বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’র প্রবর্তক ছিলেন কবি উমাইয়া ইবনে আবি ছালত

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মানবের ন্যায় জিন জাতির মধ্যেও মুসলমান ও কাফের আছে এবং তারাও তওহীদ ও আল্লাহর মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। মাঝে মধ্যে ওসব মুসলমান জিন মানুষকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও অসীম ক্ষমতার কথা জানিয়ে অবাক ও বিস্মিত করে দেয়। এ সম্পর্কে সীরাত ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে বহু দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।

এখানে জিনের মুখে শোনা একটি মাত্র পবিত্র বাক্যের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আরবের কোরেশের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন বিখ্যাত কবি উমাইয়া ইবনে আবি ছালত। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে এ কবি ইন্তেকাল করেন। তিনি জাহেলী যুগ ও ইসলামের যুগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি, তবে তার কবিতা শুনতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই আগ্রহী ছিলেন বলে বর্ণিত হয়ে থাকে।

ইতিহাস হতে জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ সা. ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ নাজিল হওয়ার পূর্বে আরবে প্রচলিত ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ লিখে আসছিলেন। সর্বশেষে পূর্ণভাবে তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতে থাকেন। এ সম্পর্কে ইমাম শা’বী বলেন: রসূলুল্লাহ সা. কোনো কাজ শুরুর পূর্বে কোরেশের প্রথা অনুযায়ী ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ (তোমার নামে হে আল্লাহ!) লিখতেন। যখন আয়াত নাজিল হয় : ‘ওয়াকালার কাবু ফিহা বিসমিল্লাহে মাজরেহা’, তখন লিখলেন : ‘বিসমিল্লাহ’। অতঃপর আয়াত নাজিল হয় : ‘কুলিদউল্লাহা আবিদ-উর রহমান’। এরপর আয়াত নাজিল হয় : ‘ইন্নাহু মিন সুলাইমানা ওয়া ইন্নাহু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। সুতরাং তিনি অনুরূপ লিখতে শুরু করেন।

বর্ণিত আছে যে, আরবে উমাইয়া ইবনে আবি ছালত ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি লিপির শুরুতে ‘তোমার নামে হে আল্লাহ’ (বিসমিকা আল্লাহুম্মা’) লেখা শুরু করেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে কোরেশের জাহেলী যুগের সকল রচনায় এ বাক্য লেখার প্রচলন ঘটে। উমাইয়ার এ বাক্য কীভাবে চালু হয় তা ঐতিহাসিক মাসউদীর বরাতে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হায়াতুল হায়ওয়ানে’ উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়ে থাকে যে, উমাইয়া ছিলেন ‘মাসহুব’ অর্থাৎ তিনি জিন-সাধক ছিলেন। জিন দর্শনের শক্তিও ছিল তার। একবার তিনি কোরেশের কোনো কাফেলার সাথে সফরে বের হন। পথে তিনি একটি সাপকে অগ্রসর হতে দেখেন। কাফেলার লোকেরা তা মেরে ফেলে। এরপর আরও একটি সাপ দেখা গেলো এবং বলতে লাগল আমাকে তার ‘কিসাস’ (শোণিতপণ) ক্ষতিপূরণ দিতে হবে (মানব রূপ ধারণ করে)। একথা বলে কিসাসের দাবিদার জমিনে একটি কাঠি দিয়ে আঘাত করে। ফলে কাফেলার সকল লোক বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং উটগুলোও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লোকেরা উটগুলো একত্রিত করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। যখন তারা উটগুলো একত্রিত করতে সক্ষম হয়, তখন ঐ সাপটি আবার দেখা দেয় এবং জমিনে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ফলে উটগুলো পুনরায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং নানা স্থানে বিছিন্ন হয়ে পড়ে। কাফেলার লোকেরা উটগুলোর সন্ধানে একটি জনমানবহীন ময়দানে পৌঁছে যায়, যেখানে পানির নাম গন্ধও ছিল না এবং তারা ক্লান্তি ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তারা উমাইয়াকে জিজ্ঞাসা করে, এ বিপদ হতে রক্ষার উপায় কী? উমাইয়া জবাবে বলে, দেখছি কোনো উপায় বের হয়ে আসে কি-না। একথা বলে তিনি সেখান হতে যাত্রা করেন এবং একটি টিলা পার হওয়ার পর দূরে একস্থানে আগুন জ্বলতে দেখে এবং সে আগুনের দিকে ধাবিত হয়। আগুনের নিকটবর্তী হলে তাঁবুর ভেতর এক বৃদ্ধকে দেখতে পায়। আসলে সে ছিল এক জিন। উমাইয়া তাকে এ ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ করে। এ বৃদ্ধ বলে, যদি ঐ সাপ আবার উৎপীড়ন করতে আসে তবে সাতবার এই বাক্য উচ্চারণ করবে ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’। একথা শুনে উমাইয়া তার সঙ্গীদের নিকট আসে এবং তাদেরকে বৃদ্ধ জিনের বাতলানো এ পবিত্র বাক্য শুনায়। এরপর তৃতীয়বার যখন জিনেরা কাফেলার লোকদের উপর উৎপীড়ন চালাতে আসে, তখন তারা উক্ত বাক্যটি পাঠ করে। আগত জিন তা শুনে বলে উঠে ‘তোমাদের মন্দ হোক। কে তোমাদের এ বাক্য শিখিয়েছে?’ এ কথা বলে তারা সেখান থেকে সরে যায় এবং কাফেলার লোকেরা প্রাণে রক্ষা পায়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, এ কাফেলায় হজরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদি.-এর দাদা ‘হরব ইবনে উমাইয়া ইবনে আব্দে শামস’ও ছিল। এ ঘটনার পর জিনেরা তাকে ঐ মৃত সাপের কেসাস হিসাবে হত্যা করে। তাই এ প্রসঙ্গে কোনো কবি বলেছেন:

‘অ-কবরু হরবিন বিমাকানি কাফরিন
ওয়া লাইসা কুরবা কবরে হারবিন কবরুন’
অর্থাৎ হরবের কবর একটি জনশূন্য ভীতিকর অবস্থানে অবস্থিত এবং তার কবরের কাছে আর কোনো কবর নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Umer Farooque ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
শুকরিয়া নতুন কিছু জানলাম
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
লেখকের জন্য শুভ কামনা রইলো। সামনে আরও লেখা চাই।
Total Reply(0)
তপন ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তাদের সবাইকে সম্মানিত করুন।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
সুন্দর আর্টিকেল। পড়ে অনেক কিছু জানতে পাারলাম।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা মানব ও জীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন কেবলই তার ইবাদতের জন্য। আল কুরআন
Total Reply(0)
মামুন ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। অনেক কিছু জানা হলো। ভালো লাগলো।
Total Reply(0)
Anwar ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:২০ এএম says : 0
হাদিস নামবার উল্লেখ করলে ভালো হতো ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন