সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামে মুআমালাতের মর্যাদা ও অবস্থান

মাওলানা আহমাদুল্লাহ বিন রুহুল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ইসলামী শরীয়তে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হচ্ছে ঈমান-আকিদা, যা শুদ্ধ না হলে একজন ব্যক্তি মুসলমানই হতে পারে না। ঈমান-আকিদার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইবাদত-বন্দেগির অধ্যায়। এর পরই মুআমালাত ও মুআশারাতের স্থান। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের অধ্যায়গুলোর একটিকে আরেকটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। সকল অধ্যায় একই সুতোয় গাঁথা। হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (স্বাভাবিকভাবে) এ কথাটি বলতেন- ‘যার আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। যার প্রতিশ্রুতির ঠিক নেই তার দ্বীন নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১২৩৮৩)।

অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যার উপার্জন হারাম আল্লাহ পাক তার দোয়া কবুল করেন না। (হাদিস ১০১৫)। অন্য এক হাদিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন, অজু ছাড়া নামাজ কবুল হয় না; আর আত্মসাতের (অর্থাৎ অবৈধভাবে উপার্জিত) সম্পদের ছদকাও কবুল হয় না। (সহিহ মুসলিম : ২২৪; জামে তিরমিযী : ১)।

সুতরাং ঈমান-আকিদা ও ইবাদতের সাথে মুআমালাতের যোগসূত্র অতি গভীর ও সুদৃঢ়। ইসলামী শরীয়তে অনেক দিক থেকেই মুআমালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। এই সীমিত পরিসরে শুধু চারটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

এক. মুআমালাত অধ্যায়টি শরীয়তে ইসলামীর একটি বিস্তৃত অধ্যায়। ইসলামী আইনশাস্ত্রের (ফিকাহ শাস্ত্র) গ্রন্থাদি খুললেই দেখা যাবে, এই অধ্যায়ের আলোচনা কতটা বিস্তৃত।

একজন মুসলমানের গোটা জীবনে মুআমালাতের বিধিনিষেধ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দরকার পড়ে। কারণ, মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে হলে তাকে সবার সাথে ওঠা-বসা, লেনদেন করেই চলতে হয়। লেনদেনের মাধ্যমে জীবন যাপন করা ছাড়া কারো পক্ষে ঠিকমতো ইবাদত-বন্দেগি পালনও সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শরীয়তে মুআমালাত ও লেনদেনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর জন্য বিপুল পরিমাণে স্বতন্ত্র বিধান দেয়া হয়েছে।

দুই. ইসলামী শরীয়তে হকসমূহ (অধিকার ও দায়-দায়িত্ব) দুই ভাগে বিভক্ত। ১. আল্লাহ পাকের হক। ২. বান্দার হক। আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে যদি বান্দার কোনো ত্রুটি হয়ে যায়; আর সে তওবা করে নেয় অথবা ক্ষেত্রবিশেষে তওবা ছাড়াও যদি আল্লাহর মর্জি হয়; তবে সে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু বান্দার হকের ব্যাপারে কেউ ত্রুটি করলে সেটা আল্লাহ ক্ষমা করেন না; যতক্ষণ না অপরাধী নিজেই হকদারের সাথে লেনদেন সাফ করে নেয়।

তিন. ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মুআমালাতের বিধিনিষেধ মেনে চললে ইসলাম তার জন্য আলাদা পুরস্কার ও সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, ছিদ্দীক ও শহীদদের সাথে থাকবে। (জামে তিরমিযী : ১২০৯)।

চার. ইসলামী শরীয়তে মুআমালাতের বিশেষ গুরুত্বের আরেকটি দিক হলো, এটি আল্লাহ কর্তৃক বান্দার পরীক্ষার এক কঠিন ময়দান। কেননা অন্যান্য ময়দানের তুলনায় এখানে বান্দার পার্থিব কল্যাণ ও প্রবৃত্তির চাহিদা একটু বেশিই বিদ্যমান। ফলে শরীয়তের বিধিবিধানের সাথে নফসের মোজাহাদা ও দ্বন্দ্বও হয় বেশি। উদাহরণস্বরূপ : ব্যবসা-বাণিজ্যে বান্দার নিজস্ব উপকারিতা বেশি নজরে আসে। প্রবৃত্তির টানও এই থাকে যে, সত্য-মিথ্যা, জায়েজ-নাজায়েজের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে যেভাবে লাভ বেশি হয় সেই পন্থাই অবলম্বন করা।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালার বিধান বলে, খবরদার! বাহ্যিকভাবে তোমার বিরাট ক্ষতি হয় হোক, তবুও তুমি মিথ্যা, ওজনে কম দেয়া, ভেজাল অথবা কারো সাথে প্রতারণা করতে পারবে না। আল্লাহ পাক তোমার জন্য যে পন্থা হালাল করেছেন তুমি সেটাই অবলম্বন করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mainuddin Mainu ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
লেনদেন মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।লেনদেন ছাড়া মানুষের জীবন পুরোপুরি অচল। ইসলাম ধর্মে মানুষের প্রত্যহিক লেনদেনের ব্যাপারে যথাযথভাবে আলোচনা করেছে।
Total Reply(0)
Nasir Hazary Bin Ahad ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
ইসলামী পরিভাষায় মুয়ামালাত হল সেইসব বিধান যা দ্বারা পারস্পারিক লেনদেন আদান-প্রদান বুঝায়। আর এই আদান-প্রদান কেবলমাত্র দাতা-গ্রহীতার ভিতর সীমাবদ্ব থাকে।
Total Reply(0)
Naimur Rownak ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
পরিবারের গৃহকর্তা কর্তৃক স্ত্রী,সন্তানগণ এবং বৃদ্ব পিতা-মাতাকে যে খাদ্য,পোশাক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ভরণ-পোষণ বলা হয়।ভরণ-পোষণ করা একটি পবিত্র কাজ। এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে বিশেষভাবে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ বলেন, “বিত্তবানেরা নিজ সামর্থ্যে ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে”। [তালাকঃ৭]
Total Reply(0)
M.A. Ajom ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
মানুষের জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ধরনের জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সুদমুক্তভাবে ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল বলা হয়েছে।
Total Reply(0)
MD Akhteruzzaman ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
মুয়ামালাত একটি কল্যাণমূলক বিষয় যার দ্বারা ক্রেতা-বিক্রেতার ভিতর একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।তাই আমরা সকলে এই ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন করব ।
Total Reply(0)
সত্যের সন্ধানে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
সুন্দর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন