শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কমছে আস্থা বাড়ছে হতাশা

৯৩ ভাগ দুর্নীতির অভিযোগই ফেলে দিচ্ছে দুদক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৩৩ এএম

দুর্নীতি-অভিযোগ ৯৩ শতাংশই ফেলে দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের বেশিরভাগই ‘তফসিলভুক্ত’ না হওয়ায় সেসব আমলে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ কারণে অভিযোগ দায়েরকারীরা হতাশ হচ্ছেন এবং দুদক সম্পর্কে আস্থা হ্রাস পাচ্ছে বলেও স্বীকার করে নেয়া হয়েছে খোদ কমিশনের পক্ষ থেকেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ে ১৫,৪৯৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। মোট অভিযোগের ৮ শতাংশ অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। ৯২ শতাংশ অভিযোগই নথিভুক্ত কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে কমিশনে ১৬ হাজার ৬০৬টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। এ বছরও অন্তত ৮ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। ৯২ শতাংশ অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে কমিশনে অভিযোগ আসে ১৭ হাজার ৯৫৩টি। এর মধ্যে ৯৩৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন। ৫ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ অভিযোগই হয় নথিভুক্ত করা হয়েছে অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। একইভাবে ২০১৬ সালে কমিশনে মোট অভিযোগ আসে ১২,৯৯০টি। তন্মধ্যে ১ হাজার ৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন। এ বছরও ৮ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়।

এ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়, আইনি বাধ্যবাধকতা তথা কমিশনের কার্যপরিধি বা অভিযোগসমূহ কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত না হওয়ার কারণে গড়ে অন্তত ৯৩ শতাংশ অভিযোগই কমিশন অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করতে পারছে না। যাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি এই বিপুল সংখ্যক অভিযোগকারী হয়তো মনে করছেন, তারা কমিশনে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না । স্বাভাবিকভাবেই তারা হতাশ হবেন এবং কমিশন সম্পর্কে তাদের আস্থা হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা সৃষ্ট এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার পক্ষে কমিশন আইনের তফসিল বহির্ভূত কোনো অভিযোগের ওপর কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। কমিশন যেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করছে না এগুলো মূলত কমিশন আইনের তফসিলবহির্ভূত অভিযোগ যেমন-ব্যক্তিগত রেষারেষি, বেসরকারি ব্যক্তিদের ভূমি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তি পর্যায়ের আর্থিক লেন-দেন সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ যেমনÑ যৌতুক-নারী নির্যাতন, অতি তুচ্ছ ঘটনা, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মানুষকে হয়রানি করার জন্য অভিযোগ ইত্যাদি। কমিশন কোন কোন অপরাধ আমলে নিতে পারে তা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকা, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন আকারে এবং কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও প্রচার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, গণমাধ্যমের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে দুদক।

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়া মানুষের হতাশা সম্পর্কে সংস্থাটির সাবেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল বলেন, অভিযোগ করে প্রতিকার না পেলে দুদক সম্পর্কে মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ভুক্তভোগী মানুষ দুর্নীতি বোঝেÑ তফসিল বোঝে না। মানুষ দুর্নীতিমাত্রই দুদকের দ্বারস্থ হয়। দুদকের কাছে প্রতিকার চায়। অথচ তফসিল সংশোধন করে সংস্থাটি অধিকাংশ দুর্নীতির তদন্তের দায়ই পুলিশের মতো মহা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংস্থার কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে। মানুষ যেন দুদকমুখী না হয় সে লক্ষ্যে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কমিশন এই অবস্থা তৈরি করেছে। ফলে দেশের অধিকাংশ মানুষ যে দুর্নীতি দ্বারা সবচেয়ে বেশি নিষ্পেষিত হচ্ছে সেটিরই কোনো প্রতিকার দুদক থেকে পাচ্ছে না। সুতরাং তফসিলের দোহাই দুদক দায় এড়াতে পারে না। দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (২), ২৭ (১)সহ এরকম বেশ কিছু ধারা রয়েছে, যা দিয়ে সকল দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধেই দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন