লোকসান কমাতে ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। এরই অংশ হিসেবে আট দেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিমানের আউট স্টেশন অপারেশন ম্যানেজারদেরকে। আগামী ২ অক্টোবরের মধ্যে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিমানের পরিচালনা পর্ষদ সভায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরে বিমানের লোকসান হয়েছে ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই বছরে বিমান থেকে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিমানের আয় ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ৫২ লাখ। ব্যয় ৪ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ওই অর্থ বছরে ৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় লাভ হয়। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় আয় হয়, তার বিপরীতে ব্যয় হয় ৪ হাজার ৭৩০ কোটি ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরে লাভ হয়েছে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার আগের অর্থ বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আয় ৪ হাজার ৬৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ব্যয় হয় ৪ হাজার ৪১৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ লাভ হয়েছে ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
বিমানের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে তিন অর্থ বছরে লাভ হলেও গত অর্থ বছরে বিপুল পরিমান লোকসান করেছে বাংলাদেশ বিমান। বিমানকে লাভজনক করার লক্ষ্যে নতুন নতুন রুট গন্তব্য চিহ্নতকরণ এবং বর্তমান লাভজনক রুটে ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে নতুন গন্তব্য হিসেবে গুয়াংজু, মদিনা, কলম্বো, মালে ইত্যাদি রুটে বিমানের সার্ভিস চালু করা হবে বলে বিমানের একজন কর্মকর্তা জানান। তিনি জানান, একই সাথে লোকসান কমাতে সংকোচন নীতিও অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদেশে বিমানের ১৬টি স্টেশন অপারেশন ম্যানেজারের পদ রয়েছে। এরই মধ্যে দেশে ফিরতে তাদের ট্রান্সফার অর্ডার পাঠানো হয়েছে। ওই অর্ডারে তাদের ২ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্টেশন অপারেশন ম্যানেজারেরা। স্টেশনগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, দুবাই, আবুধাবী, জেদ্দা, রিয়াদ, কলকাতা ও দিল্লি।
জানা গেছে, এই আটটি স্টেশনে বিমানের নিজস্ব লোকবল দিয়ে কার্যক্রম চললেও সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কুয়েত, দোহা, মাস্কাট, দাম্মাম, ইয়াঙ্গুন ও কাঠমান্ডু স্টেশনের অপারেশন কার্যক্রম চলছিল আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মী দিয়ে।
বিমানের লন্ডন অফিসের অপারেশন ম্যানেজারকে ৩৯টি দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে, মালয়েশিয়া অফিসকে ২৭টি, দুবাই অফিসকে ২৫টি সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ফ্লাইট অপারেশন পরিচালনা করতে হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে বসে সহজেই এসব কাজ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে বিমানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক দিন ধরে পর্যালোচনার পরেই বিমান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ঢাকায় বসেই এসব কাজ অনায়াসে করা যায়। এ কারণে এসব স্টেশন ম্যানেজারদের শুধু দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাই নয়, সেই সঙ্গে এ পদগুলোও বিলুপ্ত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুধুমাত্র বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেশন ম্যানেজারেরাই বিদেশের স্টেশনগুলোতে অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। আর নিয়োগের আগে সাত ধরনের পরীক্ষা দিয়ে প্রত্যেক অপারেশন ম্যানেজারকে লাইসেন্স নিতে হয়। সবগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কমপক্ষে দেড় বছর। কেউ চারবার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান না। এসব পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পদগুলো বিলুপ্ত হলে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি এ ধরনের প্রক্রিয়ার ঝক্কি ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবে।
অপরদিকে, সংকোচন নীতির পাশাপাশি বিমানের সার্ভিস ও সেবার মান বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত করার জন্য জিটুজি পর্যায়ে কানাডা থেকে ৩টি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম উড়োজাহাজ ২০২০ সালের মার্চ মাসে, দ্বিতীয় উড়োজাহাজ একই বছর মে মাসে এবং তৃতীয় উড়োজাহাজ ওই বছরের জুন মাসে সংগ্রহ করা হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, উড়োজাহাজ তিনটি চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, কক্সবাজার ও বরিশালসহ সাতটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে এবং কলকাতা ও ইয়াংগুন আঞ্চলিক গন্তব্যে চলাচল করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন