রোপারে ৪৪ শতক জমি ক্রয় করে যার ১ শতক জমির মূল্য ৩ লক্ষ টাকা (৪৪ শতক জমির সর্বমোট মূল্য ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা), একই উপজেলার দইখাওয়া বাজার সংলগ্ন ৭.৫ শতক জমি যার মোটমূল্য ৪২ লক্ষ টাকা, দইখাওয়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ৯৪ শতক জমির মোট মূল্য ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা, তার কয়েকটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে স্ত্রীসহ তার নামে বিশাল অংকের টাকা জমা রয়েছে। যার ব্যাংক এ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হলে সমস্ত টাকার হিসাব পাওয়া যাবে। তার বসত বাড়ি ২টি যার নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৫ লক্ষ টাকা।
অপরদিকে মাইদুল ইসলাম গং এর প্রায় ভারতীয় সীমকার্ড সহ ২০টি সীমকার্ড রয়েছে। যা জব্দ করা হলে কিংবা নাম্বার ট্যাগ করা হলে হুন্ডী ও অবৈধ চোরাকারবারীর সমস্ত তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। ওই সীমকার্ডগুলো নিজ নাম ও অন্য নামে উত্তোলণ পূর্বক ব্যবহার করে আসছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে হুন্ডী ও চোরাকারবারী মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রবির বিরুদ্ধেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সে কৃষি জমি ক্রয় করে ৩ একর যার মোটমূল্য ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, তার বাড়ির পাশে আরও ১০ শতক জমি ক্রয় করে যার মোট মূল্য ১০ লক্ষ টাকা, বসত বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করেছে ৫০ লক্ষ টাকা এবং ওই সিন্ডিকেটের হোতা মো. আমিনুর রহমান যাহার ১ একর ক্রয়কৃত জমি রয়েছে, যার আনুমানিক মোট মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, তার বসত বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।
মাত্র ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কোন আয়ের উৎস থেকে এত বিশাল অংকের টাকার মালিক হলো, যা খতিয়ে দেখার দাবী এলাকাবাসীর। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৯নং আদর্শ গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত: আব্দুর রশিদের ছেলে মো. হারুন মিয়া ও একই এলাকার মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মো. মিজানুর রহমান সিন্ডিকেট হোতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করে তেমন কোনো সুফল না পাওয়ায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও ডি.আই.জি রংপুর রেঞ্জ রংপুর এবং অধিনায়ক র্যাব-১৩ রংপুরসহ বিভিন্ন প্রশাসন বরাবরে সমস্ত ডকুমেন্টসহ লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।
অভিযুক্ত সিন্ডিকেট হোতা মাইদুল ইসলাম গং এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি’র গরুর লাইনম্যানের কাজ করছি। অপরদিকে ১০টি পত্রিকায় ফলাওভাবে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ও হাতীবান্ধা সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধির সংবাদ প্রচার হলে র্যাব ও বিজিবি’র টহল জোরদার হয় ও ৯১ পিস ইয়াবা, ১০ কেজি গাজা ও ১০ টি গরুসহ ২ জন গ্রেফতার হন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দৈখাওয়া ও উত্তর জাওরানি এলাকার জয়নাল আবেদীন মেম্বরের ছেলে ও হোসেন আলীর ছেলে যথা ক্রমে শহিদুল ইসলাম (৩৩) ও মজিদুল ইসলাম (৩৫) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পরে র্যাবের সদর দপ্তর রংপুর র্যাব-১৩ ও বিজিবি ৫২৩৭০ ডিএডি আবুল হাসান বাদী হয়ে হাতীবান্ধা থানায় একটি মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত ২ মাদক ব্যবসায়ীকে থানায় সোপর্দ করেছে। টহল জোরদার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে হুন্ডী ও মাদক চোরাকারবারীর সিন্ডিকেট হোতা মাইদুল ইসলাম গং নিজেকে সাধু সাজতে এলাকার সরল ও নিরীহ কিছু লোকজনের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে মাদক দ্রব্য রেখে দিয়ে সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মোবাইলে তথ্য দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতারের বিভিন্ন কূট কৌশল অব্যাহত রেখেছে। মাইদুল ইসলাম গং এতটাই ভয়ংকর তার ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। মাইদুলের বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন